০৭ এপ্রিল ২০২০, ০৫:৫১

আক্রান্ত অবস্থায় দেওয়ানবাগীর ওরসে যান করোনায় মৃত বৃদ্ধ

করোনায় আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে মারা যাওয়া এক বৃদ্ধ চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসে দেওয়ানবাগীর ওরসে অংশ নিয়েছিলেন। গত ২০ মার্চ মতিঝিলে অনুষ্ঠিত দেওয়ানবাগীর ওই ওরসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাসহ সারা দেশ থেকে ২০ হাজারেরও বেশি মুরিদ অংশ নেন। তাই করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধের মাধ্যমে ওই ওরস থেকে সারা দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পক্ষ থেকে মৃত্যুর বিষয়টি জানানো হলেও গোপন রাখা হয় তার পরিচয়। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে,  মারা যাওয়া ওই ব্যক্তি শরীয়তপুরের নড়িয়া থানা এলাকার থিরোপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ১৬ দিন অসুস্থ ছিলেন শরীয়তপুরের নড়িয়া থানা এলাকার থিরোপাড়া গ্রামের ওই বৃদ্ধ। এ সময়ের মধ্যে তিনি অন্তত চারটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে যান। যাত্রাপথে একবার লঞ্চ ও একবার অ্যাম্বুলেন্স এবং ভাড়া করা গাড়ি ব্যবহার করেন। অংশ নেন দেওয়ানবাগীর ওরসে। এছাড়া কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে তিনি ছিলেন মিরপুর-১৩ নম্বরে তার বড় মেয়ের বাড়িতে। সেখান থেকে স্থানীয় মসজিদে নামাজ আদায় করেন। এখন তার মেয়ে, জামাই ও তাদের সন্তান জ্বর ও সর্দি-কাশিতে ভুগছেন।

মারা যাওয়া বৃদ্ধের পরিবারের ভাষ্যমতে, তার বড় ছেলে থাকেন ইতালি। গত ৮ জানুয়ারি তিনি ঢাকায় আসেন। এর দুদিন পর চলে যান গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া থানা এলাকার থিরোপাড়া গ্রামে। এরপর সেখানে শুরু করেন বাড়ি নির্মাণের কাজ। কাজের দেখভালের জন্য তিনি বাবা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সেখানেই ছিলেন। বাড়ির ছাদ ঢালাইয়ের পর তিনি গত ১২ মার্চ চলে আসেন ঢাকায়। ওঠেন মিরপুর-১ নম্বরের উত্তর টোলারবাগের ১৯/জি নম্বর বাড়িতে। এটি তার শ্বশুরবাড়ি। নয়তলা ভবনের তৃতীয় তলার সি ফ্ল্যাটেই বর্তমানে রয়েছেন তিনি। ওই বাড়িতেই নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় মৃত্যু হয় গত ২০ মার্চ শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায়।

ইতালি থেকে ফেরার পর এখন পর্যন্ত কোনো জ্বর ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হননি দাবি করেন মারা যাওয়া বৃদ্ধের বড় ছেলে। তিনি বলেন, আমি এসেছি জানুয়ারির ৮ তারিখে। তখন থেকে এ পর্যন্ত আমি পুরোপুরি সুস্থ রয়েছি। তবে বাবা চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসে দেওয়ানবাগীর ওরসে গিয়েছিলেন এবং যখন মিরপুরে আমার বোনের বাসায় ছিলেন, সেখানকার স্থানীয় মসজিদে তিনি নামাজ আদায় করেছেন। এসব জায়গা থেকেও তিনি নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত হতে পারেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

শরীয়তপুরের নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত জেলা কমিটির ফোকাল পার্সন ও জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব ও সার্বিক) মোহাম্মদ মামুন-উল-হাসান এ প্রসঙ্গে বলেন, ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ওই বৃদ্ধের মৃত্যুর পর নড়িয়া থানা এলাকার থিরোপাড়া গ্রামের ২৪টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি বাড়ি তার স্বজনদের। এছাড়া তাকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স চালকের বাড়িসহ আশপাশের আরো পাঁচটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।