বন্ধ থাকায় হতাশ কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক-মালিকরা

দীর্ঘ ১৭ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
দীর্ঘ ১৭ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান   © প্রতীকী ছবি

দীর্ঘ দেড় বছর পর আগামী রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলেও আপাতত বন্ধই থাকছে প্রাক্‌–প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সশরীর ক্লাস। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষার্থী সংখ্যা এমনিতেই কমে গেছে।

অন্যদিকে নিয়মিত বেতন না পেয়ে পেশা বদলিয়েছেন অনেক শিক্ষক। এমন অবস্থায় বছরের অর্ধেক সময় পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সরকারি সিদ্ধান্ত কিন্ডারগার্টেন সেক্টরের কোনো কাজেই আসছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবস্থা এমন তৈরি হয়েছে যে নতুন বছরকে মাথায় রেখেই তাদের আবার শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সংগ্রহে কাজ করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন জানায়, সারা দেশে ৬০ হাজারের বেশি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী ছিলেন ১২ লাখ। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৮০ লাখ।

সংগঠনটি জানায়, করোনার কারণে ইতোমধ্যে দেশের প্রায় ১৫ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। পেশাবদল করেছেন হাজারো শিক্ষক। অর্থনৈতিক অভাবে আত্মহত্যার পথও বেছে নিয়েছেন একাধিক শিক্ষক-কর্মচারী।

রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি কিন্ডারগার্টেনে ২০২০ সালে ৬২৮ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল, যা বর্তমানে নেমে দাঁড়িয়েছে ২১২ জনে।

স্কুলটির মালিক জাহাঙ্গীর কবির রানা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে গেল বছর অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করলে তখন ৪০-৫০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকতো। কিন্তু এখন কেউই আর ক্লাসে অংশ নেয় না।

তিনি বলেন, সরকার স্কুল-কলেজ খোলার ঘোষণার পর ২১২ জন শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কেউ জানিয়েছেন, ছেলেকে মাদ্রাসায় ভর্তি করেছেন, কেউ বলেছেন, সপরিবারে গ্রামে চলে গেছেন। এমনকি শিক্ষকও পাওয়া যাচ্ছে না। আমার বিদ্যালয়ের নিচেই ইংরেজির শিক্ষক চায়ের দোকান দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজধানী ঢাকার কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর ৯৫ শতাংশ ভাড়া বাসায় পরিচালিত হয়। এখানে যারা শিক্ষকতা করতেন তার অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অথবা চাকরিপ্রার্থী, যাদের অধিকাংশ করোনার কারণে অন্যত্র চলে গেছেন। অন্যদিকে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ের উৎস, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত টিউশন ফি, বন্ধ রয়েছে। ফলে ভাড়া মিটিয়ে আবার শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করাই হবে কিন্ডারগার্টেন মালিকদের প্রধান চ্যালেঞ্জ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক স্কুল মালিক বলেন, আমার স্কুলের ভবনের ভাড়া ছিল মাসে ৭২ হাজার টাকা। করোনাকালে আমার বউয়ের গয়নাও বিক্রি করেছি। এখন এমন অবস্থা নতুন করে কী করব আর ভেবেই পাচ্ছি না।

এছাড়া স্কুল শিক্ষক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন নিয়েও বিপাকে রয়েছেন মালিকরা। অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেনের মালিক বলেন, সরকারি প্রণোদনা না পেলে তারা আর কখনোই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ভাঙা বছরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় তা আমাদের কোনো কাজেই আসছে না। আমরা নতুন বছরকে মাথায় রেখেই আবার শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সংগ্রহে কাজ করছি।

সরকারের কাছে প্রণোদনা চাওয়া হয়েছে জানিয়ে কিন্ডারগার্টেন ও সমমান স্কুল রক্ষা জাতীয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আবদুল ওয়াদুদ বলেন, আমরা সরকারের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা চেয়েছি। এ সমস্যা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে আমাদের প্রস্তাব তোলার পরে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তবে আমরা এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি আশ্বাস পাইনি।


সর্বশেষ সংবাদ