১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৫:৪২

সজনে পাতায় তিনশ রোগের ঔষধ

সজনে গাছের পাতা   © সংগৃহীত

সজনে গাছ চেনে না এমন মানুষ পাওয়া দায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম মরিংগা ওলেইফেরা (Moringa Oleifera)। অনেকেই আবার এর ডাটা খেতে বেশ পছন্দ করেন। বসন্তের শেষের দিকে বাজারে ওঠে সজনে গাছের ডাঁটা। পছন্দের পাশাপাশি সজনে ডাঁটার পুষ্টি গুণাগুণ কমবেশি প্রায় সকলেরই জানা। সবচেয়ে পুষ্টিকর এই গুল্ম উদ্ভিদ প্রায়  তিনশ রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে। শুধু সজনের ডাঁটাই নয়, সজনের পাতাও কেউ কেউ ব্যবহার করেন তরকারি হিসেবে। তবে সজনে পাতা ও ফুলের যে বিস্ময়কর গুণাগুণ রয়েছে সেটা আমাদের অনেকেরই অজানা। সজনে পাতাকে বলা হয় নিউট্রেসাস সুপার ফুড। শরীরের প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন ও অ্যামিনো এসিড থাকায় বিজ্ঞানীরা এটাকে ‘পুষ্টির ডিনামাইট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

* সজনে পাতায় লেবুর চেয়ে সাতগুণ বেশি ভিটামিন সি, দুধের চেয়ে চারগুণ বেশি ক্যালসিয়াম এবং ডিমের চেয়ে দু’গুন বেশি প্রোটিন রয়েছে। অন্ধত্ব দূর করতে সজিনা মুখ্য ভূমিকা পালন করে কেননা এটি গাজরের চেয়ে চারগুণ বেশি ভিটামিন এ ধারণ করে। অন্যান্য শাকের চেয়ে ২৫গুন বেশি আয়রন থাকায় এটি অ্যানিমিয়া প্রতিরোধক হিসেবেও কার্যকরী।

* সজনে পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এতে ৯২ ধরণের পুষ্টি উপাদান,৪৬ ধরণের এন্টিঅক্সিডেন্ট, ১৮টি অ্যামাইনো এসিড ও ৮টি অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড বিদ্যমান।

* সজনে পাতার গুঁড়োর বিশেষ গুণাগুণ রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে এতে দুধের চেয়েও বেশি ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ও জিংক থাকায় সজনে পাতাকে শাক হিসেবে খাওয়া হয়। এতে শ্রমজনিত ক্লান্তি, শরীরের ব্যথা ইত্যাদি দূর হয়।

* অনেকে দাঁতের মাড়ির সমস্যায় ভোগতে থাকে। এছাড়া দাঁতের গোঁড়া থেকে রক্ত পড়া এবং মাড়ি ফুলে যাওয়া সমস্যায় পড়েন। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সজনে পাতা ১/২ মগ পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে সেই পানি দিয়ে ভালো করে প্রতিদিন কুলকুচা করলে এতে মাড়ির সকল সমস্যার সমাধান হয়।

* সজনে পাতার রস খাওয়ালে শ্বাসকষ্ট সারে ও হেঁচকি ওঠা বন্ধ হয়। তাছাড়া পাতাকে অনেকক্ষণ সিদ্ধ করে তা থেকে যেই ঘন রস পাওয়া যায় তার সাথে হিং (এক ধরনের বৃক্ষ বিশেষ) ও শুকনো আদার গুঁড়ো মিশিয়ে খাওয়ালে পেটের গ্যাস বেরিয়ে যায় যা হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর হয়।

* সজনের বিচিতে রয়েছে এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। যার ফলে শুকনা সজিনা বিচি ময়লা পানি বিশুদ্ধিকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ব্যাকটেরিয়া বিরোধী হওয়ায় সজিনার পেস্ট ত্বকের জন্যও উপকারী।

* বার্মিজ চিকিৎসকদের মতে, সজনের পাকা পাতার টাটকা রস দু’বেলা খাবারের ঠিক আগে ২ থেকে ৩ চা-চামচ করে খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়। তবে ডায়াবেটিস থাকলে তা খাওয়া নিষেধ।

* সজিনা ফুল শাকের মতো রান্না করে বসন্তকালে খেলে বসন্তের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে ভাল। এছাড়া সর্দি, কাশিতে, শ্লোথ, প্লীহা ও যকৃতের কার্যকারিতা কমে গেলে এবং কৃমিনাশক হিসেবে সজিনা ব্যবহার করা হয়।

* সজনে পাতা বেটে অল্প গরম করে ফোঁড়ার ওপর লাগালে ফোঁড়া ফেটে যায় এবং সজনে পাতার রস মাথায় ঘষলে খুসকিও দূর হয়।

এছাড়াও সজিনার পাতায় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ফোলেট, ভিটামিন বি-৬, থায়ামিন, রিভোফ্লাবিন, প্যানেটোথেনিক এসিড ও নিয়াসিন বিদ্যমান। লৌহ, কপার, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম থাকায় লৌহ রক্তস্বল্পতা দূর, ক্যালসিয়াম হাড় গঠন ও জিংক নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।