নীরবে সংক্রমণ করে চলেছে জাপানিজ এনকেফালাইটিস ভাইরাস

প্রতীকী
প্রতীকী  © ফাইল ছবি

চট্টগ্রামে নীরবে সংক্রমণ করে চলেছে জাপানিজ এনকেফালাইটিস নামের মশাবাহিত ভাইরাস। রোগটি ছড়ায় কিউলেক্স মশার কামড়ে। চট্টগ্রামে মশার উপদ্রব বেশি হওয়ায় রোগটি সংক্রমণ বৃদ্ধির শঙ্কাও তৈরি করছে। এ ভাইরাসে বয়স্কদের চেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। ভাইরাসটি শনাক্তের কোনো পরীক্ষা এখনো আবিষ্কার না হওয়ায় শঙ্কায় রয়েছেন চিকিৎসকরা।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. একেএম রেজাউল করিম বলেন, মশাবাহিত ভাইরাস রোগ জাপানিজ এনকেফালাইটিস নীরবেই আক্রান্ত করে চলেছে। শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ভাইরাসে সংক্রমণের বিশেষ কোনো চিকিৎসা না থাকায় ভাইরাস মারার ওষুধ ব্যবহার এবং রোগের উপসর্গ দেখেই চিকিৎসা দিতে হয়।

তিনি বলেন, এই ভাইরাস শনাক্তের কোনো টেস্ট এখনো বের হয়নি। গবেষণার প্রয়োজনে বিশেষ ব্যবস্থায় কিছু রোগী শনাক্ত করা হয়। সরকার এটির ভ্যাকসিন আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আশা করি, পর্যায়ক্রমে জাপানিজ এনকেফালাইটিসের সব চিকিৎসাও শুরু হবে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে ২০২২ সালে ২১৭ জন জাপানিজ এনকেফালাইটিস রোগী শনাক্ত হয়। ৬৮৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয় খিঁচুনি নিয়ে। ২০২২ সালে শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে মোট রোগী চিকিৎসা নেয় ১৭ হাজার ৩৪৯ জন। কিন্তু রোগ নির্ণয় ব্যবস্থা না থাকায় শনাক্ত করা যায়নি সন্দেহভাজন রোগীদের। জানা যায়, এই ভাইরাসে আক্রান্ত প্রতি চারজনে একজনের মৃত্যু হয়। সুস্থ হলেও তাদের মধ্যে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশই শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতা তৈরি হয়।

আরও পড়ুন: ২৮ জেলায় ছড়িয়েছে নিপাহ ভাইরাস, নেই চিকিৎসাও

সব বয়সীর আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। তবে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। জরিপে দেখা গেছে, প্রতি চারজন রোগীর মধ্যে তিনজনই শিশু। রোগটির লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে, জ্বর, মাথা ব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ও অজ্ঞান হওয়া।

তথ্য বলছে, ১৮৭১ সালে প্রথম জাপানিজ এনকেফালাইটিস রোগটির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। দেশে রোগটি প্রথম দেখা দেয় ১৯৭৭ সালে ময়মনসিংহের একটি গ্রামে। তখন ২২ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়ে সাতজন মারা যান। ২০০৩ সাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতর, আইসিডিডিআর,বি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এ রোগের প্রভাব, বিস্তার ও প্রতিরোধ নিয়ে গবেষণা ও সার্ভিল্যান্স কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

দেশের ৮২টি সরকারি ও ২১টি বেসরকারি হাসপাতালে এ রোগের চিকিৎসা চলছে। ৩৬টি জেলায় এ রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। সারা বছরই রোগটি আক্রান্ত করলেও মে থেকে ডিসেম্বর মাসে বেশি করে।  গ্রামাঞ্চলে রোগটি বেশি সংক্রমণ করে।

বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক সোসাইটি চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ২০১০ সালে ৬৬৬ জন রোগীর ওপর একটি গবেষণার পর তখনই রোগটি প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের জন্য সুপারিশ করা হয়। বিলম্বে হলেও সরকারি উদ্যোগে ভ্যাকসিনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জাপানিজ এনকেফালাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে করোনার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রোগী মারা যাচ্ছে। তাই ভ্যাকসিনের কোনো বিকল্প নেই।


সর্বশেষ সংবাদ