সার্জিক্যাল মাস্ক নাকি এন-৯৫?
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য ‘এন-৯৫ মাস্ক’ লেখা প্যাকেটে সাধারণ মাস্ক সরবরাহের ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনা চলছে। এন-৯৫ রেসপিরেটর ও সার্জিক্যাল মাস্ক দুটোই সংক্রামক রোগ থেকে বাঁচতে ব্যবহৃত পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট বা পিপিইর জরুরি অংশ। নাক-চোখ ও মুখের মাধ্যমে রোগজীবাণুর সংক্রমণ থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করা হয়।
কোন মাস্ক কখন ব্যবহার করতে হবে, এন-৯৫ রেসপিরেটর ও সাধারণ মাস্কের পার্থক্য কী- এসব বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) ওয়েবসাইটে।
সার্জিকাল মাস্ক : সার্জিকাল মাস্ক একবার ব্যবহারযোগ্য। একটু ঢিলেঢালা এই মাস্ক নাক ও মুখকে ঢেকে রাখে এবং ব্যক্তি যে পরিবেশে আছেন সেখান থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হয়। সাধারণত মেডিকেল ইকুইপমেন্ট হিসেবেই সার্জিকাল মাস্ক ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের মাস্ককে কখনো কখনো ফেইস মাস্কও বলা হয়। তবে বাজারে যেসব ফেইস মাস্ক পাওয়া যায় তার সবই সার্জিক্যাল মাস্ক নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন বলছে, সার্জিক্যাল মাস্কের ওপর মেডিকেল কাজে ব্যবহারের নির্দেশনা লিখে দিতে হবে। সার্জিকাল মাস্কের পুরুত্ব বিভিন্ন রকমের হতে পারে। মাস্ক নাক-মুখে রোগজীবাণুর প্রবেশ কতটা ঠেকাতে পারবে, মাস্ক পরা অবস্থায় কতটা সহজে শ্বাস-প্রশ্বাস চালানো যাবে, তা ওই পুরুত্বের ওপরই নির্ভর করবে।
মানুষ যখন হাঁচি-কাশি দেয়, তখন নাক-মুখ থেকে যে অতিক্ষুদ্র তরল ছিটকে আসে তাকে বলা হয় ‘ড্রপলেট’। সার্জিক্যাল মাস্ক বড় আকারের ড্রপলেট থেকে সুরক্ষা দিতে পারলেও বাতাসে ভাসমান অতিক্ষুদ্র কণা আটকাতে পারে না। তাছাড়া ঢিলেঢালা হয় বলে জীবাণুর হাত থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা দিতে পারে না এই মাস্ক।
এন-৯৫ রেসপিরেটর : বাতাসে ভাসমান শূন্য দশমিক তিন মাইক্রন ব্যাসের বস্তুকণাকেও ঠেকিয়ে দিতে পারে এন-৯৫ রেসপিরেটর। সিডিসি বলছে এই রেসপিরেটর বাতাসে ভাসমান ৯৫ শতাংশ বস্তুকণা থেকে শ্বাসতন্ত্রকে সুরক্ষা দিতে পারে।
এর নকশা এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে তা নাকের পাশে ও মুখের ত্বকে চেপে বসে থাকে এবং কোনো ফাঁক দিয়ে বাতাসবাহিত অণুজীব নাকে বা মুখে যেতে না পারে। অবশ্য তারপরও এই রেসপিরেটর সংক্রমণ থেকে বাঁচার শতভাগ নিশ্চয়তা দেবে না।
সিডিসি বলছে, সাধারণ নাগরিকদের এই এন-৯৫ রেসপিরেটর ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে না। এমনকি করোনাভাইরাসের এই মহামারির মধ্যেও না। বরং জরুরি সময়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের সরবরাহ নিশ্চিত করতে সংরক্ষণ করতে বলছে।
যারা ফুসফুস, হৃদযন্ত্র ও অন্যান্য স্বাস্থ্য জটিলতার কারণে আগে থেকেই শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, তাদের এন-৯৫ রেসপিরেটর ব্যবহারের আগে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে বলেছে এফডিএ। কারণ নাক ও মুখের ওপর আঁটোসাঁটো হয়ে আটকানো থাকে বলে এ ধরনের রোগী আরও বেশি শ্বাসকষ্টে ভুগতে পারেন।
শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সুবিধার জন্য এন-৯৫ রেসপিরেটরের কোনো কোনো মডেলে ছিদ্রযুক্ত একটি পাস্টিকের ঢাকনা বসানো থাকে। তবে যেখানে সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি, সেখানে এই ছিদ্রযুক্ত এন-৯৫ রেসপিরেটর ব্যবহার করা যাবে না।
এফডিএ পরীক্ষিত সব এন-৯৫ রেসপিরেটরে 'একবার ব্যবহার উপযোগী' লেখা রয়েছে। যদি এই রেসপিরেটর কোনো কারণে ময়লা হয়ে যায় বা এটা পরে থাকার সময় শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে তা বদলে ফেলতে হবে।
একবার ব্যবহার করা মাস্ক বা রেসপিরেটর পলিথিনের ব্যাগে ভরে ময়লার ঝুড়িতে ফেলতে হবে। এরপর ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে। এন-৯৫ রেসপিরটর শিশুদের উপযোগী নয়। যাদের মুখে দাড়ি বা বেশি লোম থাকে, তাদের জন্যও এই রেসপিরটরে সুরক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
নির্মাণ কাজের পরিবেশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকার বাতাসে ধুলা আর ভাসমান বস্তুকণা বেশি থাকে। ফলে সেসব এলাকার মানুষের শ্বাসতন্ত্রের রোগের ঝুঁকিও বেশি। কিছু কোম্পানি এ ধরনের পেশায় থাকা কর্মীদের জন্যই এন-৯৫ রেসপিরেটর বানায়।
যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের মাস্ক বা রেসপিরেটরের মান ও ব্যবহারবিধি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ন্যাশনাল পারসোনাল প্রোটেকটিভ টেকনোলজি ল্যাবরেটরি (এনপিপিটিএল)। রোগী ও চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী- সবার জন্য ব্যবহারবিধি ঠিক করে দেয় এফডিএ। বিডি নিউজ