সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অবনতি, দ্রুত বাড়ছে আক্রান্ত-মৃত্যুর হার
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত ১০ দিনে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৫৮ জন, এবং আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০ হাজার ৫৭৬ জন রোগী। রবিবার (১০ নভেম্বর) সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের এবং ভর্তি হয়েছেন আরও এক হাজার ১৩৭ জন।
আরো পড়ুন: ডেঙ্গুতে একদিনে আক্রান্ত ১১০৯, মৃত্যু সংখ্যা ৪
গত অক্টোবর মাসের প্রথম ১০ দিনের তুলনায় চলতি মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার ৬২ শতাংশ বেড়েছে, এবং আক্রান্তের হারও ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের দিন রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় চারজন এবং ঢাকার বাইরে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশের মোট মৃত্যু সংখ্যা দাঁড়াল ৩৫৫ জনে।
সাধারণত নভেম্বরে ডেঙ্গু সংক্রমণ কমতে থাকে। আর সংক্রমণ কমার কারণে মৃত্যুর হারও হ্রাস পায়। তবে চলতি মাসের শুরুতেই মৃত্যুর এ ঊর্ধ্বগতি জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকদের উদ্বেগে ফেলেছে। তাঁদের মতে, অক্টোবরজুড়ে ডেঙ্গুতে সংক্রমণের উচ্চমাত্রা থাকার ফলে জটিল রোগীরা মারাত্মক অবস্থায় চলে গেছেন এবং তাদের মধ্যে অনেকেই মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছেন। বর্তমানে সংক্রমণ কমাতে যেমন উদ্যোগ প্রয়োজন, তেমনি চিকিৎসাব্যবস্থায় আরও উন্নয়ন আনাও জরুরি।
বিভাগভিত্তিক আক্রান্তের সংখ্যা
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৪২৯ জন রোগী। এছাড়া ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগের পরিস্থিতি নিচে দেওয়া হলো:
ঢাকা বিভাগ (ঢাকার বাইরে): ৩৫১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগ: ১৬২ জন, খুলনা বিভাগ: ১৩৯ জন, বরিশাল বিভাগ: ১০১ জন, রাজশাহী বিভাগ: ৬৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগ: ৪৮ জন, রংপুর বিভাগ: ৩৩ জন, সিলেট বিভাগ: ৫ জন।
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত মোট ৭২ হাজার ৩৯৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বাইরে রয়েছেন ৪২ হাজার ৬১৮ জন এবং ঢাকার ভেতরে ২৯ হাজার ৭৭৫ জন।
এই বছরে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে তরুণরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। এই বয়সী আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ হাজার ৮৩৮ জন, যা মোট আক্রান্তের ৪৩ শতাংশ। মৃত্যুর ক্ষেত্রেও তরুণদেরই হার বেশি; এই বয়সে মারা গেছেন ৮৪ জন, যা মোট মৃত্যুর ২৩ শতাংশ।
এইদিকে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৪ হাজার ৩৯৬ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে আছেন এক হাজার ৯২২ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে আছেন ২ হাজার ৪৭৪ জন। চলতি বছরে ৬৭ হাজার ৬৪২ জন রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
পূর্বের তুলনামূলক চিত্র
২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো দেশে এক লাখেরও বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এবং মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৭৯ জন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে মৃত্যু সংখ্যা ছিল ২৮১ জন, এবং ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হন, যার মধ্যে মৃত্যু হয় এক হাজার ৭০৫ জনের।
ডেঙ্গুর এই ক্রমবর্ধমান প্রকোপ থেকে বাঁচতে এবং রোগী সংখ্যা কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সাধারণ মানুষকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছে।