বাতাসেও ছড়াতে পারে করোনাভাইরাস: চীনের গবেষণা
করোনা আক্রান্তের হাঁচি, কাশির মাধ্যমে বের হওয়া জলীয় কণার মাধ্যমে কোভিড-১৯ ছড়ায় বলে এতদিন মনে করা হলেও ভাইরাসটির বাতাসে ভেসে থাকার ক্ষমতা নিয়ে এখন নতুন প্রমাণ সামনে এসেছে। গবেষকরা বলছেন, ভাইরাসটি বাতাসের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের হাঁচি-কাশির সময় নাক ও মুখ দিয়ে জলীয় কণা (ড্রপলেট) বাতাসে বেরিয়ে আসে। কোনো ভাইরাস বায়ুবাহিত হলে তাকে ‘অ্যারোসল’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এর অর্থ হলো, ভাইরাসটি বাতাসের সঙ্গে ভেসে বেড়াতে পারে।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানায়, চীনের উহান শহরের দুটি হাসপাতালের বাতাস পরীক্ষা করে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সরঞ্জাম কিংবা রোগীর ব্যবহার করা টয়লেটগুলোর বাতাসে সার্স-কোভ-২ দীর্ঘসময় ভেসে থাকতে পারে। এমনকি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) বাতাসেও করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
উহান বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা উহানের দুটি হাসপাতালের ৩০ জায়গার বাতাসে সার্স-কোভ-২ এর আরএনএ’র ঘনত্ব পরিমাপ করেন।
গবেষকরা বলেন, খোলা জায়গা ও যেসব ঘরে বায়ু চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে সেখানে ভাইরাসটির অস্তিত্ব কম। অন্যদিকে, পিপিইর যথাযথ ব্যবহার ও অপসারণ, টয়লেটসহ রোগীদের ব্যবহার করা জায়গাগুলো নিয়মিত জীবাণুমুক্ত রাখলে বাতাসে ভাইরাসটির ঘনত্ব কম দেখা যায়।
আরএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে কেবল বাতাসে ভেসে থাকা ভাইরাসের ড্রপলেটের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়। তাই এর মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটতে পারে কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন গবেষকরা। তারা জানান, কোভিড-১৯ বাতাসে ভেসে কতটুকু সংক্রমণ ঘটাতে পারে তা জানতে আরও উচ্চতর গবেষণা প্রয়োজন।
গবেষণা বলছে, জীবাণুমুক্ত করার পর সেসব কক্ষের বাতাসে আর ভাইরাসটির আরএনএ পাওয়া যায়নি। হাসপাতালে করোনা রোগীদের ব্যবহার করা টয়লেটের বাতাসেও ভাইরাসটির আরএনএ পাওয়া গেছে। তবে, যেসব টয়লেটে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা আছে সেখানকার বাতাসে এটা তুলনামূলক কম ছিল। গবেষকদের ধারণা, আক্রান্তদের শ্বাস-প্রশ্বাস অথবা মলমূত্র থেকেও ভাইরাসটি বাতাসে ছড়িয়ে থাকতে পারে।
গবেষণায়, ভিড় ও জনসমাগম এড়িয়ে চলাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। খোলা জায়গার বাতাসে করোনাভাইরাসের ঘনত্ব কম হলেও হাসপাতালের গেট ও ভিড় জমে থাকে এমন জায়গাগুলোতে ভাইরাসটির ড্রপলেটের ঘনত্ব বেশি বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) অবশ্য বাতাসে ছড়িয়ে থাকা ড্রপলেটের মাধ্যমে ভাইরাসটি সংক্রমিত হতে পারে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত করেনি। সংস্থাটি আক্রান্তদের শারীরিক ঘনিষ্ঠতা ও সংস্পর্শের মাধ্যমে সংক্রমণকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। আক্রান্তের হাঁচি-কাশি ও সংস্পর্শের মাধ্যমে সরাসরি ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের বড় আকারের ড্রপলেটগুলোকেই সংক্রমণের জন্য দায়ী বলে মনে করছে ডাব্লিউএইচও।
চীনের গবেষণা প্রতিবেদন সম্পর্কে ডাব্লিউএইচও বলছে, কয়েকটি হাসপাতালের চিত্র এমনটা হতে পারে। চিকিৎসা ব্যবস্থার দুর্বলতা ও কয়েকটি পদ্ধতিগত ভুলের জন্য সেখানকার বাতাসে অ্যারোসল সংক্রমণ তৈরি হতে পারে।
তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে সব হাসপাতালেই কমবেশি অ্যারোসল তৈরি হতে পারে। তাই সবখানেই পিপিই ও প্রয়োজনীয় প্রটোকল মেনে চলা জরুরি।