২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:৫৪

জাপানে ৭ হাজার ৩৭৯ পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছে বাংলাদেশ

জাপান ও বাংলাদেশের পতাকা  © টিডিসি সম্পাদিত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোতেগি তোশিমিতসুর সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ–জাপান ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্টের (বিজেইপিএ) চুক্তি সম্পন্নকরণের যৌথ ঘোষণা প্রদান দিয়েছেন।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বানিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ চুক্তি স্বাক্ষরের প্রথম দিন থেকেই ৭ হাজার ৩৭৯ টি পণ্যে জাপানের বাজারে তাৎক্ষণিক শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পাবে। অন্যদিকে, জাপান ১ হাজার ৩৯ টি পণ্যে বাংলাদেশের বাজারে তাৎক্ষণিক শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে।

আলোচনার সময় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূ্ত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষএর নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ-জাপান ইপিএর চিফ নেগোসিয়েটর আয়েশা আক্তার, ডেপুটি চিফ নেগোসিয়েটর মোঃ ফিরোজ উদ্দিন আহমেদ এবং ফোকাল পয়েন্ট মাহবুবা খাতুন মিনু উপস্থিত ছিলেন।

বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তির তথ্যানুযায়ী, ‘বাংলাদেশ-জাপান ইপিএ নেগোসিয়েশনের প্রাথমিক ধাপহিসেবে গঠিত যৌথ গবেষণা দল তাদের প্রতিবেদন ২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর উভয় দেশ একযোগে প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে ১৭ টি সেক্টর অন্তর্ভুক্ত করে একটিসমন্বিত পদ্ধতিতে নেগোসিয়েশন পরিচালনার সুপারিশ করা হয়।’

‘বাংলাদেশ-জাপান ইপিএ নেগোসিয়েশন শুরুর লক্ষ্যে উভয় দেশ একযোগে ২০২৪ সালের ১২ মার্চ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রদান করে। সম্মত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৪ সালের ১৯-২৩ মে ঢাকায় প্রথম রাউন্ডের নেগোসিয়েশন অনুষ্ঠিত হয়। তবে কিছু অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জের কারণে নেগোসিয়েশন সাময়িকভাবে স্থগিত হয়।’

‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য এই চুক্তির গুরুত্ব বিবেচনায় অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে পুনরায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যক্রম শুরু করে এবং এক বছরের মধ্যে চুক্তিটি সম্পন্ন করার একটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। এর ফলে অবশিষ্ট নেগোসিয়েশনসমূহ অনুষ্ঠিত হয়।’

‘বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং প্রধান উপদেষ্টার আর্ন্তজাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সরাসরি সম্পৃক্ততা বাংলাদেশ-জাপান ইপিএ নেগোসিয়েশনের দ্রুত অগ্রগতির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের সক্রিয় উদ্যোগের অংশ হিসেবে তারা একাধিক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সভাপতিত্ব করেন এবং জাপান সফরের মাধ্যমে উচ্চপর্যায়ে কয়েক দফা আলোচনা অন্তর্ভুক্ত ছিল, যেখানে তারা নিজ নিজ মন্ত্রীপর্যায়ের সমমর্যাদার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি মত বিনিময় করেন। এ সকল সফর এবং উদ্যোগসমূহ নেগোসিয়েশন চূড়ান্তকরণে বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকারকে জোরালোভাবে তুলে ধরেন, যাতে ইপিএর কৌশলগত গুরুত্ব প্রতিফলিত হয়।’

‘বাংলাদেশ-জাপান অর্থনৈতিক অংশীদারীত্ব চুক্তি সম্পাদিত হলে বাংলাদেশ চুক্তি স্বাক্ষরের প্রথম দিন থেকেই ৭৩৭৯ টি পণ্যে জাপানের বাজারে তাৎক্ষণিক শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পাবে। পক্ষান্তরে, জাপান ১০৩৯ টি পণ্যে বাংলাদেশের বাজারে তাৎক্ষণিক শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। বাংলাদেশ-জাপান ইপিএ-এর মূল বৈশিষ্ট্যহলো বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাক (আরএমজি) সহ অন্যান্য পণ্য চুক্তি স্বাক্ষরের দিন থেকেই জাপানের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পাবে। এছাড়াও, তৈরি পোশাক খাতে সিঙ্গেল স্টেজ ট্রান্সফর্মেশন সুবিধাও পাবে।’

‘সেবা বাণিজ্য খাতেও উভয় দেশ উল্লেখযোগ্য অঙ্গীকার করেছে। বাংলাদেশ জাপানের জন্য ৯৭টি উপখাত উন্মুক্তকরতে সম্মত হয়েছে। অন্যদিকে জাপান বাংলাদেশের জন্য ১২০ টি উপখাতে ৪টি মোডে সার্ভিস উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর ফলে বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তি স্থানান্তর আরও ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে ‘

‘স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসেবে বাংলাদেশ এই প্রথমবিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপানের সঙ্গে একটি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে। এই চুক্তি বাংলাদেশের জন্য ব্যাপক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সুফল বয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এর ফলে, বাংলাদেশে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের নতুনসুযোগ সৃষ্টি হবে। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ-জাপান অর্থনৈতিক সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।‘