সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর থাকবে কিনা, সিদ্ধান্ত নিতে নতুন চিন্তা ঐকমত্য কমিশনের
সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি চালুর বিষয়টি নিয়ে গণভোট আয়োজনের চিন্তা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। উচ্চকক্ষের গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সাধারণ ঐকমত্য থাকলেও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে মতভিন্নতা থাকায় এই বিষয়ে জনগণের মত যাচাই করার জন্য গণভোটের সুপারিশের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
কমিশনের সদস্যরা জানিয়েছেন, সব প্রস্তাবেই গণভোট দেওয়া সম্ভব নয়। তবে পিআর পদ্ধতি ছাড়াও যেসব প্রস্তাবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রয়েছে; অর্থাৎ মতানৈক্য রয়ে গেছ, সেগুলোর ক্ষেত্রেও গণভোটের কথা বিবেচনায় আনা হতে পারে।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় হিসেবে গণভোট, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ, রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ বা নির্বাহী আদেশ রেখেছে কমিশন। প্রস্তাবগুলোর সংবিধান সংশ্লিষ্টতা অনুসারে বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণ করা হবে। যেসব ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন নেই, সেগুলো অধ্যাদেশ বা সরকারি নির্দেশনার মাধ্যমে বাস্তবায়নের পরামর্শ দেওয়া হবে।
এছাড়া সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত বিষয়গুলোতে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে ঘিরেই মূল বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কমিশন চাইছে, এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক পন্থা নির্ধারণে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের সমন্বয় করা হোক। এ লক্ষ্যে আবারও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।
কমিশন জানিয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদ অনেকটাই চূড়ান্ত হলেও তা প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণ না হওয়ায়। তারা চাইছে, সনদ ও বাস্তবায়নপদ্ধতি একসঙ্গে রাজনৈতিক দল ও সরকারের কাছে পাঠাতে। আগামী সপ্তাহেই এটি চূড়ান্ত করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি চালুর প্রস্তাব দিয়েছিল সংবিধান সংস্কার কমিশন। এই প্রস্তাব অনুযায়ী, একটি দল দেশে যত ভোট পাবে, সেই অনুপাতে উচ্চকক্ষে তাদের আসন বরাদ্দ হবে। জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি সহ (এনসিপি) অধিকাংশ দল এই প্রস্তাবকে সমর্থন করলেও বিএনপি এতে দ্বিমত পোষণ করেছে। তারা চায়, নিম্নকক্ষে যেভাবে আসন নির্ধারণ হয়, সেভাবেই উচ্চকক্ষেও আসন বরাদ্দ হোক; অর্থাৎ আসনের ভিত্তিতে, ভোটের ভিত্তিতে নয়।
বিএনপি লিখিতভাবে কমিশনকে জানিয়েছে, তারা সংবিধান সংশোধনের মতো বিষয়গুলো তিন ধাপে বাস্তবায়নের পক্ষপাতী। দলটির মতে, এসব সংস্কার আগামী সংসদ গঠনের পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা উচিত।
অন্যদিকে জামায়াত চায়, গণভোট বা রাষ্ট্রপতির প্রোক্লেমেশনের মাধ্যমে সনদের বাস্তবায়ন হোক। এনসিপি প্রস্তাব দিয়েছে, একটি গণপরিষদ গঠন করে সংবিধান সংস্কারসহ অন্যান্য সংস্কার বাস্তবায়ন করা হোক।
ঐকমত্য কমিশন সব রাজনৈতিক দলের মতামত ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে জুলাই সনদ ও তার বাস্তবায়ন কাঠামো চূড়ান্ত করে শিগগিরই সরকারের কাছে পেশ করবে। তবে উচ্চকক্ষের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে গণভোটের সুপারিশ আসলেই বাস্তবায়িত হবে কি না, তা নির্ভর করবে সরকারের সিদ্ধান্ত ও রাজনৈতিক সমঝোতার ওপর।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গণমাধ্যমকে বলেন, কমিশন জুলাই সনদের চূড়ান্ত রূপ দাঁড় করিয়েছে। সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হতে পারে, তা নিয়ে কমিশন পরামর্শ দেবে। বাস্তবায়নের পদ্ধতিটি নিশ্চিত করার পর সনদ ও বাস্তবায়নের উপায়; এ দুটি দলিল একসঙ্গে দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে।