ফের চোখ রাঙাচ্ছে করোনাভাইরাস
চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার পর প্রতিবেশি দেশ ভারত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। দেশটির সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিদেশফেরত যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা আবারও শুরু করা হয়েছে। তথ্য বলছে, এক চীনের কিংডাও শহরেই প্রতিদিনই পাঁচ লাখের বেশি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। নতুন করে করোনার এ চোখ রাঙানিতে উদ্বেগ জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
গত ২১ ডিসেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ হালনাগাদ রোগতাত্ত্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সর্বশেষ এক সপ্তাহে (১২-১৮ ডিসেম্বর) চীনে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৬৭৪ নতুন রোগী শনাক্ত হন। এই সময় মারা যান ৩৩৭ জন। এর আগের সপ্তাহেও দেশটিতে প্রায় একই সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হন ও মারা যান।
এই সময় জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় আরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তবে কিছু দেশে সংক্রমণ বাড়লেও সার্বিকভাবে বৈশ্বিক সংক্রমণ পরিস্থিতি এখনো স্থিতিশীল রয়েছে। বরং শেষ সপ্তাহে মৃত্যু আগের সপ্তাহের চেয়ে ৬ শতাংশ কমেছে।
চীনের কিংডাওয়ের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির নিউজ আউটলেটে বলা হয়েছে, পূর্বাঞ্চলীয় শহরটিতে একদিনে চার লাখ ৯০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ ৩০ হাজার লোক করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, চূড়া স্পর্শ করা পর্যন্ত এক কোটি লোকের উপকূলীয় শহরটিতে সংক্রমণ আরো বাড়বে। আগামী সপ্তাহান্তে ১০ শতাংশ সংক্রমণ বাড়বে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
আরো কিছু পত্রপত্রিকা সংবাদটি শেয়ার করেছে। তবে ‘স্যাটার ডে মর্নিং’ আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে সংবাদটি প্রকাশ করেছে।
এদিকে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন শনিবার বলেছে, দেশজুড়ে গতকাল চার হাজার ১০৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। নতুন করে কারো মৃত্যু হয়নি। শাংডং প্রদেশে কেবলমাত্র ৩১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। কিংডাও এই প্রদেশেই অবস্থিত।
আরও পড়ুন: যেভাবে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করল হংকং
চীন ছাড়াও ইউরোপের শীতপ্রধান দেশগুলোতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এ অবস্থায় বাংলাদেশের সব বিমান, স্থল ও সমুদ্রবন্দরে স্ক্রিনিং বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একই সঙ্গে বন্দরগুলোতে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে পরীক্ষা করে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে নেওয়ার জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রবিবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত বিশ্বে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে বাংলাদেশের করণীয় শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সভায় অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, চীন-ভারতসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে আবারও করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু আছে। অসংখ্য মানুষ প্রতিনিয়ত আসা-যাওয়া করছে। এই অবস্থায় করণীয় ঠিক করতে শনিবার জাতীয় কারিগরি কমিটির বৈঠক ছিল। কমিটি চারটি বিষয়ে আমাদের পরামর্শ দিয়েছে।
আহমেদুল কবির বলেন, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট বিএফ.৭; সেটি বিএ.৫-এর একটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট। এটাকে বলা হয় আর.১৮, অর্থাৎ একজন থেকে ১৮ জনকে সংক্রামিত করতে পারে। অন্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় এর সংক্রমণ ক্ষমতা চার গুণ বেশি।
তিনি বলেন, নতুন এ ভ্যারিয়েন্টের ভয়ানক দিক হচ্ছে যে ইনকিউবিশন পিরিয়ড অনেক কম। অর্থাৎ খুব কম সময়ের মধ্যে আপনি আক্রান্ত হবেন এবং অনেক বেশি সংখ্যক মানুষকে সংক্রামিত করতে পারবে। এটার উপসর্গ সম্পর্কে যা জানা গেছে; তা অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের মতোই।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। এরপর তা মহামারি আকারে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে এসে নতুন উদ্বেগের কথা শোনা যাচ্ছে। করোনার অমিক্রনের ধরনের (ভেরিয়েন্ট) একটি উপধরনের কারণে এই ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি মোবাকাবিলায় ইতিমধ্যে দেশে উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে।