২৫ এপ্রিল ২০২০, ০৯:৩২

বাংলাদেশেও রূপ বদলে জটিল হচ্ছে করোনা

কোভিড-১৯ তাণ্ডবে পুরো বিশ্ব কাপছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে না কোনও উপসর্গ। এছাড়া শুধু হাঁচি-কাশি ছাড়াও এমন কিছু উপসর্গ সামনে আসছে যা আগে দেখা যায়নি। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, আক্রান্ত কয়েকজনের শরীরে জ্বর কিংবা কাশির আগে দেখা গিয়েছে পায়ের পাতায় বেগুনি দাগ। চিকেন পক্স কিংবা হামে যেরকম দেখা যায় অনেকটা সেরকম। স্পেনে এরকম রোগী দেখা গিয়েছে। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দুই লাখের কাছাকাছি।

বাংলাদেশেও অনেক ক্ষেত্রে জটিল আকার ধারণ করেছে করোনা। মার্চেই আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ৭শ বার স্টেন পরিবর্তন হয়েছে প্রোটিনে। উপসর্গ না থাকলেও আক্রান্ত হয়েছে অনেকে। আবার দ্বিতীয়বার আক্রান্তের ঘটনাও রয়েছে।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস স্টেন অর্থাৎ রূপ পাল্টে জটিল হচ্ছে। আমরা ৩০ মার্চ পর্যন্ত একটা পর্যালোচনা করে দেখেছি ভাইরাসের এক হাজার ৪০২টি নিউট্রেশন হয়েছে। প্রোটিনে ৭শ বার অ্যামিনো অ্যাসিড পরিবর্তন হয়েছে। ভাইরাসের ক্লেড, গুচ্ছ বিভাজন অনুযায়ী অনেক ভাগ হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, তাই শুধু যে ভ্যাকসিন বানালেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাচ্ছে তা নয়। স্টেন পাল্টালে এই আরএনএ ভাইরাস আরও শক্তিশালী হয়। এতে করে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে ভাইরাসের কার্যকারিতা দীর্ঘ ও শক্তিশালী হবে।

গত বুধবার সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তবে তার শরীরে কোনো লক্ষণই ছিল না। গাজীপুর থেকে সিলেট আসার কারণে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তার নমুনা পরীক্ষা করিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতেই করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে। সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে কর্মরত স্টোরকিপার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু সর্দি, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টের কোনো উপসর্গই ছিল না তার।

উপসর্গ না থাকা অবস্থায় করোনা শনাক্ত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। তারা বলছেন, এমনটা হলে বোঝার সাধ্য নেই কে আক্রান্ত আর কে নয়। উপসর্গহীন ব্যক্তি সবার মাঝে ঘুরে বেড়ালেও কেউ সাবধান হতে পারবেন না। ফলে আরও অনেকের মধ্যে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও কারও করোনা পজেটিভ হতে পারে। সবার মধ্যে উপসর্গ থাকবে, এমন নয়। ৫০-৮০ ভাগ লোকের উপসর্গ থাকে না। তারা কোনোরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিংবা চিকিৎসা ছাড়াই শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়ে ভাইরাস প্রতিহত করে সুস্থ হয়ে ওঠেন। ঝালকাঠি সদর উপজেলার একটি গ্রামে ৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে ফেরে একটি পরিবার। তাদেরও করোনার উপসর্গ ছিল না। তাদের ছয় মাসের বাচ্চাসহ তিনজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তিনজনেরই করোনা পজেটিভ প্রতিবেদন এসেছে।

এদিকে গাইবান্ধায় পুনরায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এক তরুণ। যুক্তরাষ্ট্র ফেরত ওই তরুণ ও তার মা গত ২২ মার্চ শনাক্ত হয়ে গাইবান্ধায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১০ এপ্রিল ছেলে (২২) সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু সুস্থ হওয়ার ১২ দিনের মাথায় তিনি পুনরায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাকে আবার গাইবান্ধার আইসোলেশন কেন্দ্রে এনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে চীনে সম্প্রতি ৩৮ জন রোগীর উপর এই সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, ১২ জনেরই চোখে কনজাংটিভাইটিস হয়েছিল। কনজাংটিভা হল চোখের সাদা অংশের পাতলা আস্তরন। আর নিউমোনিয়া বেশি হলে চোখের ওই অংশ লাল হয়ে যায়। ‘চায়না থ্রি জোর্জেস ইউনিভার্সিটি’ থেকে এই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।

এই গবেষণার রিপোর্ট আসার পর নিউ ইয়র্করে চিকিৎসকরা বলেন, কেউ যেন চোখে হাত না দেন। এছাড়া করোনা রুখতে কনটাক্ট লেন্সের বদলে চশমা পরতেও বলেছেন চিকিৎসকরা। যদিও কনজাংটিভাইটি এই রোগের এক বিরল উপসর্গ। তবে, সবরকমের সতর্কতা নিতে বলা হচ্ছে।