১৫ জুলাই ২০২৫, ১০:০০

সরকারের অর্থনৈতিক পদক্ষেপের প্রশংসায় বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট

ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতে বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট  © সৌজন্যে পাওয়া

দক্ষিণ এশিয়ার নতুন নিয়োগকৃত বিশ্বব্যাংক ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জুট বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নকে স্বাগত জানিয়ে অন্তর্র্বতী সরকারের অধীন অর্থনৈতিক খাতে গৃহীত সংস্কারমূলক পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ সময় অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বব্যাংককে বলেন, 'বাংলাদেশকে কেবল একটি ভৌগোলিক সীমানা হিসেবে দেখবেন না। আমাদের অর্থনীতি তার চেয়ে অনেক বড়।'

সোমবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের নতুন ডিভিশন ডিরেক্টর জ্যাঁ পেসমকে সঙ্গে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জুট। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, বৈঠকে জোহানেস জুট তার আগের সময়কার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‌'বাংলাদেশ আমার খুবই প্রিয় একটি দেশ।' তিনি ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের জন্য বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি ড. ইউনূস ও তার টিমের কাজকে চমৎকার আখ্যা দিয়ে অভিনন্দন জানাই। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকারের আর্থিক খাতে চ্যালেঞ্জিং ইস্যুগুলোর মুখোমুখি হওয়ার প্রশংসা করে তিনি বলেন, 'আমরা বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি এবং আমাদের এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে।' গত বছরের ‘জুলাই বিদ্রোহে’ নিহত শিক্ষার্থীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জুট বলেন, “এটি বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত সবার জন্য অত্যন্ত আবেগঘন একটি মুহূর্ত।”

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “যখন আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করি, পরিস্থিতি ছিল এক দুর্যোগের মতো—একটি ভূমিকম্প পরবর্তী এলাকার মতো। আমাদের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু সব উন্নয়ন অংশীদাররা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, যা আমাদের আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে।”

তিনি বলেন, ‌'গত জুলাইয়ে আমাদের তরুণরা যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে তা জাতিকে এক নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছে। বিশেষ করে আমাদের মেয়েরা এবং নারীরা অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। আজ আমরা ‘জুলাই নারী দিবস’ পালন করছি। তাদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। তরুণরাই আমাদের মূল শক্তি, আমাদের তাদের স্বপ্নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে হবে।' তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশ যদি এগিয়ে যায়, তাহলে গোটা দক্ষিণ এশিয়া এগিয়ে যাবে। বিচ্ছিন্ন থাকলে কেউই এগোতে পারবে না। আমাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং পরিবহন সুবিধা উন্নত করতে হবে। আমাদের সাগর আছে—এটা আমাদের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ।'

অর্থনৈতিক উন্নয়নে তরুণদের গুরুত্ব তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, 'বিশ্বের অনেক দেশেই তরুণের ঘাটতি। আমরা তাদের বলেছি—তাদের শিল্পকারখানা এখানে আনুক। আমরা প্রয়োজনীয় সবকিছু দেব, বাংলাদেশকে একটি প্রোডাকশন হাবে পরিণত করব।'

নারী ক্ষমতায়নে অধ্যাপক ইউনূসের কাজের প্রশংসা করে জোহানেস জুট বলেন, “আমরা আপনাদের পাশে থাকব। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশে চালু হওয়া মেয়েদের শিক্ষা ভাতা কর্মসূচি এখন বিশ্বের অনেক দেশেই অনুসরণ করা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, ‌'গত অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থায়ন করেছে এবং আগামী তিন বছরেও সমপরিমাণ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।'

প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)-এর বিষয়ে অবহিত করেন।