করোনা: সেই হ্যান্ড স্যানিটাইজারেই এখন ঝুঁকিতে মানুষের জীবন!

  © ফাইল ফটো

চীন থেকে ছড়ানো করোনাভাইরাসে গোটা বিশ্ব এখন টালামাটাল। বাদ যায়নি বাংলাদেশও। অন্যান্য দেশের মতো তাই এ ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে বাংলাদেশেও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার বেড়েছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করছে একটি চক্র, যা মানুষের জীবনের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করছে।

জানা গেছে, অসাধু চক্রের পাশাপাশি অনেকে ঘরেই বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে স্যানিটাইজার তৈরি করছে। সেগুলো বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও দুস্থ মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব হ্যান্ড স্যানিটাইজারে জীবাণু ধ্বংসের উপযুক্ত উপাদান না থাকায় তা জনস্বাস্থের জন্য উদ্বেগ তৈরি করছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, স্যানিটাইজার তৈরিতে প্রধান কাঁচামাল হিসেবে আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল বা আইপিএ ব্যবহার করা হয়। এটি জীবাণু ধ্বংসের মূল উপাদান। তবেচ নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজারে তা ব্যবহার করা হচ্ছে না। ফলে তা কোনো কাজে লাগে না। অথচ সাধারণ মানুষ এগুলো ব্যবহার করে জীবাণুমুক্ত ভাবছে নিজেকে।

নকল এসব হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে সবাই খাওয়া-দাওয়া করার পাশাপাশি নাকে-মুখে-চোখেও হাত দিচ্ছে। পলে হাতের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করছে, তৈরি হচ্ছে জীবনের জন্য ঝুঁকি। এছাড়া হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপাদান ত্বকের ক্ষতি করছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, এগুলো ব্যবহারে চর্মরোগসহ নানা জটিল সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ত্বকে ব্যবহারের অনুপযোগী কিছু রাসায়নিক দিয়ে নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করা হয়। এগুলোর কারণে ইনফেকশনসহ নানা ধরনের চর্মরোগ হতে পারে। তখন শরীরে রোগবালাই ছড়াবে।’

জানা গেছে, দুই ধরনের হ্যান্ড স্যানিটাইজার জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। সেগুলো হচ্ছে- অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং অ্যালকোহলমুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার। অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজারে সাধারণত ৬০ থেকে ৯০ শতাংশ আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল, ইথানল অথবা এন-প্রোপানল থাকে। আর অ্যালকোহলমুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজারে কোয়াটারনারি অ্যামোনিয়াম কম্পাউন্ড থাকে।

এগুলো জীবাণু ধ্বংসের ক্ষেত্রে অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজারের অপেক্ষা কম কাজ করে। অপরদিকে অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার ব্যাকটেরিয়াই ধ্বংসের পাশাপাশি ভাইরাস ধ্বংসে কার্যকর। এরমধ্যে  ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ , রাইনোভাইরাস, হেপাটাইটিস-এ ভাইরাস, এইচআইভি ও মার্স-এর মতো ভাইরাস রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, হাত পরিষ্কার করতে স্যানিটাইজারের পরিবর্তে সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা ভালো। তারা বলেন, ‘দোকানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাওয়া না গেলে ঘরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরিকে নিরুৎসাহিত করছি। ঘরে বসে স্যানিটাইজার তৈরি ও ব্যবহার করা আশঙ্কাজনক। এর থেকে বিপদের সম্ভাবনা থাকে।’

তবে বাজারে বিদ্যমান সব কোম্পানির হ্যান্ড স্যানিটাইজারকেও নিরাপদ বলতে চান না ফার্মাসিস্টরা। তাদের মতে, স্যানিটাইজারে কী উপাদান আছে তার উপর নির্ভর করে শরীরের জন্য ক্ষতিকর কি না। এছাড়া বাজারে প্রাপ্ত স্যানিটাইজারের মধ্যে অ্যালকোহলপূর্ণ স্যানিটাইজারই সবচাইতে ভালো। তবে তাও পুরোপুরি নিরাপদ নয়। এক গবেষণায় অনুযায়ী, অ্যালকোহল স্যানিটাইজিং জেল ব্যবহারকারীদের রক্তেও অ্যালকোহল পাওয়া যায়।

কিছু স্যানিটাইজারে ব্যবহৃত আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল এক ধরনের পেট্রোকেমিক্যাল, যা নিউরোটক্সিন নামেও পরিচিত। এটি ত্বক শুষে নেয় এবং তা দেহে বিষের মতো কাজ করে। কিছু উপাদান শ্বাসকষ্ট এবং ক্রোনিক ডার্মাটাইটিসের মতো রোগের সৃষ্টি করে বলেও জানা গেছে।


সর্বশেষ সংবাদ