করোনায় মৃত প্রতি ১০ জনের ৯ জনেরই অন্য স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া প্রতি ১০ জনের অন্তত ৯ জনের মধ্যেই আগে থেকে কোনো না কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল। যুক্তরাজ্যের পরিসংখ্যান বিভাগ অফিস অব নাশনাল স্ট্যাটিস্টিকসের থেকে পাওয়া উপাত্ত থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে ।
করোনাভাইরাসের কারণে মার্চে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে যে চার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তাদের তথ্য পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে সংস্থাটি। এসব ঘটনার ৯১ শতাংশের ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীর অন্য কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছিল। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষের ছিল হৃদরোগ। তারপরেই ছিল ডিমেনশিয়া বা স্মৃতি ভুলে যাওয়া ও শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা।
মারা যাওয়াদের মধ্যে অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা থাকার গড় ২.৭, অর্থাৎ গড়ে যারা মারা গেছেন তাদের প্রত্যেকের মধ্যে গড়ে দু’টির বেশি জটিল রোগ ছিল। বয়স এবং লিঙ্গভেদে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হারে কতটা তারতম্য হয়েছে, তা যাচাই করার চেষ্টা করেছে পরিসংখ্যান সংস্থা ওএনএস।
দেখা গেছে, করোনাভাইরাসে পুরুষদের মারা যাওয়ার সম্ভাবনা নারীদের চেয়ে দ্বিগুণ। মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে। বয়স ৬০ পার করার পর থেকে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেড়ে যায় বহুগুন।
অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলেও শুধুমাত্র করোনাভাইরাস কী পরিমাণ মানুষের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে, তা বোঝার চেষ্টা করেছিল ওএনএস। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, অন্য স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলেও মৃত্যুর কারণ করোনাভাইরাসই ছিল।
করোনাভাইরাসের কারণে মারা যাওয়ার ফলে ব্যক্তিদের সম্ভাব্য জীবনকালের কতটা সময় কমে যায়, সেই হিসেব করা আসলে খুবই কঠিন। ওএনএস’র স্বাস্থ্য বিশ্লেষণ বিভাগের প্রধান নিক স্ট্রাইপ মন্তব্য করেন, করোনাভাইরাসে হওয়া মৃত্যুর বিশ্লেষণ করা ‘কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং।’
তিনি উল্লেখ করেন, বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় হৃদরোগ ও স্ট্রোকে মৃত্যুর হার কমে গেছে, যেটি একটি নির্দেশক হতে পারে যে ওইসব স্বাস্থ্যহত কারণে যারা এমনিতেই মারা যেতেন, তারা হয়তো এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন।
তবে তা সত্ত্বেও, তথ্য প্রমাণ যাচাই করে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এখনও যে পরিমাণ মানুষ মারা যাচ্ছেন, সেই সংখ্যাটি প্রত্যাশিত মোট মৃত্যুর সংখ্যার আনুমানিক হিসেবের চেয়ে ‘বাড়তি।’ তিনি মন্তব্য করেন মানুষের মৃত্যুহারের ওপর এই ভাইরাসের প্রভাব আসলে কতটুকু, তা যাচাই করার জন্য এখনো আরো গবেষণা করা প্রয়োজন।
একই ধারণা পোষণ করেন বিবিসি’র পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান রবার্ট কাফ। তিনি বলেন, ‘যেসব মানুষ হয়তো এই মাসে মারা যেত, অনেকক্ষেত্রে তাদের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে করোনাভাইরাস। তবে ভাইরাসটি এর চেয়েও বেশি প্রভাব ফেলছে। মোট মৃত্যুর প্রত্যাশিত সংখ্যাটা বাড়িয়ে দিয়েছে করোনাভাইরাস।’
‘যেসব মানুষের এক বা একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল তাদের সম্ভাব্য আয়ুষ্কাল এমনিতেই কম থাকে, কিন্তু করোনাভাইরাস তাদের জীবন থেকে কী পরিমাণ সময় কেড়ে নিলো, সেটি এখনই বলা কঠিন’, বলেন রবার্ট কাফ। খবর: বিবিসি বাংলা।