১৩ এপ্রিল ২০২০, ১০:৪২

করোনা মোকাবিলায় যেভাবে দারুণ সফল কেরালা

  © সংগৃহীত

ভারতের ভয়াবহ আকারে করোনাভাইরাস ছড়ানো শুরু হলেও এটি মোকাবিলায় দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে দেশটির কেরালা রাজ্য। দেশটির প্রথম করোনা রোগী রাজ্যটিতে শনাক্ত হলেও সর্বোচ্চ আক্রান্ত রাজ্যের মধ্যে তাদের অবস্থান অষ্টম।

কেরালায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬৪ জন। মারা গেছেন ২ জন। সুস্থ হয়েছেন ১২৩ জন। বিশেষজ্ঞদের মতে, কঠোর ব্যবস্থা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি কেরালার সাফল্যের মূলমন্ত্র। এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

তাতে বলা হয়েছে, ব্যাপক স্বাস্থ্য পরীক্ষা, আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসাদের খুঁজে বের করা, কোয়ারেন্টিন করার পাশাপাশি লকডাউনের কারণে আটকে পড়া অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য আশ্রয় নিয়মিত খাবার পৌঁছানোর মতো মানবিক উদ্যোগ করোনা মোকাবিলায় সফল কয়েছে কেরালাকে।

রাজ্যটিতে প্রায় ৩০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী মানুষের সেবাদিচ্ছেন। এমনই একজন স্বাস্থ্যকর্মী শিবা টিএম কোয়ারেন্টিনে থাকাদের তথ্য সংগ্রহ করেন। শারীরিক ও মানসিক অবস্থার পাশাপাশি পর্যাপ্ত খাবার আছে কিনা— এমন তথ্য সংগ্রহ করেন।

কেরালার স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজা বলেন, ‘আমরা মারাত্মক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সামর্থ্যের সর্বোচ্চটুকু দেওয়ার চেষ্টা করছি। এখন আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে, আগামী সপ্তাহের কথা বলা যাচ্ছে না। সেজন্য স্বস্তির কোনো সুযোগ নেই।’

ভারতে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৮ হাজার। মারা গেছেন ২৮৯ জন। করোনা মোকাবিলায় ভারতের মডেল কেরালা। ভাইরোলজিস্ট ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ শহিদ জামিল বলেন, ‘মহামারি ঠেকানোর উপায় হচ্ছে ব্যাপক হারে পরীক্ষা, আইসোলেশন, সংস্পর্শে আসাদের শনাক্ত করা ও চিকিৎসা। সবকটিতেই কেরালা সাফল্য দেখিয়েছে। অন্যদিকে মানবিকতাও দেখিয়েছে। এ কারণে তাদের উদ্যোগ কার্যকর হয়েছে।’

এর আগে নিপাহ ও জিকা ঠেকানোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে করোনা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সফল হয়ছে কেরালা। ভারতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি হ্যাংক বেকেডাম বলেন, অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কেরালা জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছিল। সেখানকার সরকার পর্যবেক্ষণ, ঝুঁকিতে থাকা গ্রুপে অধিক মনোযোগের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে।

গত জানুয়ারিতে কেরালায় প্রথম তিন জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তারা চীনের উহানের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এরপরই চীন থেকে আসা যাত্রীদের বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টিন চালু করে কেরালা। এখন এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে রাজ্যটিতে করোনা আক্রান্তের হার কমেছে ৩০ ভাগ।

ফেব্রুয়ারিতে কেরালার বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং চালু হয়। করোনা আক্রান্ত নয়টি দেশের যাত্রীদের বাধ্যতামূলকভাবে হোম কোয়ারেন্টিন করা হয়। সেক্ষেত্রে কেরালা অত্যন্ত কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল। বিদেশি যাত্রী ও অনাবাসিকদের সরকারি উদ্যোগে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হয়।

ভারতের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে ব্যাপক পরীক্ষা প্রায় অসম্ভব মনে হলেও কেরালা তা সম্ভব করে দেখিয়েছে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই ১৩ হাজার করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। অথচ একই জনসংখ্যা নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশে স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে ছয় হাজার, তামিল নাড়ুতে পরীক্ষা হয়েছে আট হাজার।

প্রায় ৩০ বছরেরও বেশি রাজ্যটিতে কমিউনিস্ট শাসন চলছে। সেখানে বেশি বিনিয়োগ করা হয় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায়। ভারতে সবচেয়ে ভালো জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা কেরালা রাজ্যেই। সাক্ষরতার হারও সবচেয়ে বেশি। কেন্দ্রীয় সরকার লকডাউন ঘোষণার আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল কেরালা। 

দুর্দান্ত চিকিৎসার পাশাপাশি সুস্থ হওয়া ব্যক্তিরা যাতে বৈষম্যের শিকার না হন, যেন মানসিকভাবে ভেঙে না পড়েন সেজন্য ব্যবস্থা নিয়েছে কেরালা সরকার। পাশাপাশি দ্রুত শনাক্তকরণ কিট সংগ্রহ করে হটস্পটগুলোয় নিয়মিত পরীক্ষা চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। দক্ষিণ কোরিয়ার আদলে কেরালায় চালু হয়েছে ওয়াক-ইন টেস্টং ব্যবস্থা।