১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৫২

শীতে ওজন অতিরিক্ত বেড়ে যেতে পারে, কমাবে যে পানীয়

শীত এলেই ওজন বেড়ে যায়  © সংগৃহীত

শীত এলেই ওজন বেড়ে যায়। কারণ শীত মানেই জড়তা, একটু অলসতা। এ সময় সব কাজে আলসেমি চলে আসে। শীতে কাজের গতিও কমে যায়। আবার শরীরচর্চাতেও ভাটা পড়ে এ সময়। শরীরচর্চায় অলসতার কারণেই শীতে ওজন বেড়ে যায়। শীতে সূর্যের আলো শরীরে কম লাগে। গবেষণা বলছে এটা মেদবৃদ্ধির একটি বড় কারণ। পর্যাপ্ত সূর্যের আলোর অভাবে ঘুমও বেড়ে যায়।

একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে শীতে বেশিরভাগ মানুষের ওজন তিন থেকে পাঁচ কেজি ওজন বৃদ্ধি পায়। বাড়তি ওজন কমাতে কি কারণে ওজন বৃদ্ধি পায় সে সম্পর্কে জানতে হবে।

হরমোনাল সমস্যা: ডায়াবেটিস এবং থাইরয়েডে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সত্যিকার অর্থে শীতের সময় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে হরমোনগুলো সাধারণত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। হরমোন নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত চেক-আপ করতে হবে।

ভারী খাবার: শীতকালে অনেক ধরনের সবজি পাওয়া যায়। বিভিন্ন রকম হোটেলেও নতুন নতুন দেশী-বিদেশী খাবারের বাহারি আয়োজন থাকে। যার ফলে মানুষের ভারী খাবার খাওয়া বেড়ে যায়। উষ্ণ খাবার শরীরের তাপমাত্রা বাড়াতে পারে এবং সেই সঙ্গে আমাদের মেজাজকেও ভালো রাখে। তবে অতিরিক্ত কার্ব এবং চর্বিযুক্ত খাবারে বিপদ রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভারী খাবার খেয়ে থাকে সবাই।

কফি: শীতকালে কফি পান বাড়ে। বেশি শীত মানে বেশি কফি। মুখরোচক কফি মানে বেশি বেশি মেদ।

ঘুম: শীতে ঘুম শুরু হয় আগে। আর ভাঙেও দেরিতে। ওজন বাড়ার এটি একটি বড় কারণ। শীত মানেই মর্নিংওয়াক ভুলে কম্বলের ভেতর গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকা। কনকনে শীতে কে আর ওজন বাড়া নিয়ে চিন্তা করে।

শারীরিক পরিশ্রম: শীতের শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে যেন অলসতা ভর করে। সেই সঙ্গে শারীরিক পরিশ্রম তো কমেই যায় কিছুটা। অনেকে ঠাণ্ডার কারণে হাটা, জগিং করে না ঠিক মত। এতে করে খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে যে ক্যালোরি যোগ হয় বা বার্ণ হয় না। ফলে তা ফ্যাট আকারে শরীরে জমা হয়।

ডিহাইড্রেশন: শীতকালে হাইড্রেট থাকাই অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এই সময়টা শরীর সুস্থ রাখতে দিনে ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করুন। কারণ পানির অভাবে ডিহাইড্রেশন দেখা দেয় আর ডিহাইড্রেশনের ফলে শরীর দুর্বল লাগে ও ক্ষুধা বাড়ে।

মন মেজাজের ওপর প্রভাব: সূর্যের আলোর অভাবে বেশিরভাগ মানুষ সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডারে ভোগে। এর ফলে মানুষ অনেক সময় বেশি খেয়ে থাকে বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে থাকে যা অস্বাস্থ্যকর জীবন পরিচালিত করে। এতে করে শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওজন বাড়ে। এই সমস্যাটি কাটিয়ে উঠতে, যখনই সম্ভব সূর্যের আলোতে কিছুটা সময় ব্যয় করার চেষ্টা করতে হবে।

হঠাৎ করেই ওজন কমানো সহজ কথা নয়। সঠিক খাওয়া, ক্যালোরি গণনা থেকে শুরু করে ব্যায়াম করা, ওজন কমানোর জন্য অনেক বিষয় মাথায় রাখতে হবে এবং মনোযোগ দিতে হবে। শীত মানে লোভনীয় সব খাবারের আয়োজন। বিশেষ করে পিঠাপুলি। যার বেশিরভাগই আবার মিষ্টি স্বাদের। এসব খাবার এতটাই সুস্বাদু যে লোভ সামলে রাখা দায়। 

যে কারণে খাওয়া তো হয়ই, সেইসঙ্গে বাড়ে ওজনও। আপনি যদি চান শীতের সময়েও ওজন না বাড়ুক, তাহলে পান করতে হবে কিছু পানীয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক-

আরও পড়ুন: চোখের কারণে যখন মাথাব্যথা, যা করবেন

১. লেবু-পুদিনা চা
লেবুর সাইট্রাস গুণ, পুদিনা উপকারিতা এবং চায়ের উষ্ণতা মিলে তৈরি হবে শীতে ওজন কমানোর উপযুক্ত উপায়। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবুর রস হজম এবং ডিটক্সে সাহায্য করে, পুদিনা পেট এবং গলা প্রশমিত করে যা ক্ষুধা নিবারণ করতে সাহায্য করতে পারে।

লেবু ও পুদিনার চা তৈরি করার জন্য চায়ের সঙ্গে লেবুর রস ও পুদিনা পাতা যোগ করলেই হবে। বাড়তি স্বাদ চাইলে এক চামচ মধু যোগ করুন। তবে ভুলেও চিনি মেশাবেন না। এই পানীয় পান করলে তা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।

২. বিটরুটের রস
বিটরুটের রস শুধু পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ নয়, এই কম ক্যালোরি সমৃদ্ধ পানীয় আপনাকে শীতের সময়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ বিটরুট লিভারের কার্যকারিতা এবং শরীরকে ডিটক্সিফাই করার ক্ষমতার জন্য পরিচিত। এটি শরীরের প্রাকৃতিক চর্বি পোড়ানোর প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। বিটরুটে থাকা ফাইবার দীর্ঘ সময় আপনার পেট ভরিয়ে রাখে।

এক কাপ বিটরুটের রস তৈরি করার জন্য একটি আস্ত বিটরুট গ্রেট করুন এবং পরিমাণমতো পানি দিয়ে ব্লেন্ড করুন। আপনি চাইলে জুসারও ব্যবহার করতে পারেন। স্বাদ বাড়াতে লেবুর রস এবং এক চিমটি বিট লবণ যোগ করুন।

৩. দারুচিনি চা
দারুচিনি চা প্রশান্তিদায়ক এবং সুগন্ধযুক্ত পানীয়। এই চা অনেক স্বাস্থ্য সুবিধা দেয়, তার মধ্যে একটি হলো ওজন নিয়ন্ত্রণ। দারুচিনির শক্তিশালী গন্ধ রয়েছে যা সবাই পছন্দ করে। এক কাপ গরম চায়ের দারুচিনি যোগ হলে তা আরও দারুণ কিছু হতে পারে। দারুচিনি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং এর স্বাদ চিনি খাওয়া কমাতে সাহায্য করে।

রাতে বা ভোরে এক কাপ উষ্ণ দারুচিনি চা মেটাবলিজম বাড়ায় যা চর্বি পোড়ানোর প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। দারুচিনি চা তৈরি করার জন্য ১টি বা ২টি দারুচিনির টুকরা গরম পানি সেদ্ধ করুন। ৫-৭ মিনিট ফোটানো হলে কাপে ঢেলে নিন। খাবারের আগে এই চা খেলে তা হজমেও সাহায্য করতে পারে।

গ্রিন-টি এবং পুদিনা পান করুন
এটি বানাতে আপনার লাগবে ২ চা-চামচ সবুজ চা-পাতা, ৬-৭টি পুদিনা পাতা এবং এক কাপ গরম পানি। এক কাপ পানি এবং পুদিনা পাতা মেশান। এবার ৫ মিনিট ফুটতে দিন। এবার গ্রিন-টি পাতা দিয়ে আরও ৩ মিনিট রেখে দিন। চা ছেঁকে গরম করুন। এতে শুধু ওজনই কমে না, ঘুমও ভালো হয় ও খিদে কমে।

আদা-লেবু-মধুর মিশ্রণ পান করুন
পানীয়টি বানাতে আপনার প্রয়োজন হবে এক লিটার দল, দুটো লেবু, এক ইঞ্চি কুচি আদা, আধ-চা চামচ গোলমরিচ, এক চা-চামচ মধু এবং এক চা-চামচ লেবুর রস।

প্রথমে একটি বড় প্যানে পানি দিন। এবার এতে একটি লেবুর রস ছেঁকে নিন। আদা ও গোলমরিচ দিন। লেবু নরম না হওয়া পর্যন্ত এটি সিদ্ধ করুন। এখন এটি ঠাণ্ডা হতে দিন। পানি ছেঁকে ও মধু মিশিয়ে নিন এবং এটি গরম করুন। লেবু ওজন কমাতে অভাবনীয় কাজ করতে পারে। এটি শরীরে জমা চর্বির পরিমাণও কমাতে পারে। অন্যদিকে খিদে কমাতে পারে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে।