০৪ জুন ২০২০, ১৮:৪৯

মাত্র ৫ দিনেই করোনাজয়ের গল্প

  © সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃতের তালিকা প্রতিনিয়তই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। তবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরাদের সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। আর সেই সুস্থ হয়ে ওঠাদেরই একজন বাংলাদেশের জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার রুহুল আমিন সেকুল।

গাজীপুর জেলার হোতাপাড়ায় অবস্থিত এ্যালিগেন্ট গ্রুপ অব কোম্পানিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত রুহুল আমিন করোনাকে জয় করেছেন মাত্র পাঁচদিনেই। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, তাদের প্রতিষ্ঠান ২৭ মার্চ বন্ধ হলেও ব্যবস্থাপক কর্মকর্তারা অফিস করেন ৭ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর থেকে বাসাতেই সময় কাটে রুহুল আমিনের। বাইরে গেলেও স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা মেনে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে দ্রুত ঘরে ফিরতেন।

সুস্থ থাকায় ঈদের চারদিন আগে ব্যক্তিগত পরিবহনে করে কর্মস্থল গাজীপুর থেকে নিজের বাসা জামালপুরের সরিষাবাড়ী যান রুহুল আমিন। বাসায় আসার পরও নিয়ম মেনে হোম কোয়ারেন্টাইনে চলে যান তিনি এবং কোনো লক্ষণ না থাকা সত্ত্বেও সতর্কতার অংশ হিসেবে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করেন। ঈদের দিন তার করোনা পরীক্ষার ফলাফল পজেটিভ আসে। স্বাভাবিকভাবেই শুরুতে ভড়কে যান তরুণ এই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। তবে ভেঙে না পড়ে ভয়কে জয় করেছেন তিনি। 

মাত্র ৫ দিনে করোনা জয়ের সেই গল্প এভাবেই শুরু করলেন রুহুল আমিন, ঈদের দিন (২৫ মে) রাতেই আমার বাসার সামনে উপজেলা প্রশাসন থেকে অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়। সেদিন রাতেই জামালপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয় আমাকে।

তিনি বলেন, আমার চিকিৎসা শুরু হয় ২৬ তারিখ থেকে। চিকিৎসক যখন জানতে পারলেন আমার কোনোরকম লক্ষণ দেখা যায়নি, সেই মোতাবেক ওষুধ প্রদান করলেন। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে বললেন। আমি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিদিন বেশি পরিমাণে ভিটামিন-সি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে শুরু করলাম।

তিনি বলেন, গরম পানির ভাপ নিতাম। এই গরম পানির ভাপ তৈরিতে যে উপাদানগুলো থাকতো তা হলো- গোলমরিচ, দারচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, আদা, রসুন, কালোজিরা এবং তেজপাতা। এছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে বিন্দুমাত্র ছাড় দেইনি। হাসপাতাল থেকে সরবরাহকৃত খাবারই গ্রহণ করতাম। আমরা যারা করোনায় আক্রান্ত ছিলাম তাদের জন্য মানসম্পন্ন খাবার সরবরাহ করতো কর্তৃপক্ষ।

এভাবে নিয়ম মেনে চলে মাত্র পাঁচদিনেই করোনামুক্ত রুহুল আমিন আরও বলেন, আইসোলেশনে তিনদিন কাটানোর পর প্রাথমিকভাবে ২৮ মে পুনরায় পরীক্ষা করাই এবং আমার ফলাফল নেগেটিভ আসে। ৩১ মে নেগেটিভ ফল পেয়ে ওইদিনই আইসোলেশন কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরি আমি।

তিনি বলেন, আক্রান্ত হলে ভয়ের কিছু নেই। কারণ ভীত হয়ে পড়লে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি। আমাদের চিকিৎসকরা ওষুধের চেয়ে মানসিক শক্তি বেশি যুগিয়েছেন। মানসিক সাহস এবং নিয়মগুলো যথাযথভাবে মেনে চলাতেই আমি করোনা থেকে দ্রুত সুস্থ্যতা অর্জন করতে পেরেছি। আতঙ্কিত না হয়ে সকল করোনা আক্রান্ত রোগীদেরকে সতর্ক এবং সাহসী হওয়ার আহ্বান জানান রুহুল আমিন।

সূত্র: ইউএনবি