০১ জুন ২০২৫, ০১:৫১

দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা শিশুর জন্য জরুরি সহায়তা চাইল ইউনিসেফ

ইউনিসেফ লোগো  © সংগৃহীত

রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য চরম সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে শিক্ষার পথ। ইউনিসেফ সম্প্রতি জানিয়েছে, অর্থনৈতিক সহায়তার অভাবে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশু বর্তমানে শিক্ষা থেকে ছিটকে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে পরিচালিত ইউনিসেফের শিক্ষা কার্যক্রমে অর্থসংকট এতটাই প্রকট হয়ে উঠেছে যে, আগামী বছর জুন পর্যন্ত অধিকাংশ শিক্ষা কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হতে পারে। এই পরিস্থিতি শুধু শিশুদের শিক্ষাকে ব্যাহত করছে না, বরং তাদের নিরাপত্তা, মনস্তাত্ত্বিক স্থিতি ও ভবিষ্যৎকেও বিপন্ন করে তুলছে।

গত কয়েক মাসে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় ইউনিসেফ পরিচালিত কর্মসূচির জন্য প্রাপ্ত মানবিক সহায়তা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। এর ফলস্বরূপ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োজিত স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষকদের চুক্তি বাতিল করা হচ্ছে। প্রায় ১১৭৯ জন স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত চুক্তি থাকলেও, নতুন তহবিল না আসায় এদের অনেককেই বিনা পারিশ্রমিকে শুধুমাত্র স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া কিন্ডারগার্টেন থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ইংরেজি, বিজ্ঞান ও সামাজিক শিক্ষা বাদ দিয়ে কেবল মৌলিক বিষয়—যেমন রোহিঙ্গা ভাষায় সাক্ষরতা, গণিত ও জীবনদক্ষতা—পাঠদানে সীমাবদ্ধ রাখা হবে।

শুধু বিষয়ভিত্তিক পাঠক্রমেই নয়, শিক্ষার মান ও ধারাবাহিকতাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নতুন পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষক নির্দেশিকা কেনার জন্য কোনো বরাদ্দ নেই; অতএব, আগের বছরের ব্যবহৃত বই সংগ্রহ করে ব্যবহার করতে বলা হয়েছে শিক্ষার্থীদের, বইগুলোর অবস্থা যেমনই হোক না কেন। একইসঙ্গে বাতিল করা হয়েছে বছর শেষে অনুষ্ঠিতব্য মূল্যায়ন এবং প্লেসমেন্ট টেস্ট, যা শিশুরা কোন শ্রেণিতে উপযুক্ত তা নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা রাখত।

এই সংকটের ভয়াবহতা কেবল শিক্ষার অভাবে সীমাবদ্ধ নয়। বাস্তুচ্যুত ও সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য শিক্ষা একটি আশ্রয়, শৃঙ্খলার অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্র এবং সর্বোপরি ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সেতু। শিক্ষা তাদের সুরক্ষার একটি বড় হাতিয়ার—যা তাদের জঙ্গিবাদ, মানবপাচার, সহিংসতা ও ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসনের মতো বিপদের হাত থেকে দূরে রাখে। অথচ এই আশ্রয় এখন মুখ থুবড়ে পড়ার পথে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, “যে শিশুদের কথা আমরা বলছি, তারা পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় শিশুদের অন্যতম। আমরা চেষ্টা করছি জরুরি শিক্ষা সেবা বজায় রাখতে, কিন্তু নতুন তহবিল না পেলে আমাদের অনেক কিছু বন্ধ করে দিতে হবে।” ইউনিসেফ জানিয়েছে, তারা নিজেদের কর্মীবাহিনী হ্রাস করে একটি ছোট দল রেখে শিক্ষা কেন্দ্রগুলো সচল রাখার চেষ্টা করছে, যা এই সংকট মোকাবেলায় তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার অংশ।

তবে ইউনিসেফ একথাও বলেছে, শুধুমাত্র তাদের একার পক্ষে এই সংকট সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। তাই তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি পুনরায় আহ্বান জানিয়েছে—রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা বাঁচাতে যেন অবিলম্বে নতুন ও টেকসই বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসে বিশ্ব। কারণ, শিক্ষা কোনো বিলাসিতা নয়, এটি একটি মৌলিক অধিকার—বিশেষ করে যখন পুরো একটি প্রজন্ম পিছিয়ে পড়ার মুখে দাঁড়িয়ে আছে।