শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়তায় ভুগবে ৫০ কোটি মানুষ
শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়তার কারণে ২০২০ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রায় ৫০ কোটি মানুষ হৃদরোগ, স্থূলতা, ডায়াবেটিস বা অন্যান্য অসংক্রামক রোগে ভুগবে। সরকার যদি তাদের জনগণকে শারীরিকভাবে সক্রিয় রাখতে জরুরি উদ্যোগ না নেয় তাহলে ওই রোগগুলোর জন্য প্রতিবছর দুই হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় হবে।
বাংলাদেশ সময় বুধবার ভোরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) প্রকাশিত শারীরিক সক্রিয়তা সংক্রান্ত বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এই কথা বলা হয়েছে। প্রথমবারের মতো প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে সব বয়সী ও সামর্থ্যের মানুষদের শারীরিক সক্রিয়তা বৃদ্ধি করতে সরকারের উদ্যোগগুলো মূল্যায়ন করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দিনে অন্তত এক ঘণ্টা শারীরিক কর্মকাণ্ড—যেমন হাঁটা, খেলাধুলা, সাইকেল চালানোর সুপারিশ করেছে। ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীদের ৬৬ শতাংশই শারীরিকভাবে সক্রিয় নয়। কভিড মহামারির সময় এ পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৪টি দেশের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে অগ্রগতি ধীরগতির। জনগণের রোগ প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর এরই মধ্যে সৃষ্ট চাপ কমানো প্রয়োজন। এ জন্য জনগণের শারীরিক সক্রিয়তা বৃদ্ধি করতে রাষ্ট্রগুলোর নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, বিশ্বের অর্ধেকেরও কম রাষ্ট্রে জাতীয় শারীরিক সক্রিয়তা নীতি আছে। সেগুলোর মধ্যে আবার ৪০ শতাংশেরও কম দেশে ওই নীতি কার্যকর হয়েছে। বিশ্বের মাত্র ৩০ শতাংশ দেশে সব বয়সীদের জন্য জাতীয় শারীরিক সক্রিয়তা নীতিমালা আছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রায় সব দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের শারীরিক সক্রিয়তা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা আছে। তবে ৭৫ শতাংশ দেশ কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক সক্রিয়তা পর্যবেক্ষণ করে। পাঁচ বছরের কম বয়সীদের শারীরিক সক্রিয়তা পর্যবেক্ষণ করে বিশ্বের ৩০ শতাংশেরও কম দেশ।
প্রতিবেদনে শারীরিক সক্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য টেকসই পরিবহন উৎসাহিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের মাত্র ৪০ শতাংশের সামান্য বেশি দেশে নিরাপদে হাঁটা ও সাইকেল চালানোর জন্য সড়ক নকশা আছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস বলেন, ‘আমাদের আরো অনেক দেশে হাঁটা, সাইকেল চালানো, খেলাধুলা ও অন্যান্য শারীরিক কাজের মাধ্যমে মানুষকে আরো সক্রিয় হতে সহায়তা করার জন্য নীতি বাস্তবায়ন প্রচেষ্টা জোরদার করা উচিত। এগুলো শুধু ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য নয়; সমাজ, পরিবেশ ও অর্থনীতিতেও এর বিশাল সুবিধা আছে। ’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, দেশগুলো ও অংশীদাররা আরো সক্রিয়, স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর সমাজ গড়তে এই প্রতিবেদন কাজে লাগাবে। ’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার অর্থনৈতিক বোঝা উল্লেখযোগ্য। প্রতিরোধ্যযোগ্য অসংক্রামক রোগাক্রান্ত নতুন রোগীদের চিকিৎসায় প্রতিবছর ব্যয় হতে পারে দুই হাজার ৭০০ কোটি ডলার। ২০৩০ সাল নাগাদ এই অতিরিক্ত ব্যয় ৩০ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে।
অসংক্রামক রোগ মোকাবেলা ও শারীরিক সক্রিয়তা বৃদ্ধিতে জাতীয়ভাবে নীতি গ্রহণের হার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে ২৮ শতাংশ দেশে নীতি বাস্তবায়নে অর্থায়ন হচ্ছে না বা নীতি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, বিশ্বের ৫০ শতাংশেরও সামান্য বেশি দেশ তাদের জনগণকে শারীরিকভাবে সক্রিয় রাখতে গত দুই বছর জাতীয়ভাবে উদ্যোগ নিয়েছে। কভিড-১৯ বিশ্বে এ ধরনের উদ্যোগ শুধু কমায়নি বরং এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেশগুলোর মধ্যে পার্থক্য বাড়িয়েছে।
শারীরিক সক্রিয়তা বৃদ্ধিতে ২০১৮ থেকে ২০৩০ মেয়াদে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক কর্মপরিকল্পনা আছে। সেখানে ২০টি নীতিগত সুপারিশ আছে। সেগুলোর মধ্যে আরো সক্রিয় পরিবহন ব্যবস্থা, শিশুযত্ন, স্কুল, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মক্ষেত্রে শারীরিক সক্রিয়তা বৃদ্ধিতে আরো কর্মসূচি ও উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই প্রতিবেদনে খোলা জায়গা, হাঁটা ও সাইকেল চালানোর অবকাঠামো, স্কুলে খেলাধুলা ও শারীরিক শিক্ষার সুযোগের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক তথ্য-উপাত্তে ঘাটতি পাওয়া গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শারীরিক সক্রিয়তা ইউনিটের প্রধান ফিয়োনা বুল বলেন, ‘আমরা জানি, কিছু দেশে এসংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত আছে। এর পরও আমরা পার্ক, সাইকেল লেন, ফুটপাত ব্যবহারের সুযোগ পরিমাপের জন্য বিশ্বব্যাপী অনুমোদিত সূচকগুলো হারিয়ে ফেলছি। এর ফলে আমরা শারীরিক কর্মকাণ্ড অনুসরণ করতে পারছি না বা শারীরিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে—এমন প্রতিবেদন তৈরি করতে পারছি না। ’