২৭ জুন ২০২০, ১০:৫৫

করোনা হাসপাতালে অর্ধেক আইসিইউ এখনো খালি

  © সংগৃহীত

নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও বেশিরভাগ মানুষ হাসপাতালে যাচ্ছে না। ৯৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ রোগীই চিকিৎসা নিচ্ছেন বাসায় থেকে। অর্থাৎ ঢাকাসহ দেশের সব ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে পর্যাপ্ত বেড এবং নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) খালি আছে। রাজধানীর হাসপাতাল-গুলোতে ৮৩টি ও সারাদেশের কোভিড হাসপাতালে ১৯৬টি আইসিইউ এখনো খালি রয়েছে। খালি থাকা আইসিইউয়ের সংখ্যা কোভিড হাসপাতালগুলোর মোট আইসিইউয়ের প্রায় অর্ধেক। অন্যদিকে ঢাকাসহ সারাদেশের কোভিড হাসপাতালগুলোর সাধারণ বেডেরও তিন ভাগের দুই ভাগই খালি রয়েছে।

এর আগে গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা দেশের নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির সবশেষ তথ্য তুলে ধরে এ কথা বলেন। তথ্যে উঠে আসে, ৪০ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দেশে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬৬১ জন। শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৮৬৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এতে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার ৪৭৪ জন।

করোনায় আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা অধিকাংশ বাসায় নেয়া হচ্ছে। মূলত যাঁদের অবস্থা গুরুতর, তাঁদেরই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের একটা অংশের মৃত্যু হচ্ছে বাসায়। গত ছয় দিনে মোট মৃত্যুর ২৩ শতাংশই হয়েছে বাসায়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, অবস্থা গুরুতর হওয়ার পরও অনেকে হাসপাতালে যাচ্ছেন না।

আইইডিসিআরের অনুমিত হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের মধ্যে আরো ১ হাজার ৬৩৮ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে সুস্থ রোগীর সংখ্যা ৫৩ হাজার ১৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ৮ মার্চ, তার ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। ১৮ জুন দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়ে যায়।

যদিও মোট আক্রান্তের সংখ্যা বিবেচনায় দেশে হাসপাতালের শয্যার সংখ্যা অপ্রতুল। কিন্তু যে সংখ্যক শয্যা আছে, সেগুলোর বেশির ভাগই এখন খালি। গতকালের হিসাবে করোনার জন্য মোট নির্ধারিত শয্যার ৬৭ দশমিক ৪৮ শতাংশই খালি। আর মোট আইসিইউ শয্যার প্রায় অর্ধেক খালি। দেশে করোনার চিকিৎসার জন্য মোট আইসিইউ আছে ৩৭৯টি। এর মধ্যে ১৮৩টিতে রোগী ভর্তি আছেন। বাকি ১৯৬টি খালি আছে।

গতকাল নাসিমা সুলতানা বলেছেন, সব হাসপাতালে রোগীরা সহজে ভর্তি হতে পারবেন। অনেক শয্যা খালি আছে। ভর্তির জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণকক্ষে যোগাযোগ করে সহায়তা নেওয়া যাবে। কোন হাসপাতালের কী অবস্থা, কোথায় ভর্তি হওয়া যাবে—এসব তথ্য এখান থেকে পাওয়া যাবে।

অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ঢাকা মহানগরীতে শুধু করোনার চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতাল আছে ১৬টি। ঢাকা জেলায় আছে একটি। ঢাকা মহানগরীর হাসপাতালগুলোতে করোনার চিকিৎসার জন্য সাধারণ শয্যা ৬ হাজার ৭৭৩টি। আইসিইউ আছে ১৮০টি। এর মধ্যে সাধারণ শয্যায় এখন রোগী ভর্তি আছেন ২ হাজার ৭৭৩ জন; আইসিইউতে আছেন ১৮০ জন।

এদিকে, সারাদেশের সব বিভাগের তথ্য তুলে ধরে অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বুলেটিনে জানান, সব বিভাগ মিলিয়ে কোভিড হাসপাতালগুলোতে সাধারণ বেড রয়েছে ১৪ হাজার ৬১০টি। এসব বেডে ভর্তি আছেন ৪৬৯১ জন। আর সারাদেশের কোভিড হাসপাতালে মোট আইসিইউ রয়েছে ৩৭৯টি। এর মধ্যে ১৮৩টি আইসিইউয়ে কোভিড রোগী ভর্তি রয়েছে। এ হিসেবে সারাদেশের কোভিড হাসপাতালে ৯ হাজার ৯১৯টি বেড এখনো খালি রয়েছে। আর আইসিইউ এখনো খালি রয়েছে ১৯৬টি। অর্থাৎ সারাদেশের কোভিড হাসপাতালের ৬৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ বা দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি সাধারণ বেড খালি রয়েছে। আর আইসিইউ খালি রয়েছে ৫১ দশমিক ৭১ শতাংশ বা অর্ধেকেরও বেশি।