দ্রুত সেরে উঠার উপায় জানালেন করোনাজয়ী বিটিভি ডিজি
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর বাসায় চিকিৎসা নিয়ে স্ত্রী ও কন্যাসহ সুস্থ হলেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মহাপরিচালক হারুন-অর-রশীদ। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন উপসর্গের ওষুধ সেবন করে এবং নিয়মিত রুটিন মাফিক চলার ফলে তিনজনেরই দ্বিতীয় করোনা টেস্ট নেগেটিভ এসেছে।
সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিটিভি মহাপরিচালক নিজেই। একইসঙ্গে করোনা জয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতার গল্প শোনান তিনি। করোনার সময় যে রুটিন নেমে চলেছেন এবং যেসব ওষুধ ও খাবার গ্রহণ করেছেন তাও উল্লেখ করেছেন।
দ্রুত সেরে উঠার উপায় জানিয়ে করোনাজয়ী বিটিভি মহাপরিচালক ফেসবুকে লেখেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে সবার দোয়ায় আমাদের তিনজনের করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ফলোআপ টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। করোনাকে মোকাবেলা করতে আমরা সাহস হারাইনি। বাসায় থেকে ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা নিয়েছি। জ্বর হলে প্যারাসিটামল খেয়েছি। এছাড়া আরও এন্টিবায়োটিক ‘এজিথ্রেমাইসিন’ (৫দিন, দৈনিক ১টা করে) প্রতিদিন ১টি করে ভিটামিন ডি (২০০০ এমজি), দু’বেলা ২টি করে জিঙ্ক ট্যাবলেট (৬০ এমজি করে) এবং পানিতে গুলিয়ে প্রতিদিন ১ টি করে ভিটামিন সি (CavixC) খেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের জ্বর, কাশি এবং খাবারে অরুচি ছিল। সামান্য শ্বাসকষ্ট হলেও হাসপাতালে যেতে হবে। শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা বাসায় সম্ভব না। আল্লাহর রহমতে আমাদের ৩ জনের মধ্যে কারো শ্বাসকষ্ট এবং ডায়রিয়া ছিলো না। আমি আমার ব্লাডসুগার কন্ট্রোলে রেখেছি। ব্যায়াম করেছি। রোদ গায়ে মেখেছি। প্রচুর প্রোটিন খাওয়ার চেষ্টা করেছি। সব সময় গরম পানি খেয়েছি এবং খাচ্ছি। গরম পানি দিয়ে দিনে ৩/৪ বার গড়গড়া করেছি। নানা উপাচার মিশিয়ে নাকেমুখে গরমপানির ভাপ নিয়েছি।
বিটিভি ডিজি বলেন, আমার স্ত্রী নাহীদ সুলতানা নিজের কোভিট-১৯ অসুস্থতাকে উপেক্ষা করে একেবারে একা (আমাদের বাসায় কাজের লোক নেই ২৫ মার্চ থেকে) আমাদের সেবাযত্ন করেছে। এখনো করছে। নানা ধরনের মিশ্রণ, ক্বাথ বানিয়ে আমাদের খাওয়াচ্ছে। লেবুপানি, ফল, ফলের জুস, তুলসীপাতা, আদা, কালোজিরা, মধু,ডিম, মাছ, মাংস ইত্যাদি খাইয়ে সে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যা যা করা সম্ভব করছে। পরিষ্কার রাখছে ঘরবাড়ি। কী কী করেছি, খেয়েছি- এসব বললাম একারণে যে এসব টোটকা অন্যদের কাজে লাগতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের একমাত্র কন্যা নিকিতা নন্দিনী নিজে কোভিট-১৯ রোগী হয়েও বাসার অনেক কাজ করেছে। ঘর জীবানুমুক্ত রেখেছে। দেশে এবং বিদেশে বসবাসকারী আমাদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীরা নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। খাবার ও ঔষধ পাঠিয়েছেন। সাহস জুগিয়েছেন। পরিচিত ও অপরিচিত ডাক্তাররা টেলিফোনে আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষ করে আমার দুই শ্যালক ডা. শাহরিয়ার কবীর তুষার এবং ডা. কাওছার (লিয়ন) বলতে গেলে ঘন্টায় ঘন্টায় আমাদের খবর নিয়েছে। ডা. তুষার বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে আমাদের চিকিৎসার সামগ্রিক দায়িত্ব পালন করেছে। আইইডিসিআর যথাসময়ে অতি নিষ্ঠার সাথে আমাদের কোভিট-১৯ টেস্ট, ১ম ও ২য় ফলোআপ টেস্ট করে আমাদেরকে করোনামুক্ত সনদ দিয়েছে। ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই সবাইকে।
গত ২ মে রাতে হারুন-অর-রশীদ ও তার স্ত্রীর করোনা পরীক্ষায় পজিটিভের বিষয়টি জানায় আইইডিসিআর। পরে তাদের একমাত্র মেয়ের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলও পজেটিভ আসে। এরপর বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে করোনা চিকিৎসা চালিয়ে যান তারা। তবে তাদের শারীরিক কোনো জটিলতা ছিল না। বর্তমানেও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তারা বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।