কবে বিদায় নিচ্ছে করোনা মহামারি, জানাল ডব্লিউএইচও
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান ট্রেডরোস অ্যাডানোম গেব্রেয়াসুস জানিয়েছেন, করোনা মহামারির গুরুতর পর্যায় চলতি বছরই বিদায় নিতে পারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এ বছর বিশ্বজুড়ে করোনা-সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা আর থাকবে না। বিদায় নেবে বৈশ্বিক এ মহামারি।
গত সোমবার (১৩ মার্চ) জনস্বাস্থ্য খাতের সম্মানজনক থমাস ফ্রান্সিস জুনিয়র মেডেল ইন গ্লোবাল পাবলিক হেলথ পেয়েছেন ট্রেডরোস অ্যাডানোম। এ নিয়ে এক বিবৃতিতে সংস্থাটির প্রধান ট্রেডরোস অ্যাডানোম তাঁর এ প্রত্যাশার কথা জানান। সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কোভিড-১৯ শ্বাসযন্ত্রের একটি সংক্রামক রোগ যা সার্স-কোভ-২ নামে একটি নতুন আবিষ্কৃত করোনাভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট। করোনা থেকে ‘কো’, ভাইরাস থেকে ‘ভি’, এবং ‘ডিজিজ’ বা ‘রোগ’ থেকে ‘ডি’ নিয়ে এর সংক্ষিপ্ত নামকরণ কোভিড করা হয়। ২০২১৯ এর দিকে এরটি প্রথম চীনের উহানে দেখা যায়। বাংলাদেশে প্রথম ২০২০ সালের মার্চে কোভিড আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। এরপর দেশে মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে কয়েকদফা লকডাউন দেওয়া হয়েছিল। মূলত, বিশ্বব্যাপী মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়লে একে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
সাধারণত ঠাণ্ডা জ্বরের মতোই কোভিড-১৯ এর অনেক লক্ষণ ফ্লু (ইনফ্লুয়েঞ্জা)। যে কারণে কোনও ব্যক্তি কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরীক্ষা করে নেয়া দরকার। ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার দুই থেকে ১৪ দিন পরে এই রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এতে খুব হাল্কা থেকে গুরুতর অসুস্থতা পর্যন্ত হতে পারে। এই রোগে সংক্রমিত হয়েছে এমন অনেক লোকের ক্ষেত্রে আবার কোন লক্ষণীয় উপসর্গ দেখা যায়না।
এই রোগের সাধারণ লক্ষণগুলো হল জ্বর, কাশি এবং ক্লান্তি। অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা বা চাপ, মাংসপেশি বা শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, স্বাদ বা গন্ধ হারানো, বিভ্রান্তি, গলা ব্যথা, রক্ত-জমাট বাঁধা বা নাক দিয়ে পানি পড়া, ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব এবং বমি, পেটে ব্যথা এবং ত্বকে ফুসকুড়ি উঠা। এসব লক্ষণ ছাড়াও শিশুদের খেতে অসুবিধা হতে পারে। যে কোনো বয়সের শিশুরা কোভিড -১৯ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যদিও শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এই রোগের লক্ষণগুলো একই রকমের হয়, তবে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরা এই রোগে সাধারণত কম গুরুতর অসুস্থ হয়।
এছাড়াও সংক্রমিত ব্যক্তি যখন কাশি বা হাঁচি দেয় অথবা কথা বলে, গান করে বা শ্বাস নেয় তখন মুখ বা নাক থেকে নিঃসৃত ছোট ছোট কণার মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই কণাগুলো আকারে বড় শ্বাসযন্ত্রের ফোঁটা থেকে শুরু করে অ্যারোসোলের ছোট ফোঁটার মতো পর্যন্ত হতে পারে এবং কোন ধরনের লক্ষণ ছাড়াও মানুষজন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হতে পারে। এখন পর্যন্ত যে সব প্রমাণ পাওয়া গেছে সেগুলো থেকে বোঝা যায় যে, ভাইরাসটি মূলত এমন ব্যক্তিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে যারা একে অপরের সাথে সাধারণত এক মিটারের মধ্যে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ করে। ভাইরাস বহনকারী কণাগুলো যখন শ্বাস নেয়া হয় বা সরাসরি চোখ, নাক বা মুখের সংস্পর্শে আসে তখনই একজন ব্যক্তি থেকে অন্যজনের মধ্যে সংক্রামিত হতে পারে।
বাতাস চলাচলে সমস্যা রয়েছে এবং/অথবা জনাকীর্ণ অভ্যন্তরীণ পরিবেশে যেখানে মানুষের বেশি সময় কাটানোর প্রবণতা থাকে সেখানে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। বায়ু চলাচলে সমস্যা রয়েছে এমন অভ্যন্তরীণ স্থান বাইরের স্থানের তুলনায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ভাইরাস দ্বারা দূষিত সমতল স্পর্শ করার পর মানুষ তাদের মুখ, নাক বা চোখ স্পর্শ করেও সংক্রমিত হতে পারে। কোভিড-১৯ কীভাবে ছড়ায় এবং কোন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা তাদের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে, কোভিড -১৯ ভ্যাকসিন যত দ্রুত সম্ভব তৈরি করা হচ্ছে। নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার স্বার্থে এসব ভ্যাকসিন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য মানদণ্ড পূরণ করছে কিনা তা প্রমাণ করতে সেগুলোকে অবশ্যই ক্লিনিকাল ট্রায়ালে কঠোর পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যদি তারা এই মানদণ্ড পূরণ করে তবেই একটি ভ্যাকসিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং জাতীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে বৈধতা পায়। ফলে, ধীরে ধীরে বিদায় নিচ্ছে বৈশ্বিক এই মহামারি।