হাত দিলেই চুল ঝরছে? সমাধান পাবেন কীভাবে
চুলের যত্ন নেওয়া সহজ নয়। অনেকেই চুল পড়ার সমস্যা নিয়ে চিন্তিত। কারণ, অনেকেই বুঝতে পারেন না কীভাবে পরিচর্যা করলে চুল যত্নে থাকবে। সারা বছরই মানুষের নানা কারণে কমবেশি চুল পড়ে। নামি-দামি প্রসাধনী ব্যবহার করেও সুফল পাচ্ছে না। ঠিকঠাক যত্ন নিয়েও কেন এমনটা হচ্ছে বুঝতে পারেন না অনেকে।
চুল ঝরে যাওয়া আসলে একেবারে প্রাকৃতিক একটি প্রক্রিয়া। চুল ঝরে যাবে এবং আবার নতুন চুল গজাবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অনেকেরই মনে হতে পারে চুল খুব বেশি ঝরে যাচ্ছে। পরিবেশ দূষণ ও ধুলাবালিসহ বিভিন্ন কারণে চুলের কাঙ্ক্ষিত মান ধরে রাখা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে।
চুল ভালো রাখার জন্য কী কী করা দরকার ও কোন কোন অভ্যাস এড়িয়ে চলতে হবে চলুন জোনা যাক।
শ্যাম্পু ব্যবহারে সতর্কতা
সবার চুলে সব শ্যাম্পু সহনীয় হয়না। ফলে যেটা মাথার ত্বকের সাথে মানিয়ে নিচ্ছে, সেটা ব্যবহার করা উচিত। তাছাড়া চুল পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে লক্ষণীয় যে, শ্যাম্পুতে সালফেট, প্যারাবেন এবং সিলিকনের মতো পদার্থগুলো বেশি উপস্থিত না থাকাই ভালো। শ্যাম্পু সব সময়ে মাথার ত্বকে লাগান। তাহলে উপকার পাবেন। কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না।
হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার নয়
যদি খুব বেশি চুল পড়তে থাকে তাহলে হেয়ার প্যাক ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘৃতকুমারী, আমলকী, শিকাকাই, নিমের গুঁড়ো একই পরিমাণে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে চুলে দিতে হবে। সপ্তাহে একবার এটির ব্যবহার চুল পড়া কমাবে। এ ছাড়া ডিম, মেথির গুঁড়ো ও টক দই মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে চুলে দেওয়া যেতে পারে। সপ্তাহে দুদিন এই প্যাক ব্যবহারে চুলের গোড়া মজবুত হয়। অনেকে চুল দ্রুত শুকনো করার জন্য হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করেন। কিন্তু গরম হাওয়া চুলের জন্য ক্ষতিকর।
কন্ডিশনার ব্যবহার
অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। কন্ডিশনার ব্যবহার করলে চুল কেবল উজ্জ্বলই হয় না। এটি চুলের গোড়াকে মজবুত করে ও চুলকে মসৃণ করে। তবে অবশ্যই চুলের ধরন বুঝে কন্ডিশনার বেছে নিতে হবে। বিটরুট নির্যাস, অ্যাকুয়া, প্রো ভিটামিন বি-৫ সমৃদ্ধ কন্ডিশনার ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যাবে। চুল বেশ রুক্ষ হয়ে গেলে শ্যাম্পু করার পরে তাকে আঁচড়ে এক জায়গায় রাখা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কারণ বেশ কিছু ছোট চুল উড়তে থাকে। চুল ঘষে মোছার পর জট পড়া শুরু হয়। ফলে দেখতে মোটেই ভাল লাগে না। চুল ছিঁড়ে যাওয়ার প্রবণতাও বাড়ে।
সূর্যরশ্মি থেকে চুলকে রক্ষা
অতিবেগুনি রশ্মি যেমন ত্বকের ক্ষতি করে, তেমনি চুলের তা ক্ষতিকর। তাই দিনের বেলায় বাইরে বেরনোর আগে চুলেও সান প্রোটেক্টিং ক্রিম কিংবা সিরাম লাগানোর চেষ্টা করুন। এতে চুলের উপরে সুরক্ষার স্তর তৈরি হবে। এর ফলে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
সাঁতার কাটার সময় সতর্কতা
গরমে অনেকেই সাঁতারের ক্লাসে যোগ দেন। সুইমিং পুলের পানি পরিষ্কার রাখতে ক্লোরিন ব্যবহার করা হয়। এই ক্লোরিন ওয়াটার চুলের জন্যে খুব ক্ষতিকারক। কারণ ক্লোরিন চুলের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বের করে দেয়। এর ফলে চুল হয়ে ওঠে রুক্ষ। সামান্য টান লাগলেই ভেঙে যায় কিংবা গোড়া থেকে উঠে আসে। তখন স্বাভাবিক ভাবেই চুল ঝরা বাড়ে।
ভালো খাদ্যাভ্যাস
অনেকে মনে করেন, গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করলে চুল ভালো থাকে। এটি একেবারেই ভুল ধারণা। গরম পানি মাথার তালুর গুরুতর ক্ষতি করে, এতে চুল পড়ে ও চুল দুর্বল হয়ে যায়। আপনি কী খাচ্ছেন? খারাপ খাদ্যাভ্যাস চুল পড়ার অন্যতম কারণ। এ জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার চুল পড়া রোধে সাহায্য করে। ভিটামিন ই যুক্ত খাবার, সামুদ্রিক মাছ ডিম, দুধ চুলের জন্য খুবই উপকারী।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন জরুরি
চুল ভালো রাখতে সকালে ও রাতে নিয়মিত যত্ন তো নেবেনই, তার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনও জরুরি। তাই নিয়মিত দুধ, ডিম, মাছ, পালং শাক ও মটরশুটির মতো প্রোটিন খেলে চুল মজবুত ও ঘন করতে সহায়তা করে। সঠিক খাবার খাওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
ডায়েটেও নজর দিতে হবে
চুলের সমস্যা সমাধান করার জন্য শুধুই তেল শ্যাম্পু মাখলে হবে না। বরং নিজের ডায়েটেও নজর দিতে হবে। অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে তার প্রভাব আপনার চুলেও পড়তে পারে। তাই সব সময় ডায়েট স্বাস্থ্যকর করে তোলার চেষ্টা করুন। প্রোটিন, ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খান। ফ্ল্যাক্সসিড, চিয়া সিড, রাজমা, জিরে, মেথি কিন্তু চুলের জন্য খুবই ভালো। তাই দৈনন্দিন ডায়েটে এগুলি যোগ করতে পারেন।
আর তারপরও যদি চুলের সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।