রেড জোনে গরিবদের খাবার দেবে সরকার
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে এবার জোনভিত্তিক ভাগ করে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় লকডাউন দেয়া হবে। ওইসব এলাকায় ১৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত লকডাউনে রাখা হবে। রেড জোনে বাড়ির বাইরে বের হওয়া কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে। এছাড়া সেখানের অসহায় গরিবের খাবারের ব্যবস্থাও করবে সরকার।
এই সময়ের মধ্যে তিন থেকে চারবার ওই এলাকায় থাকা করোনা আক্রান্ত রোগীদের উন্নতি-অবনতির তথ্য বিশ্লেষণ করা হবে। যদি দেখা যায় অবস্থার উন্নতি হচ্ছে তাহলে লকডাউনের সীমা বাড়ানো হবে না। সংক্রমণ যদি ঊর্ধ্বগামী হয় তাহলে লকডাউনের সীমা বাড়তে পারে। পরীক্ষামূলকভাবে এমন লকডাউন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের কয়েকটি এলাকায় করা হচ্ছে। শহরে এর কার্যকারিতা দেখে দেশব্যাপী প্রয়োগের চিন্তা করবে সরকার।
জোনভিত্তিক লকডাউন এলাকায় যেসব ব্যবস্থা থাকছে:
সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রেড জোনে যদি কোনো বস্তি থাকে তাহলে বস্তিবাসীদের লকডাউন সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা দেবে সরকার। এ ছাড়া লকডাউনের কারণে হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়া সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকদের জন্যও খাবার সংস্থান করা হবে। এই দায়িত্ব পালন করবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। রেড জোনে থাকা বাসিন্দাদের কঠোরভাবে বাড়ির মধ্যে থাকতে বাধ্য করা হবে। অফিস, কলকারখানা একবারে বন্ধ থাকবে। তাদের প্রয়োজনীয় মনিহারি দ্রব্য, ওষুধসহ অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বাসায় বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এর জন্য স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করা হবে প্রতিটি ওয়ার্ডে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে এই কাজ সম্পন্ন হবে।
কোনো যানবাহন চলবে না। তবে রাতের বেলায় পণ্যবাহী যান চলাচল করতে পারবে। এক কথায় রেড জোনে যারা পড়বে তারা ঘর থেকে বের হতে পারবে না। এই এলাকা থেকে বের হয়ে অফিসও করা যাবে না। রেড জোনে থাকার কারণে কোনো চাকরিজীবী ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ এটি সরকারের ঘোষিত সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবে।
ইয়েলো জোনে কলকারখানা, অফিস অর্ধেক জনবল নিয়ে খোলা রাখা যাবে। এই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার লকডাউন কার্যকরের সঙ্গে যুক্ত থাকা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। ইয়েলো জোনে মুদি, ওষুধ ও খাবারের দোকান খোলা থাকবে। খাবারের দোকানে ভিড় জমানো যাবে না। খাবার নিয়ে বাসায় খেতে হবে। এই এলাকায় গণপরিবহন চলবে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে। রিকশা, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে একজন করে চড়তে হবে।
লকডাউন কার্যকর করতে বিস্তারিত প্রস্তাব গত রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা পড়ে। ওই দিন রাতেই প্রধানমন্ত্রী তাতে সম্মতি জানান। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটা অ্যাপ্রিশিয়েট করেছেন।’ প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে তিনি জানান, আইটি ব্যবহার করে সারা পৃথিবীতে জোনিং হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। সংক্রামক ব্যাধি আইন অনুযায়ী বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দায়িত্বপ্রাপ্ত।
এরই মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পূর্ব রাজাবাজার এলাকা আজ মঙ্গলবার রাত থেকে লকডাউনে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কমিশনার ফরিদুর রহমান খান। তিনি বলেন, প্রথম দিকে ১৪ দিনের জন্য লকডাউন হচ্ছে। পরে প্রয়োজন হলে আরো সাত দিন বাড়ানো হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ারী এলাকাও লকডাউন করার কথা। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।