কুড়িগ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে ১৪ শিশুর মৃত্যু

  © ফাইল ফটো

দেশে চলমান বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ায় কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা এখন বন্যাকবলিত। অসহায় হয়ে আছে এসব এলাকার মানুষগুলো। বন্যা কবলিত এসব এলাকায় অসচেতনতা আর সরকারি কিংবা বেসরকারি সংস্থার কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি না থাকার কারণে এই সময়টাতেই ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে শিশুমৃত্যুর হার।

বন্যায় এ বছর পানিতে ডুবে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু উদ্বেগজনক তথ্য হল এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ১৪ জন। তার মধ্যে কন্যা শিশু ছয়জন ও ছেলে শিশু আটজন। আর গত পাঁচ বছরে কুড়িগ্রাম জেলায় শুধু বন্যার সময় পানিতে ডুবে ৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫৭ জনই শিশু।

কুড়িগ্রাম ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ সূত্রে জান যায়, ২০১৯ সালের বন্যায় জেলায় ২১ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ১৬ জনই ছিল শিশু। ২০১৮ সালে পানিতে ডুবে কোনো মৃত্যুর খবর ছিল না। ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ ৩০ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২০ জন। ২০১৬ সালে আটজনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে শিশু ছিল ছয়জন। ২০১৫ সালে একজনের মৃত্যু হয়। আর সে ছিল শিশু।

কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, গত ২০ জুন থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জনই শিশু। যার মধ্যে ছয়জন কন্যা শিশু ও আটজন ছেলে শিশু।

মৃতরা শিশুরা হচ্ছে- আরাফাত আলী (৭), শান্ত মিয়া (১০), বেলাল হোসেন (৫), মুক্তাসিন (১৪ মাস), কথা রায় (২), জাহিদ (১২), সুচরিতা (২), মাহিন (১৭ মাস), লামিয়া খাতুন (২), কেয়া আক্তার মীম (১০), রাকু (১৫), মুন্নি (১৮ মাস), লাদেন (৭) ও বায়েজিদ (৮)।

মৃত অন্যরা হলেন- জামাল ব্যাপারী (৫৫), সৈয়দ আলী (৭০), আব্দুল আবুয়াল (৪০), নুরুল আমিন (৭০) ও সুরুজ্জামান (৪৩)।

সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, শুধুমাত্র জনসচেতনতার মাধ্যমে এ মৃত্যুর মিছিল থামানো সম্ভব। এজন্য স্বাস্থ্য বিভাগ জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সকল চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ের সকল কর্মী চিকিৎসা সেবা দেয়ার পাশাপাশি শিশুদের বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে শুধু স্বাস্থ্য বিভাগ প্রচার চালালে চলবে না। জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, জনপ্রতিনিধিসহ সকল পক্ষকে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে জনসচেতনতার কাজটি করতে হবে। তা হলে ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।

কুড়িগ্রাম মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদফতরের উপপরিচালক শাহানা আক্তার হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, বহু চেষ্টার পরও সচেতনতা ধরে রাখা যাচ্ছে না। আমাদের সব উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে। বন্যার মধ্যেও মানুষ তার পশু-পাখিসহ সব সম্পদ রক্ষা করতে পারলেও সবচেয়ে বড় সম্পদ প্রিয় সন্তানকে আগলে রাখতে পারছে না। অবহেলা আর খেয়ালিপনার কারণে হয়তো এমনটি ঘটছে। চ্যালেঞ্জ হলো দুরন্তপনা শিশুদের আগলে রাখা। আমরা আমাদের কাজের সঙ্গে শিশু সুরক্ষায় সচেতনতার প্রচার অব্যাহত রেখেছি।


সর্বশেষ সংবাদ