এবার নিজস্ব অর্থায়নেই দুটি জাহাজ কিনছে বিএসসি, ব্যয় ৯৩৫ কোটি টাকা
প্রথমবারের মতো নিজস্ব অর্থায়নে জাহাজ কিনছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন-বিএসসি। দুটি পণ্যবাহী জাহাজ ক্রয়ের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সংস্থাটি। রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাহাজ ক্রয়ের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
জানা গেছে, জাহাজ দুটির ক্রয়মূল্য ৯৩৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এগুলো থেকে বার্ষিক আয় হবে ১৫০ কোটি টাকা। আধুনিক বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ দুটি চীনে তৈরি। যা মার্কিন মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি থেকে কেনা হচ্ছে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে নৌ উপদেষ্টা বলেন, অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনার জন্য বিগত সময়ে লাভ দেখেনি বিএসসি। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পরে বোর্ড মিটিংয়ে এই জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় গত সেপ্টেম্বরে। আমি নিজে দেখতে গিয়েছিলাম, তা ইম্প্রেসিভ।
বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক জানান, করপোরেশন বিগত অর্থ বছরে ৩০০ কোটির বেশি নীট মুনাফা অর্জন করেছে। এই দুটি জাহাজ যুক্ত হওয়ার পর বার্ষিক আয় আরও বাড়বে। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে আরও তিনটি জাহাজ কেনার জন্য অনুদান দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, এই জাহাজ ক্রয়ের মাধ্যমে একদিকে যেমন মুনাফা বাড়বে, অন্যদিকে কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাবে। দুটি জাহাজ যখনই আমাদের বহরে যুক্ত হবে তখন এখানে ১৫০ জন নাবিক যুক্ত হবেন।
বেসরকারি মালিকানাধীন জাহাজ এখন ১০৩টি জানিয়ে তিনি বলেন, সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করায় এতদিন বেসরকারি কোম্পানিগুলো জাহাজ কেনার আগ্রহ কমে গিয়েছিল। তাদের আগ্রহ বাড়াতে এনবিআর থেকে এই ভ্যাট তুলে নেয়া হয়েছে। ফলে এ বছরই একটি কোম্পানি তিনটি জাহাজ নতুন করে তাদের বহরে যুক্ত করছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জাহাজ দুটি আধুনিক প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব বৈশিষ্ট্যে নির্মিত। ইউরোপীয় ও জাপানি যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে জার্মান লাইসেন্সে তৈরি এ জাহাজগুলো জ্বালানি সাশ্রয়ী, নাইট্রোজেন অক্সাইড নির্গমন নিয়ন্ত্রণে সক্ষম এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশমান পূরণ করে। জাহাজ দুটিতে ব্যবহার করা হয়েছে স্পেনের পাম্প, নরওয়ের কম্প্রেসার, চীনা হুল নির্মাণ প্রযুক্তি। পরিকল্পনা অনুযায়ী এ বছরের মধ্যেই বিএসসির বহরে যুক্ত হবে।
এসময় আরও জানানো হয়, আধুনিক বাল্ক ক্যারিয়ার এই জাহাজ দুটির নাম হবে ‘বাংলার প্রগতি’ ও ‘বাংলার নবযাত্রা’। এগুলো কেনার বিষয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সুপারিশ গত ১৭ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদন দেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটি জুন ২০২৫ থেকে জুন ২০২৭ পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য এর ডিপিপি গত ৩ জুন অনুমোদিত হয়। অনুমোদন অনুযায়ী এর প্রাক্কলিত ব্যয় ১ হাজার ১৬২ কোটি ৯৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা। জাহাজ কেনার জন্য চলতি বছরের ৪ জুন আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়।
প্রসঙ্গত, প্রতিটি জাহাজের একক মূল্য ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৪৯ হাজার মার্কিন ডলার। দুটি জাহাজের মোট সমন্বয় করা ও সুপারিশ করা মূল্য ৭ কোটি ৬৬ লাখ ৯৮ হাজার ডলার। এটি দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্য ৮ কোটি ৪ লাখ ডলার’র ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ কম।