এবার করোনা ইস্যুতে সুনাম কুড়াচ্ছেন জেসিন্ডা আর্ডার্ন
করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে এক মাসের লকডাউন চলছে নিউজিল্যান্ড। এছাড়া প্রথম থেকেই দেশটিতে করোনার বিস্তাররোধে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল। অন্য কোনো দেশ থেকে নিউজিল্যান্ডে পৌঁছালেই বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
একই সঙ্গে দেশটিতে সব ধরনের জনসমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। গত তিন সপ্তাহের মধ্যে বুধবার দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সর্বনিম্ন। দেশটিতে নতুন করে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২৯। গত চারদিন ধরেই আক্রান্তের সংখ্যা কমতে দেখা গেছে। দেশজুড়ে দু'সপ্তাহ ধরে লকডাউন এবং কড়াকড়ির কারণেই করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে নিউজিল্যান্ড। এছাড়া সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের ঘোষণাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন।
যেসব নাগরিক বিদেশ থেকে ফিরেছেন এবং তাদের শরীরে করোনার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি তাদের বাড়িতে সেলফ আইসোলেশনে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা। আর সেই নির্দেশ সফল হওয়ায় সুনাম কুড়াচ্ছেন তিনি।
এর আগে নিউজিল্যান্ডের দুটি মসজিদের হামলার ঘটনার পর মুসলমানদের পাশে দাঁড়িয়ে বিশ্বজুড়ে সুনাম কুড়িয়েছিলেন তিনি।
জানা যায়, নিউজিল্যান্ডে এখন পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ২৩৯ জন। তাদের মধ্য থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছে ৩১৭ জন। জানা যায়, সারা পৃথিবী নভেল করোনাভাইরাসে ধুঁকতে থাকলেও নিউজিল্যান্ডে সেই অর্থে এখনো চাপ সৃষ্টি হয়নি। সেই ২৮ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে প্রথম রোগী পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত ‘মাত্র’ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ের ভেতর ইতালি, আমেরিকায় হাজার-হাজার মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি মারা গেছেন।
নিউজিল্যান্ডের এমন ‘সফলতার’ রহস্য খুঁজতে গিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট কৃতিত্ব দিয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নকে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবর শুনেই সতর্ক হয় নিউজিল্যান্ড। অন্য দেশগুলো যেখানে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেছে, সেখানে কিউই সরকার কয়েক দিনের ভেতর সাধারণ মানুষকে ঘরে ঢুকিয়েছে, পর্যটকদের ভ্রমণের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। দেশটিতে বছরে প্রায় ৪ মিলিয়ন পর্যটক যায়।
পর্যটক নির্ভর দেশটি ১৯ মার্চ থেকে তাদের সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। কোনো বিদেশিকে তখন থেকেই ঢুকতে দেয়া হয়নি। পরদিন থেকে নাগরিকদের ঘরে থাকার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। বাধ্যতামূলক সামাজিক দূরত্বের নির্দেশ আসে ২৩ মার্চ থেকে। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত।
কাজ বন্ধ হওয়ায় সাধারণ মানুষের যেন সমস্যা না হয়, সে জন্য অভিবাসীসহ সবাইকে আর্থিকভাবে সাহায্য করা হয়। এই সময়ে সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নির্দেশ অমান্য করে সৈকতে ঘুরতে গিয়ে শাস্তির মুখে পড়েন।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, গোটা ব্যাপারটিতে জেসিন্ডা একাই নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার বিরোধীরাও এই সময়ে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নিউজিল্যান্ডে ১ হাজার ৩১২ জন কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। ৪ জন মারা গেলেও সেরে উঠেছেন ৪২২ জন।
পরিস্থিতি আর যাতে খারাপের দিকে না যায়, সে জন্য শুক্রবার থেকে ‘মোবাইল টেস্টিং’ শুরু হয়েছে। ডাক্তার, নার্সরা বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্যাম্পল নিয়ে আসছেন। এভাবে এখন পর্যন্ত ১০ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে।