সাধারণ জ্বর না করোনাভাইরাস, কীভাবে বুঝবেন?
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে এখন চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশ্বের ১৭২টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। গত বুধবার আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়েছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস শরীরে আস্তানা গাড়লেও দুই সপ্তাহ কিংবা তারও বেশি সময় পর গিয়ে সেটি প্রকাশ পায়।
ঋতু পরিবর্তনের এই সময় অনেকেই সাধারণ সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে যেহেতু এখন গোটা বিশ্বে করোনা মহামারি আকার ধারন করেছে এ কারণে সামান্য সর্দি-জ্বরেই সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ছেন। অন্যদিকে সর্দি জ্বরের যা লক্ষণ, একই লক্ষণ করোনারও। এজন্য করোনা না সাধারণ জ্বর তা বোঝা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সাধারণ জ্বর, ঠাণ্ডা লাগার থেকে করোনা অনেক বেশি বিপজ্জনক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে অজানা বিপদ আখ্যা দিয়েছে। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের বেশিরভাগের শরীরে জ্বর দেখা দেয়। কারও এর সঙ্গে থাকে শুকনো কাশি, ক্লান্তিভাব, পেশিতে ব্যথা থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাশি বা সর্দির লক্ষণ দেখে বোঝা সম্ভব নয়, তা সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা না করোনাভাইরাস। তবে করোনা হলে জ্বর বাড়তে থাকে দ্রুত। এছাড়া কাশি, ক্লান্তি, গায়ে ব্যথার পাশাপাশি কখনও কখনও বমিও হতে পারে। দু’ক্ষেত্রেই নিউমোনিয়াও দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সাধারণ জ্বর ও করোনা ভাইরাস জ্বরের মধ্যে পার্থক্য ঠিক এখানেই।
সাধারণ সর্দি, জ্বর হলে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন নেই বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। যদি জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। আর যদি জ্বর বেশি সময় ধরে থাকে তাহলে অবশ্যই বিষয়টাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
এর আগে করোনা ভাইরাস নিয়ে জরুরি কিছু পরামর্শ দিয়েছেন উপমহাদেশের বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠি। করোনা ভাইরাসের অন্যতম একটি উপসর্গ হচ্ছে জ্বর। কিন্তু জ্বর হলেই করোনাভাইরাসের পরীক্ষা না করার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. দেবী শেঠি। তার মতে, অতিরিক্ত পরীক্ষা ভবিষ্যতে বিপদ বাড়াবে। কেননা চাহিদার তুলনায় করোনা পরীক্ষার কিট অপ্রতুল।
শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ভারতীয় এই চিকিৎসক বলেন, ‘আমার পরামর্শ হলো- জ্বর হলেই করোনার পরীক্ষা নয়। আগে অপেক্ষা করে উপসর্গ পর্যবেক্ষণ করুন। খারাপ হলে নিজেকে পরীক্ষা করিয়ে নিন।’
তিনি বলেন, ‘যদি কারও ফ্লু বা সর্দি থাকে; তাহলে প্রথমে নিজেকে আইসোলেট রেখে লক্ষণ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। প্রথম দিন শুধু ক্লান্তি আসবে। তৃতীয় দিন হালকা জ্বর অনুভব হবে, সঙ্গে কাশি ও গলায় সমস্যা। পঞ্চম দিন পর্যন্ত মাথাব্যথা। পেটের সমস্যাও হতে পারে। ষষ্ঠ বা সপ্তম দিনে শরীরে ব্যথা বাড়বে এবং মাথা যন্ত্রণা কমতে থাকবে। তবে ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। পেটের সমস্যা থেকে যাবে। এবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অষ্টম ও নবম দিনে সব লক্ষণই চলে যাবে। তবে সর্দির প্রভাব বাড়তে থাকে। এর অর্থ আপনার প্রতিরোধক্ষমতা বেড়েছে এবং আপনার করোনা-আশঙ্কার প্রয়োজন নেই।’
করোনা-পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে দেবী শেঠি বলেন, ‘এমন সময় আপনার করোনা পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। কারণ আপনার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। যদি অষ্টম বা নবম দিনে আপনার শরীর আরও খারাপ হয়, করোনা হেল্পলাইনে ফোন করে অবশ্যই পরীক্ষা করিয়ে নিন।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, প্রতি বছর গোটা বিশ্বে ৩০-৫০ লাখ মানুষ ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হন। এদের মধ্যে ২ লাখ ৯০ হাজার থেকে ৬ লাখ ৫০ হাজারের মৃত্যু হয় শ্বাস প্রশ্বাস সংক্রান্ত অসুখ থেকে। ঘরে থেকে বিশ্রাম নিয়ে বা ওষুধ খেয়ে এই সব সমস্যা কমে যায়। কখনও আবার ২ সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হয়ে যায় নিজে থেকেই। কিন্তু করোনা এমনই এক ভাইরাস যার নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ এখনও তৈরি হয়নি। এ কারণে এটি চিন্তিত করে তুলেছে গোটা বিশ্বকে।