১৩ মে ২০২০, ২২:২২

ভুয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দেয়া হলো করোনার চিকিৎসা পরামর্শ

  © বুম বাংলাদেশ

বেসরকারি টিভি চ্যানেল ডিবিসি নিউজ গত ১০ মে করোনাভাইরাস নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার ভিত্তিক প্রতিবেদন সম্প্রচার করেছে। তাতে নিউইয়র্ক প্রবাসী এক বাংলাদেশি চিকিৎসকের কভিড-১৯ চিকিৎসায় কিছু তথ্য ও পরামর্শ দিয়েছেন। তবে তার সেই চিকিৎসা পরামর্শ ভুয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে একটি সংস্থা।

ওই নিউজে চিকিৎসকের করা দাবি ও পরামর্শের সত্যমিথ্যা যাচাই করেছে ভুয়া তথ্য নিয়ে অনুসন্ধানকারী অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম বুম বাংলাদেশ (Boom Bangladesh)। সেখানে ওই অনুষ্ঠানের দাবি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে তথ্যের ফ্যাক্ট চেক করা হয়েছে।

সে মোতাবেক অনুষ্ঠানে এক নম্বর দাবি ছিল, ‘যুক্তরাষ্ট্রের করোনা চিকিৎসায় স্কাবোসিক্স নামে একটি ওষুধ ব্যবহার করে সাফল্য এসেছে। ডেল্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের এই ওষুধটি ১৮ বছরের বেশিদের দেয়া হচ্ছে। আর চিকিৎসকদের দাবি এই ওষুধের এখন পর্যন্ত কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি, ৯৫ শতাংশ রোগী এই ওষুধে সেরে উঠছেন।’

এর ফ্যাক্ট চেকে বলা হয়েছে, প্রথমত সংবাদটি শুরু করা হয়েছে একটি ওষুধ (ivermectin) এর বানিজ্যিক নাম (স্কাবোসিক্স) ব্যবহার করে। একইসাথে এটির উৎপাদনকারী কোম্পানির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এটি কোনো রোগের ওষুধ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের আদর্শ নীতি নয়। প্রকৃতপক্ষে একটি ওষুধের জেনেরিক বা বৈজ্ঞানিক নাম দিয়েই সেটিকে চেনা হয়ে থাকে। সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে জেনেরিক বা বৈজ্ঞানিক নাম ব্যবহার না করে কোনো ওষুধের বানিজ্যিক নাম (একেক কোম্পানি একেক নাম দিয়ে থাকে) ব্যবহার করলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অযাচিত ক্ষতি বা লাভের সম্ভাবনা থাকে।

দ্বিতীয়ত, স্কাবোসিক্স নামে বাংলাদেশি কোম্পানির উৎপাদিত ওষুধটি যুক্তরাষ্ট্রের মার্কেটে পাওয়া একমাত্র ivermectin (জেনেরিক নাম) ওষুধ নয়। যুক্তরাষ্ট্রের এবং এর বাইরের আরও বহু কোম্পানি ivermectin ওষুধটি উৎপাদন করে বিভিন্ন নামে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাজারজাত করে থাকে। এমনকি বাংলাদেশের অন্য বেশ কয়েকটি কোম্পানিও এই ওষুধটি নিজেদের দেয়া নামে উৎপাদন করে থাকে। ফলে, ওষুধের জেনেরিক নাম না বলে বাংলাদেশি একটি বিশেষ কোম্পানির উৎপাদিত বানিজ্যিক নাম উল্লেখ করে- "যুক্তরাষ্ট্রের করোনা চিকিৎসায় স্কাবোসিক্স নামে একটি ঔষধ ব্যবহার করে সাফল্য এসেছে’ দাবি করা বাস্তবতার অতিরঞ্জন।

তৃতীয়ত, ‘যুক্তরাষ্ট্রের করোনা চিকিৎসায় স্কাবোসিক্স (ivermectin) নামে একটি ঔষধ ব্যবহার করে সাফল্য এসেছে। এই ওষুধটি ১৮ বছরের বেশিদের দেয়া হচ্ছে।’- এই তথ্যটিই সত্য নয়। এমন কোনো খবর যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায় না। এবং দেশটির ওষুধ বিষয়ক কোনো কর্তৃপক্ষীয় প্রতিষ্ঠান থেকেও এমন তথ্য জানানো হয়নি। বরং যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ বিষয়ক নীতিনির্ধারণী সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ Food and Drug Administration (FDA) অতি সম্প্রতি কভিড-১৯ এর চিকিৎসায় ivermectin ব্যবহার না করতে সতর্কতা জারি করেছে।

অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনির্ভাসির্টির একটি গবেষণার ফলাফল উল্লেখ করে সতর্কতা বার্তায় এফডিএ জানিয়েছে, প্রাথমিক ল্যাবরেটোরি পরীক্ষায় ((in vitro) গবেষকরা কভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে ivermectin প্রয়োগ করে ভালো ফলাফল পেয়েছেন। কিন্তু এই পরীক্ষাটি কোনো প্রাণি বা মানুষের ওপর চালানো হয়নি। আসলেই কভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে ivermectin ইতিবাচক ফলাফল দেয়া কিনা তা জানতে আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা (ক্লিনিকাল ট্রায়াল) প্রয়োজন।

আরও জানানো হয়, ivermectin যুক্তরাষ্ট্রে FDA কর্তৃক অনুমোদিত একটি ওষুধ; কিন্তু সেই অনুমোদন কভিড-১৯ এর চিকিৎসার জন্য নয়। গত ১০ এপ্রিল জারি করা সতর্ক বার্তাটি দেখুন এখানে। এরপর গত ১ মে কভিড-১৯ এর চিকিৎসায় ivermectin ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নতুন করে আরও কিছু নির্দেশনা প্রকাশ করে FDA। দেখুন এই লিংকে। ডিবিসি নিউজের প্রতিবেদনে- ‘আর চিকিৎসকদের দাবি এই ওষুধের এখন পর্যন্ত কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি, ৯৫ শতাংশ রোগী এই ওষুধে সেরে উঠছেন।’ বলে যে তথ্যটি দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুয়া।

উপরে দেয়া প্রমাণগুলো থেকে স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্রে কভিড-১৯ আক্রান্তদের ওপর ivermectin প্রয়োগের কোনো পরীক্ষা এখনও পর্যন্ত হয়নি। তবে আগামী জুন মাসে একটি পরীক্ষা শুরু হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আর অস্ট্রেলিয়ায় যে পরীক্ষা চালানো হয়েছে তা কোনো প্রাণি বা মানুষদের ওপর নয়। ফলে ৯৫ শতাংশ রোগীর সেরে ওঠার প্রশ্নও নেই। অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির গবেষণাটি পড়ুন এখানে

সেখানে বলা হয়েছে, সেল কালচারে (প্রাণি বা মানুষের শরীরে নয়) বর্ধমান SARS-CoV-2 ভাইরাসের ওপর ivermectin প্রয়োগের পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভাইরাসের বৃদ্ধি ৯৯ দশমিক ৮ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। এ বিষয়ে বুম বাংলাদেশ কথা বলেছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দুইজন চিকিৎসা বিশষজ্ঞের সাথে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো রিজিওনাল মেডিকেল সেন্টারে কর্মরত এবং ট্রেনিং প্রোগ্রামের পরিচালক ডাক্তার রুমি আহমেদ খান জানিয়েছেন, বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে যেমনটি দাবি করা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্তদের ওপর ইভারমেক্টিন ব্যবহার করা হচ্ছে এবং ভালো ফল পাওয়া গেছে তা সম্পূর্ণ অসত্য।

তিনি বলেন, এখানে উল্টোটা ঘটেছে। অস্ট্রেলিয়ার একটি ইউনিভার্সিটিতে সেল কালচার পরীক্ষায় কভিড-১৯ এর ওপর এই ওষুধটির ভালো ফল পাওয়ার পর খবর প্রকাশিত হওয়ায় সাধারণ মানুষের অনেকর মধ্যে এটি নিয়ে আগ্রহ জাগে। সেই আগ্রহের ব্যাপারে এফডিএ সতর্কতা জারি করেছে। ফলে কভিড-১৯ আক্রান্তদের ওপর ইভারমেক্টিন প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ ফার্মাকোলোজিক্যাল সোসাইটির সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ফার্মাকোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান সায়েদুর রহমান খসরু বলেছেন, ইভারমেক্টিন ভিন্ন রোগের জন্য কার্যকর একটি ওষুধ। কিন্তু কভিড-১৯ এর জন্য এটি ব্যবহার করতে হলে এখনও বহু পর্যায়ের পরীক্ষা নিরীক্ষা পার হয়ে আসতে হবে এটিকে। কোনো ওষুধ নতুন কোনো রোগের চিকিৎসায় ব্যবহারের আগে থাকে প্রথমে সেল কালচার, পরে প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল (প্রাণির ওপর) এবং এরপর তিনটি পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে আসতে হয়। ইভারমেক্টিন নিয়ে মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে একদম প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষা (সেল কালচার টেস্ট) করা হয়েছে। ফলে এখনই ওই ওষুধ কভিড-১৯ এর চিকিৎসায় ব্যবহারের প্রশ্নই আসে না।

ওই নিউজের দ্বিতীয় দাবিতে বলা হয়েছে, ডিবিসির সংবাদ উপস্থাপক একপর্যায়ে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে যুক্ত হচ্ছেন বাংলাদেশী চিকিৎসক ডা. মাসুদ। ডা. মাসুদ আপনাকে স্বাগত। আপনার কাছে জানতে চাই যে নতুন এই ওষুধ ব্যবহারে কেমন সাফল্য পাচ্ছেন আপনারা?’

উপস্থাপক কর্তৃক ডা. মাসুদকে যেভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে তাতে স্পষ্ট যে, তিনি বুঝাতে চেয়েছেন ডা. মাসুদ যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা পেশায় আছেন এবং বিশেষভাবে তিনি কভিড-১৯ চিকিৎসার সাথে সংশ্লিষ্ট। উপস্থাপকের ব্যবহার করা ‘নতুন এই ওষুধ ব্যবহারে কেমন সাফল্য পাচ্ছেন আপনারা?’ বাক্যটি থেকে এই ধারণা পাওয়া যায়।

এর ফ্যাক্ট চেকে বুম বাংলাদেশ-এর অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ডা. মাসুদ যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা পেশায় যুক্ত নন। যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসক হিসেবে তার কোনো লাইসেন্স নেই। যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরতদের সরকারি ডাটাবেজ রয়েছে। অনলাইনে সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যে কেউ যে কোনো চিকিৎসকের লাইসেন্স সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পেতে পারেন। ডা. মাসুদের পূর্ণ নাম Masudul Hassan; তিনি নিউইয়র্কে বসবাস করেন বলে ডিবিসির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

নিউইয়র্ক স্টেট এজুকেশন ডিপার্টমেন্ট-এর ওয়েবসাইটে থাকা নিউইয়র্কের চিকিৎসকদের ডাটাবেজে Masudul Hassan এবং Masudul Hasan- এই দুই বানানে সার্চ করে একজন চিকিৎসকের নাম পাওয়া গেছে। তার পুরো নাম Md Masudul Hasan এবং তার লাইসেন্স নম্বর হলো- ২৪৯০০২। তিনি বাংলাদেশের Sir Salimullah Medical College পড়াশোনা করেছেন। ডিবিসি নিউজকে সাক্ষাৎকার দেয়া ডা. মাসুদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। তার ফেসবুক প্রোফাইলে এই তথ্য উল্লেখ করা আছে।

নিউইয়র্ক স্টেটের ডাটাবেজে না পেয়েছে Masudul Hassan (ডাবল এস দিয়ে) এবং Masudul Hasan নাম দুটি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ডাটাবেজে (Federation of State Medical Boards এর ওয়েবসাইটে) সার্চ করা হয়েছে। সেখানেও একজন ‘মাসুদুল হাসান’ চিকিৎসকের নাম পাওয়া যায়; যার কথা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। বুম বাংলাদেশ নিউইয়র্কে বসবাসরত দুইজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত সাংবাদিক, যারা ডা. মাসুদকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন, তাদের সাথে কথা বলেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা উভয়ে জানিয়েছেন যে, ডা. মাসুদ যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা পেশায় জড়িত নন।

মাসুদুল হাসানের ফেসবুক প্রোফাইলে উল্লেখ রয়েছে তিনি Metropolitan Learning Institute নামক নিউইয়র্ক ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের Medical Program Director. Metropolitan Learning Institute নামক প্রতিষ্ঠানটি কী ধরনের প্রতিষ্ঠান তা যাচাই করে দেখতে গিয়ে জানা গেছে, এটি একধরনের ট্রেনিং সেন্টার। মেডিকেল পেশা সংক্রান্ত কিছু সহযোগী পেশার বিষয়ে ট্রেনিং কোর্স করিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। প্রধান প্রধান কয়েকটি ট্রেনিং প্রগ্রাম হলো- মেডিকেল ইন্সুরেন্স বিল এবং ক্লেইম বিষয়ে প্রশিক্ষণ, মেডিকেল সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানে একাউন্টিং টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ, লাইব্রেরি ব্যবস্থাপনা এবং মেডিকেল সেক্রেটারিদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি। এ সংক্রান্ত তথ্য দেখুন এখানে এবং এখানে

তিন নম্বর দাবিতে ডা. মাসুদ বলেছেন, ‘মনে করেন যে কারো করোনা উপসর্গ দেখা দিয়েছে, কিন্তু টেস্ট করা হয়নি। বা ডাক্তাররা মনে করে এই রোগীর করোনা হতে পারে। তখন ফার্স্ট উইকে যদি এই ওষুধটি দেওয়া যায়, তাহলে ৯৮ শতাংশ কিউর (সুস্থ্যতা) আসবে উইদিন ৪৮ আওয়ার্স (৪৮ ঘন্টার মধ্যে)।’

এর ফ্যাক্ট চেকে দেখানো দেখানো হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কর্তৃপক্ষ থেকে কভিড-১৯ চিকিৎসায় ivermectin ব্যবহারের কোনো অনুমোদন দেয়া হয়নি, বরং নিষেধ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকেও কভিড-১৯ পজিটিভি রোগীদের ওপর এই ওষুধ প্রয়োগের কোনো নির্দেশনা নেই। টেস্টে প্রমাণিত কভিড-১৯ পজিটিভ হওয়া ব্যক্তিদের ওপর ivermectin প্রয়োগের নির্দেশনা যেমন নেই, তেমনি টেস্টের আগেই কারো ওপর শুধু কভিড-১৯ এর উপসর্গ থাকার কারণেও ivermectin ব্যবহারের কোনো নির্দেশনা নেই।

কভিড-১৯ এর উপসর্গ থাকা, বা টেস্টে পজিটিভ আসা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষেরই সুস্থ্য হয়ে উঠতে কোনো ধরনের ওষুধ (মেডিকেশন) এর প্রয়োজন পড়ে না বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে। ফলে, শুধু উপসর্গ দেখা দেয়ার পরেই ivermectin গ্রহণ করলে এই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী অযাচিতভাবে ivermectin এর গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভুক্তভোগী হতে পারেন। ivermectin পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে FDA জানিয়েছে, ‘Some of the side-effects that may be associated with ivermectin include skin rash, nausea, vomiting, diarrhea, stomach pain, facial or limb swelling, neurologic adverse events (dizziness, seizures, confusion), sudden drop in blood pressure, severe skin rash potentially requiring hospitalization and liver injury (hepatitis). Laboratory test abnormalities include decrease in white cell count and elevated liver tests.’

চার নম্বর দাবি অনুযায়ী, ডা. মাসুদ বলেছেন, ‘আমেরিকাতেও শুরু করা হয়েছে। আমি বলতে চাচ্ছি বাংলাদেশে যদি এটা শুরু করা হয় এবং বাংলাদেশে যে গার্মেন্টস কর্মী যাওয়া আসা করছে। এদের যদি উপসর্গ থাকে এই ওষুধ দেওয়া হয় আমার মনে হয় আমাদের দেশ ইনশাল্লাহ করোনার বিরাট আক্রমন থেকে ইনশাল্লাহ মুক্তি পাবে।’

এ দাবির ফ্যাক্ট চেক করে বলা হয়েছে, উপরেই দেখানো হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে (আমেরিকা) ivermectin এর ব্যবহার শুরু হয়নি। কভিড-১৯ রোগীদের ওপর এই ওষুধ ব্যবহারে বিষয়ে FDA এর সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ‘Any use of ivermectin for the prevention or treatment of COVID-19 should be avoided as its benefits and safety for these purposes have not been established. Data from clinical trials are necessary for us to determine whether ivermectin is safe and effective in treating or preventing COVID-19.’

পাঁচ নম্বর দাবি অনুযায়ী, ডা. মাসুদ বলেছেন, ‘এটা (ivermectin) অস্ট্রেলিয়াতে অলরেডি FDA এপ্রুভ করেছে।’ এর ফ্যাক্ট চেকে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ায় ওষুধ বিষয়ক সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নাম FDA নয়। দেশটির ওষুধ বিষয়ক সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সরকারি সংস্থার নাম হচ্ছে Therapeutic Goods Administration; এই সংস্থা কভিড-১৯ চিকিৎসায় ivermectin এর ব্যবহারের অনুমোদন দেয়নি। তবে অস্ট্রেলিয়াতে (এবং যুক্তরাষ্ট্রেও) ivermectin প্রাণিদের মধ্যে এবং কিছু ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যেও প্যারাসাইটের চিকিৎসায় অনুমোদিত একটি ওষুধ।

ছয় নম্বর দাবি অনুযায়ী, ডাক্তার মাসুদ আরো বলেছেন, ‘এছাড়াও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যকর্মী এবং আমার ডাক্তার ভাইদের বলতে চাই, এই ওষুধটি অতিশীঘ্রই আপনারা ব্যবহার শুরু করুন।’ এর ফ্যাক্ট চেক করে বলা হয়েছে, আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কর্তৃপক্ষ কভিড-১৯ আক্রান্তদের ওপর ivermectin ব্যবহার করতে নিষেধ করেছে। কারণ কোনো গবেষণায় এখনও মানুষের ওপর এটির কার্যকরতা প্রমাণিত নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এটির ব্যবহারে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। ফলে ডা. মাসুদের এই চিকিৎসা পরামর্শটি ভুল।

সবশেষে বুম বাংলাদেশ জানিয়েছে, ডিবিসি নিউজের আলোচ্য সংবাদে একাধিক ভুয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করে ivermectin নামক জেনেরিক ওষুধটিকে (বাংলাদেশি কোম্পানির উৎপাদিত স্কাবোসিক্স নামক বানিজ্যিক নাম ব্যবহার করে) কভিড-১৯ এর চিকিৎসায় কার্যকর হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।