০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:৫০

ঋণের শর্ত পর্যালোচনায় কাল ঢাকায় আসছে আইএমএফ মিশন

ঋণের শর্ত পর্যালোচনায় কাল ঢাকায় আসছে আইএমএফ মিশন
  © ফাইল ফটো

দেশের চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে নেওয়া ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের পরবর্তী কিস্তি নিয়ে আলোচনায় নতুন গতি আসছে। এই ঋণ কর্মসূচির আওতায় এরই মধ্যে তিনটি কিস্তির অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে বাকি ২৩৯ কোটি ডলারের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি নিয়ে এখন চলছে নানা আলোচনা ও শর্ত পর্যালোচনা। এই প্রেক্ষাপটে আইএমএফের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল আগামীকাল শনিবার ঢাকায় আসছে।

আইএমএফের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের এই দল ঢাকায় এসে ৬ এপ্রিল থেকে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে টানা দুই সপ্তাহ বৈঠক করবে। আলোচনায় অংশ নেবে অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, ইআরডি, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বিইআরসি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, বিবিএস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। আলোচনা শেষে ১৭ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে তারা পর্যালোচনার ফলাফল এবং সুপারিশ তুলে ধরবে।

আইএমএফের এই সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, আর্থিক শৃঙ্খলা এবং বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের সক্ষমতা নির্ভর করছে এই প্রতিনিধিদলের মূল্যায়নের ওপর। সরকারের নেওয়া অর্থনৈতিক সংস্কারগুলো আইএমএফের নীতিমালার সঙ্গে কতটা সঙ্গতিপূর্ণ, সেটিই এই সফরের মূল বিচার-বিশ্লেষণের অংশ।

২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ আইএমএফের সঙ্গে যে ঋণচুক্তি করে, তার আওতায় প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতেই ছাড় হয়। এরপর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার ছাড় করা হয়। তিন কিস্তিতে মোট ২৩১ কোটি ডলার পায় বাংলাদেশ।

এখন বাকি ২৩৯ কোটি ডলার, যার চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের বিষয়টি নির্ভর করছে কিছু কঠোর শর্ত পূরণের ওপর। সরকার আশাবাদী যে আগামী জুনেই এই দুই কিস্তির অর্থ পাওয়া যাবে। তবে এজন্য রাজস্ব আহরণ, ব্যয়ের কাঠামো সংস্কার, জ্বালানি খাতে সাবসিডি হ্রাসসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণ করতে হবে। এসব শর্ত বাস্তবায়ন সরকারে জন্য যেমন চ্যালেঞ্জিং, তেমনি জরুরি।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, বাজেট সহায়তার জন্য এই ঋণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত দুটি কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের বিষয়ে বাংলাদেশ ও আইএমএফ সম্মত হয়েছে।

প্রতিনিধিদল এবার মূলত সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কারের বাস্তবায়ন অগ্রগতি মূল্যায়ন করবে, বিশেষ করে ব্যয়ের রূপরেখা ও রাজস্ব আহরণের সক্ষমতা নিয়ে। যদি সরকার আইএমএফের শর্তসমূহ যথাসময়ে ও সুষ্ঠুভাবে পূরণ করতে পারে, তাহলে কিস্তি ছাড় প্রক্রিয়া সহজ হবে এবং বাজেট বাস্তবায়নও তরান্বিত হবে। সফল বাস্তবায়ন বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের সক্ষমতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াবে। তবে ব্যর্থ হলে অর্থ ছাড়ে বিলম্ব হতে পারে, যা বাজেট বাস্তবায়নে বড় ধাক্কা হতে পারে।