পুলিশ হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০২ জুন ২০২০, ০৮:৩০ AM , আপডেট: ০২ জুন ২০২০, ০৮:৪২ AM
রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যরা সাধারণ অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাও নিচ্ছেন। এ জন্য একজন সার্বক্ষণিক চিকিৎসক রোগের উপসর্গ অনুযায়ী পুলিশ সদস্যদের হোমিও ওষুধের ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন।
এতে বেশ ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট হোমিও চিকিৎসকরা। হোমিও ওষুধ সেবনের পর দ্রুততম সময়ে অর্ধশতাধিক করোনা রোগী সেরে উঠেছেন বলে দাবি তাদের।
তবে পুলিশ হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে হোমিও চিকিৎসা শুরু করা হয়নি বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পরিচালক ডিআইজি হাসান-উল হায়দার। সোমবার তিনি বলেন, ‘এটা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়নি। কারণ, হোমিওপ্যাথির মাধ্যমে করোনা থেকে সেরে ওঠার বিষয়টি এখনও পরীক্ষিত নয়।
তবে কোনো পুলিশ সদস্য যদি স্বেচ্ছায় হোমিওপ্যাথি নিতে চায়, সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। আমরা এটাকে উৎসাহিত করছি না, আবার নিষেধও করছি না। তবে আমাদের স্পষ্ট অবস্থান হচ্ছে- কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল একটি অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসার বিশেষায়িত হাসপাতাল। এখানে আনুষ্ঠানিকভাবে হোমিওপ্যাথির চিকিৎসা শুরুর কোনো সুযোগ নেই।’
হোমিও চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা রোগের চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। কিন্তু প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে হোমিওপ্যাথি প্রয়োগ করে করোনা রোগীদের সুস্থ করে তোলা সম্ভব। বিশেষ করে করোনা রোগীদের যেসব উপসর্গ দেখা যায় তার সব কটির সঙ্গেই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মিল রয়েছে। তাছাড়া কয়েকটি হোমিওপ্যাথি ওষুধ সেবনের মাধ্যমে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেমও বৃদ্ধি করা যায়। সবচেয়ে বড় কথা, হোমিওপ্যাথির কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। ফলে চিকিৎসায় সুফল না এলেও ক্ষতির আশঙ্কা শূন্য। হোমিওপ্যাথি ওষুধের মূল্যও সাধারণের হাতের নাগালে।
করোনা চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির প্রয়োগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. দিলীপ রায় সোমবার বলেন, ‘হোমিওপ্যাথির মাধ্যমে করোনা থেকে প্রতিরোধে দেহের সক্ষমতা বড়ানো সম্ভব। এ জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু ওষুধ রয়েছে। তাছাড়া করোনা সংক্রমণের লক্ষণগুলোর মধ্যে জ্বর, সর্দি, শুকনো কাশি, গলাব্যথা এবং শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা হোমিওপ্যাথির মাধ্যমে কার্যকরভাবে বহু বছর ধরেই চলে আসছে।’
হোমিওপ্যাথি বোর্ডের সদস্যরা বলছেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করেই করোনা রোগীদের ওপর হোমিও চিকিৎসা প্রয়োগ করা হচ্ছে। এখন প্রতিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগী এবং বাড়িতে আইসোলেশনে থাকা প্রাথমিক সংক্রমিতদের উপরেও হোমিও ওষুধ প্রয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে হোমিপ্যাথি বোর্ড। তারা বলছে, মার্চের শুরুতে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর ২১ জন অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। তাদের পরামর্শে দেশের ৬৪টি জেলায় হোমিও চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে হোমিও মেডিকেল কলেজগুলোর আউটডোরেও চিকিৎসা মিলছে।
পুলিশ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের হোমিও ওষুধের ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন রাশিদুল হক নামের এক হোমিও চিকিৎসক। তিনি বলেন, তিনি এখন পর্যন্ত পুলিশ হাসপাতালের ৫০ জন করোনা রোগীর ওপর ৭ দিনের একটি হোমিওপ্যাথিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালিয়ে সফল হয়েছেন। ইতোমধ্যে ৪৫ জন রোগী সুস্থ হয়ে কর্মস্থলে ফিরে গেছেন। বাকি ৫ জন পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পথে। এই ৫০ জন রোগীকেই উপসর্গের ভিত্তিতে চিকিৎসা দেয়া হয়। অবশ্য হোমিওপ্যাথির পাশাপাশি তাদের অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসাও চলেছে।
পুলিশ হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাস চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। এ কারণে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সমন্বিত চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। প্রচলিত অ্যালোপ্যাথির সঙ্গে হোমিপ্যাথিক ওষুধ সেবন করছেন আক্রান্তরা। এর সঙ্গে গরম পানির ভাপ ও ঘন ঘন গরম পানি ও চা সেবনেও সুফল মিলছে বলে জানা গেছে। এ কারণে মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা কয়েকটি হোমিও ওষুধ কারোনা প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত সেবন করছেন।
হোমিও চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পেতে আর্সেনিক অ্যালবাম-৩০ নামের একটি হোমিও ওষুধের ব্যবস্থাপত্র দেয়া হচ্ছে। এটি সপ্তাহে ৩ থেকে ৫ দিন দৈনিক ৪/৫ বার সেবন করতে হবে। তবে করোনায় আক্রান্ত হলে চিকিৎসা করা হবে ভিন্নভাবে। সে ক্ষেত্রে উপসর্গের ভিত্তিতে ওষুধ দেয়া হবে। যদি গলাব্যথা হয় তবে ব্রাইনিয়া সেবন করতে হবে ৭ দিন। শ্বাসকষ্ট হলে আর্সেনিক অ্যালবাম-৩০ এবং কারগোভেজ ক্যামফোর। কাশি হলে টিউবার ক্যালিনাম এবং পেটের সমস্যায় জেল সিমিয়াম সেবনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ভালো ফল পেতে জার্মানি থেকে আমদানিকৃত নির্ভরযোগ্য হোমিও ওষুধ সংগ্রহের কথা বলা হচ্ছে।
সূত্র বলছে, ঢাকার ইসকন মন্দিরের ৩৬ জন সেবক মার্চের গোড়ার দিকে কারোনা আক্রান্ত হন। কিন্তু তাদের কেউই হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে মন্দির চত্বরেই আইসোলেশনে চলে যান। ঘরে বসে তারা হোমিও চিকিৎসা নিতে শুরু করেন। এর পাশাপাশি তারা হলুদ, গোলমরিচ, আদা ও মধু সেবনের মতো আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা নিয়ে সবাই পুরোপুরি সুস্থ হয়েছেন-এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই হোমিও চিকিৎসার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। (সূত্র: যুগান্তর)