মাছ ও দুধ একসঙ্গে খেলে কি শ্বেতী বা ধবল রোগ হয়?
শ্বেতী বা ধবল রোগ নিয়ে আমাদের সমাজে নানা ধরনের কুসংস্কার প্রচলিত আছে। যা সম্পুর্ণ ভিত্তিহীন। আজকে আমি আপনারদেরকে এই রোগ আসলে কেন হয় সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করবো এবং অবশ্যই সেটি বিজ্ঞান সম্মতভাবে। আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক এই রোগের আদ্যোপান্ত-
শ্বেতী রোগ কি?
শ্বেতী রোগকে ইংরেজীতে লিউকোডারমা বা ভিটিলিগো বলা হয়। লিউকোডারমা নামকরনের পেছনে রয়েছে সুন্দর একটি বৈজ্ঞানিক কারন রয়েছে আর তা হলো লিউকোডারমা শব্দটি ল্যাটিন শব্দ যা দুটি শব্দ সহযোগে তৈরী। এখানে লিউকো অর্থ সাদা এব ডারমা অর্থ ত্বক। অর্থাৎ মেলানিন হরমোনের অভাবে ত্বকের রং সাদা হয়ে গেলে তখন তাকে লিউকোডারমা বলা হয়। আমাদের ত্বকের কালো রং উৎপাদনের জন্য শরীরে যে কোষ রয়েছে তাকে বলা হয় মেলানোসাইট। যদি কোন কারনে এই কোষগুলো মারা যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে দেহের মেলাটোনিন উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায় ফলে দেহের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট সাদা ছোপ তৈরি হয় যাকে আমরা শ্বেতী বা ধবল রোগ বলি।
শ্বেতী রোগের কারনসমুহ
আমাদের দেশে শ্বেতী রোগ সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার প্রচলিত আছে যেমন মাছ ও দুধ একসাথে একই সময়ে খেলে এই রোগ হয়। এছাড়া কুমড়া ও দুধ অথবা পিয়াজ ও দুধে একসাথে খেলে শ্বেতী রোগ হয় বলে প্রচলিত আছে। আসলে এই কথাগুলো সম্পুর্ণ ভুল, এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নাই। গ্রামের মানুষের মুখে আরো কিছু কথা প্রচলিত আছে যেমন এই রোগটি ছোঁয়াচে রোগ বা রক্তদুষণের ফলে এই রোগটি হয়ে। এই কথাগুলোও ভিত্তিহীন কথা। প্রকৃতপক্ষে এই রোগের কারন হলো অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, তীব্র পেটের রোগ, জন্ডিস, পেটে কৃমি বা অন্য পরজীবী, টাইফোয়েড, অতিরিক্ত ক্ষত ইত্যাদি। বংশগতিও এই রোগের একটি কারন। গবেষণায় দেখা গেছে, কমপক্ষে ৩০ ভাগ রোগীর এই রোগটি বংশগত।
শ্বেতী রোগের লক্ষণ সমুহে
শ্বেতী রোগের প্রধান লক্ষণ হলো শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট সাদা ছোপ তৈরি হওয়া ফলে ত্বক আস্তে আস্তে সাদা হতে থাকে। এই ছোপগুলো ধীরে ধীরে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সাদা দাগগুলো সারা শরীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ফলে ব্যক্তির চেহারাই পরিবর্তিত রুপ ধারণ করে।
শ্বেতী রোগ হলে কী ধরনের চিকিৎসা করবেন
শ্বেতী রোগের বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হলো হরমোন জাতীয় ঔষধ সেবন করা, ফটোথেরাপি বা লেজার এবং কসমেটিক সার্জারী। রোগীর ধরন এবং শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী যার জন্য যেটি প্রযোজ্য সেটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাগণ দিয়ে থাকেন। তবে আমাদের দেশে ফটোথেরাপি বা লেজার পদ্ধতিতেই চিকিৎসা বেশি হয়ে থাকে।
শ্বেতী রোগ হলে কি কি খাবেন
এই রোগ হলে প্রচুর পানি পান করুন। পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় রাখার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে যে সকল খাবারে প্রচুর পরিমানে ফাইটোকেমিক্যালস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস রয়েছে। এই উপাদান সমৃদ্ধ কিছু খাবার হলো –কলা, আপেল, খেজুর, দেশীয় ফলমুল যেমন আম, কাঠাল, পেয়ারা, সবুজ শাকসবজি, গাজর ইত্যাদি। সর্বোপরি দেশীয় উদ্ভিজ্জ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন যেটিতে প্রচুর পরিমানে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস রয়েছে।
শ্বেতী রোগ হলে কি খাবেন না
এই রোগ হলে যে সকল খাবার সম্পূর্ণ পরিহার করবেন সেগুলো হলো- অ্যালকোহল, টকজাতীয় ফলমূল যেমন লেবু, কফি, দই, চাটনি, লাল মাংস, টমেটো, গমের আটা দিয়ে তৈরি খাবার।
শ্বেতী রোগটি আসলে সম্পূর্ণরুপে নিরাময় করা সম্ভব নয়। তাই যাদের এই রোগটি আছে তাদের উচিত সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনা চলা। একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা এবং তার নির্দেশ অনুযায়ী চলার চেষ্টা করা। আর একটি কথা যাদের এই রোগটি আছে তাদেরকে বিভিন্নভাবে সামাজিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিজীবনে হেয়প্রতিপন্ন করা হয় শুধুমাত্র তাদের গায়ের রং সাদা বলে যা তাদেরকে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত করে তোলে।
তাই আসুন আমরা এই জঘন্য কাজটিকে না বলি, শ্বেতী রোগীদেরকে সুস্থ্যভাবে বাঁচতে সাহায্য করি। আগামী ২৬ জুন বিশ্ব শ্বেতী রোগ দিবস। এই দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক “শ্বেতী রোগীরা হোক মানসিক দুর্দশামুক্ত” ।
লেখক: শিক্ষার্থী, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
রেফারেন্স:
১. A complete handbook of nature cure written by Shri. H. K Bakhru.
২. https://www.healthline.com/health/how-to-prevent-vitiligo