১৯ মে ২০২০, ১০:৪৫

নিষেধ সত্ত্বেও ক্লোরোকুইন খেয়েছেন ট্রাম্প

করোনা প্রতিরোধে ক্লোরোকুইন খাওয়ার কথা নিজেই জানালেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে ফের আক্রমণ করলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে। তিনি চিকিৎসকদের তোয়াক্কা করেন না। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ধার ধারেন না। এমনকী, দেশের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এফডিএ-র সতর্কবার্তাকেও আমল দেন না। সেটাই করেন, যা তাঁর মনে হয়। আরও একবার তা প্রমাণ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।

সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানিয়ে দিলেন, করোনা প্রতিরোধে নিয়মিত ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন খেয়েছেন তিনি। যদিও এপ্রিল মাসেই এফডিএ জানিয়ে দিয়েছিল, এই ওষুধ অত্যন্ত বিপজ্জনক। হাসপাতাল না দিলে কোনও ভাবেই খাওয়া উচিত নয়। কারণ, এই ওষুধ খেলে হৃৎপিন্ডের স্পন্দনে গোলমাল হতে পারে।

করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পরেই ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন আমদানি করেছিলেন ট্রাম্প। দেশের প্রতিটি হাসপাতালে সেই ওষুধ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে করোনার চিকিৎসায় এই ওষুধ ব্যবহারও করছিল অ্যামেরিকা। কিন্তু তারপরেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন যে, এই ওষুধ ব্যবহার করা বিপজ্জনক। শুধু তাই নয়, এই ওষুধ করোনা প্রতিরোধে আদৌ সাহায্য করছে কি না, তা নিয়েও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দ্বিমত তৈরি হয়েছিল। ট্রাম্পের উপস্থিতিতেই সাংবাদিক বৈঠকে এই ওষুধ ব্যবহার না করার উপদেশ দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। কিন্তু ট্রাম্প যে সে সব কোনও কথাই গুরুত্ব দেননি, তা আরও একবার প্রমাণিত হলো।

এ দিকে সোমবার আরও একবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কড়া সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। ফের সংস্থাটিকে 'চীনের পাপেট' বা পুতুল বলে দাবি করেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, চীনের হয়ে কথা বলতে গিয়ে করোনা মহামারি রোধে কোনও ব্যবস্থাই করতে পারেনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ দিন ফের একবার হিসেব দিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর দাবি, অ্যামেরিকা এই সংস্থাটিকে বছরে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার দেয়। চীন দেয় ৩৮ মিলিয়ন ডলার। তা সত্ত্বেও সংস্থাটি চীনের হয়ে কাজ করছে। এ দিন আরও একবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে আর ফান্ড না দেওয়ার ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

এ দিনই বিশ্ব স্বাস্থ্য অ্যাসেম্বলির বৈঠক বসেছিল। অ্যামেরিকা সেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওপর যথেষ্ট চাপ তৈরি করেছে বলেই সূত্র জানাচ্ছে। বস্তুত, বৈঠকের পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, করোনা মহামারি নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হবে।

করোনা-রাজনীতির এই পরিস্থিতির মধ্যেই সংক্রমণ বেড়ে চলেছে ব্রাজিলে। আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে ব্রাজিল এখন অ্যামেরিকা, রাশিয়া এবং স্পেনের পরেই। রোগীর সংখ্যা দুই লাখ ৫৫ হাজার। এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৬ হাজার ৮৫৩ জনের। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত অ্যামেরিকায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ লাখ ৫০ হাজার। মারা গিয়েছেন প্রায় ৯২ হাজার জন। তবে অর্থনীতিরস্বার্থে ক্রমশ লকডাউন তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যামেরিকার বেশ কিছু রাজ্য। ট্রাম্প প্রশাসন এর মধ্যেই ১১ বিলিয়ন ডলার ঘোষণা করেছে। এই অর্থে লকডাউন ওঠার পরে টেস্টের সংখ্যা বহু গুণ বাড়ানো হবে বলে জানানো হয়েছে।

এ দিকে অ্যামাজনের জঙ্গলে বসবাসকারী জনজাতিগুলির মধ্যে করোনা দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকদের বক্তব্য, গভীর জঙ্গলে পৌঁছে তাঁদের চিকিৎসা করাও সব সময় সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিমানে তুলে শহরে এনে চিকিৎসা করা হচ্ছে। সোমবার থেকেই এ কাজ শুরু হয়েছে।