বাড়িতে ঈদের নামাজ পড়ার সচিত্র নিয়ম (ভিডিও)
বাংলাদেশে আগামীকাল সোমবার মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ উল ফিতর উদযাপিত হবে। ঈদের সকালে নতুন জামা পরিধান করে ঈদগাহে যাওয়া চিরাচরিত নিয়ম। তবে এবার বাঁধ সেধেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। ঈদগাহের মাঠে বিশাল জামাআতে ঈদের নামাজ আদায়ে রয়েছে বিধি-নিষেধ।
অথচ এই ঈদের নামাজ উৎসবের আনন্দকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আর করোনার কারণে যেন আমরা এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়, তাই মসজিদ ছাড়াও বাসা-বাড়িতেও ঈদের নামাজ আদায় করা যাবে। তবে ঈদের নামাজ বছরে দুবার পড়ার কারণে অনেকেই নামাজ পড়ার নিয়ম ভুলে যাই। এবার বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জামাআতে নামাজ আদায়ের নিয়মটা জেনে নিন—
পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যিনি শুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াত করতে পারেন এবং নামাজের প্রাথমিক নিয়মকানুন জানা আছে তিনি ইমামতি করবেন। অবশ্যই পুরুষ সদস্য হতে হবে। আর ইমামের পেছনে যথাক্রমে প্রথম কাতারে পুরুষ সদস্য এবং দ্বিতীয় কাতারে নারী সদস্যরা দাঁড়াবেন। পরিবার নিয়ে জামাআতে ঈদের নামাজসহ যে কোনো ওয়াক্তের নামাজে এ চিত্র অনুযায়ী দাঁড়ানো।
ঈদের নামাজের জন্য কোনো আজান ও ইকামত নেই। তবে জুমআর নামাজের মতোই উচ্চ আওয়াজে কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়। তবে ঈদের নামাজের জন্য পার্থক্য হলো অতিরিক্ত ৬টি তাকবির দিতে হবে। প্রথম রাকাআতে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত বেঁধে অতিরিক্ত তিন তাকবির দিয়ে সুরা ফাতিহা পড়া। দ্বিতীয় রাকাআতে সুরা মিলানোর পর অতিরিক্ত তিন তাকবির দিয়ে রুকতে যাওয়া।
নামাজের নিয়ত: আরবিতে নিয়ত করা জরুরি নয়। বাংলায় বলতে চাইলে বলবেন- ঈদের দুই রাকাআত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সঙ্গে এই ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি...আল্লাহু আকবার। অথবা শুধু অতিরিক্ত ৬ তকবিরে ঈদের নামাজ পড়ার ইচ্ছা পোষণ করে জামাআতে উপস্থিত হলেও যথেষ্ট।
প্রথম রাকাআত আদায় করবেন যেভাবে
ঈদের নামাজে নিয়ত করে তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত বাঁধা। এরপর ছানা পড়া- ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়াতাআলা যাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা। অথবা আপনাদের জানা অন্য ছানা। এবার ঈদের অতিরক্তি ৩ তাকবির দেয়া শুরু করবেন; এক তাকবির থেকে আরেক তাকবিরের মধ্যে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় বিরত থাকা। প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেয়া এবং তৃতীয় তাকবির দিয়ে উভয় হাত বেধেঁ নেয়া।
আউজুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ পড়ে সুরা ফাতেহা পড়া শুরু করবেন। এর সঙ্গে অন্য একটি সুরা মিলাবেন। অবশ্যই ইমামকে উচ্চস্বরে সুরা পড়তে হবে। অতপর নিয়মিত নামাজের মতো রুকু ও সেজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাআত শেষ করা।
দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করবেন যেভাবে
প্রথম রাকাআতের সিজদা থেকে দাঁড়ানোর পর বিসমিল্লাহ পড়ে সুরা ফাতেহা পড়বেন। এর সঙ্গে অন্য একটি সুরা মিলাবেন। এরপর বাকি অতিরিক্ত ৩ তাকবির দিবেন। প্রথম রাকাআতের মতো দুই তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে ছেড়ে দেয়া অতপর তৃতীয় তাকবির দিয়ে হাত বাঁধা। এবার রুকু ও সেজদা আদায় করে তাশাহহুদ, দরূদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করবেন। অর্থাৎ আসসালামু আলাইকুম বলে প্রথমে ডান দিকে পরে বাম দিকে মুখ ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবেন।
স্বাভাবিক সময়ে খোলা মাঠে বা মসজিদের আদায়ের সময় ঈদের নামাজের পর মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে খুতবা দেয়া সুন্নাত। তবে বাড়িতে কম লোকের উপস্থিতিতে নামাজ আদায় করলে চাইলে খুতবা দিতে পারেন। অথবা খুতবা না দিলেও চলবে বলে ইমামগন মত দিয়েছেন।
অতিরিক্ত তাকবিরের ক্ষেত্রে ৬ এর স্থানে অন্যান্য মাজহাবে ১২ তাকবির দেয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রথম রাকাআতে তাকবিরে তাহরিমাসহ ৭ তাকবির আর দ্বিতীয় রাকাআতে সুরা ফাতেহা পড়ার আগে ৫ তাকবিরে দিয়ে থাকেন। এতে কোনো অসুবিধা নেই।