৮ম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় একমুখী শিক্ষার প্রচলন করতে হবে: অধ্যাপক ফরাসউদ্দিন
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, সমাজকে আরও শোভন করার জন্য শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে হবে। কুদরত-ই-খুদার শিক্ষা কমিশনের আলোকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় একমুখী শিক্ষার প্রচলন করতে হবে। বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের বড় অংশকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
গণমানুষের অর্থনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের সদ্য প্রকাশিত “বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র: ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে” গবেষণা গ্রন্থটির বিষয়বস্তুর উপর ১৩ সিরিজ জুম ওয়েবিনারের “বৈষম্য হ্রাস ও শোভন সমাজ প্রতিষ্ঠাঃ রাষ্ট্র-সরকার টাকা পয়সা পাবে কোথায়? কালো টাকা, অর্থ পাচার, সম্পদ কর ইত্যাদি” শীর্ষক ৯ম ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন তিনি। আজ শনিবার (২২ মে) সন্ধ্যায় জুমের মাধ্যমে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
এই ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে আরও অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকনেজ স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. একে এম মতিউর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সহ-সভাপতি এ জেড এম সালেহ।
প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন সম্পর্কে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধাভোগী সম্পর্কে সরকারের কতটুকু নজর আছে এই বিষয়ে আমি নিশ্চিত নয় । ২৫ লাখ ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা দিতে ব্যাংকের ম্যানেজাররা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তারা চেনা জানা লোকজনদেরই ঋণ দিতে ইচ্ছুক। এই সমস্যা সমাধানে বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশন, পিকেএসএফ দের প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমতায়িত করতে হবে, প্রয়োজনে এসব উদ্যোক্তাদের ১% সুদে ঋণ দিতে হবে এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ডের আশ্রয় নিতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ৪৩ হাজার ব্যাংক একাউন্ট হোল্ডারের হাতে এখন সমগ্র ব্যাংক আমানতের অর্ধেক পুঞ্জিভূত।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, বিশ্বব্যবস্থায় একটা অদ্ভুদ ব্যাপার হলো বিশ্বের নিরাপত্তা বিধানের প্রধান দায়িত্ব যে বৃহৎ শক্তিগুলোর- তারাই মানুষের ধ্বংসযজ্ঞ ঘটানোর কাজটি করছে। বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধ এবং যুদ্ধাস্ত্রের জন্য যে পরিমান ব্যয় করা হয় তার ১% টাকাও মানুষের জন্য ব্যয় করা হয় না।
অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিউর রহমান বলেন, পরিবেশকে উপেক্ষা করে উন্নয়নের দিকে ধাবিত হলে সে উন্নয়ন টেকসই উন্নয়ন হবেনা। শোভন সমাজের জন্য শোভন মানুষ লাগবে। মাথাপিছু আয় কখনো সমান হবেনা কিন্তু আয় বৈষম্য কিভাবে কমানো যায় এবং আয় বৈষম্য যেন লাগামহীন না হয় সেই লক্ষ্যে সরকারকে নীতি প্রণয়ন করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আবুল বারকাতের ২০ বছরের গবেষণার ফসল “বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র: ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে” বইটি যৌথভাবে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ও মুক্তবুদ্ধি প্রকাশনা। ৭৩৬ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থটি সম্পর্কে অভিনন্দনবাণী দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ভাষ্যকার ও ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক নোয়াম চমস্কি। কৃতজ্ঞতাপত্র, মুখবন্ধ ও মোট ১২টি অধ্যায় ছাড়াও বইটিতে আছে ২৭টি সারণি, ৩৯টি লেখচিত্র, তথ্যপঞ্জি ও নির্ঘণ্ট।
এই গ্রন্থটি নিয়ে ৯টি ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থনীতি সমিতি জানায় এই গ্রন্থটি নিয়ে আরো ৪টি ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হবে। যার বিষয়বস্তুসমূহ হচ্ছে ১) সামষ্টিক ও ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে কোভিড -১৯ এর অভিঘাত; ২) জনগণের স্বাস্থ্য; ৩) শোভন সমাজের লক্ষ্যে জাতীয় বাজেট; ৪) শোভন সমাজ ও মূল ধারার অর্থনীতি।
অর্থনীতি সমিতির ১৩-সিরিজের ওয়েবিনারের “সামষ্টিক ও ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ এর অভিঘাত” শীর্ষক পরবর্তী ওয়েবিনার জুমের মাধ্যমে আগামী ২৯ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে।