করোনাকালে শিক্ষায় অপূরণীয় ক্ষতি, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পিছিয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা
করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পিছিয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা  © সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী চলছে করোনাভাইরাসের মহামারী। এ কারণে গত বছরের মার্চ মাস থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রায় টানা ১৩ মাস পার হতে চলেছে। দীর্ঘ এই ছুটির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়মিত পড়াশোনা স্থগিত থাকায় শিক্ষার্থীরা বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নিরুপায় হয়ে ঘরে বসে অলস সময় পার করছেন শিক্ষার্থীরা। এতে করে শিক্ষা-পাঠ্যসূচীর পাশাপাশি মানসিক এবং শারীরিক বিকাশে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সার্বিক শিক্ষায় যে ক্ষতি হয়েছে তা কখনোই পুরিপুরি পূরণ সম্ভব হবে না। তবে পরিকল্পিত পদক্ষেপের মাধ্যমে ঘাটতি সর্বোচ্চ পরিমাণে পূরণ সম্ভব হতে পারে। অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতি থেকে কবে উত্তরণ সম্ভব হবে-সেটাও অনিশ্চিত। এ কারণে বাস্তবতার নিরিখে শিক্ষণ ও শিখন পরিকল্পনা তৈরির পাশাপাশি তা এখনই বাস্তবায়নে যেতে হবে।

এক্ষেত্রে পাঠ্যসূচির পরিবর্তে দক্ষতা অর্জনভিত্তিক ভাবনা অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে এলাকাভেদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার মতো চিন্তা করা যেতে পারে।

করোনার কারণে শিক্ষা খাতে ক্রমাগত যে ক্ষতি হচ্ছে, তা চোখে পড়ছে না বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি বলেছেন, অন্য খাতের ক্ষতি চোখে পড়ছে। শিক্ষার ক্ষতির বিষয়টি দৃশ্যমান নয়। আমাদের উদ্বেগের জায়গা এটি। এ খাতের ক্ষতি পোষানো ভীষণ কঠিন। করোনায় শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গতানুগতিক বাজেট হলে চলবে না।

শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) জাতীয় মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযানের (ক্যাম্পে) সমীক্ষা অনুযায়ী, ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ও দূরশিক্ষণ বা বেতার, টেলিভিশন, অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফরম এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেওয়া পাঠদানের আওতায় এসেছে। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি ৯২ শতাংশ আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনের পাঠদানের আওতায় এসেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ ড. এম তারিক আহসান বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও শিক্ষায় ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করছে। তবে সংকট মোকাবিলায় যেটা পরে করা দরকার ছিল সেটা আগে করা হয়েছে, আর আগে যা করা দরকার সেই পদক্ষেপ এখনো নেওয়া হয়নি। যে কারণে চেষ্টা করা হলেও আমরা কাঙ্ক্ষিত ফল পাইনি। তবে সময় এখনো আছে। বাস্তবতার নিরিখে চ্যালেঞ্জগুলো পর্যালোচনা করে সুনির্দিষ্টভাবে ‘শিক্ষা-উত্তরণ পরিকল্পনা’ করতে হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, এটা ঠিক যে করোনায় শিক্ষার ক্ষতি অপরিমেয়। এই সমস্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বেরই। প্রত্যেক জাতিই নিজস্ব সুবিধা আর পদ্ধতি অনুযায়ী উত্তরণের কার্যক্রম চালাচ্ছে। আমরাও করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। তবে এটা ঠিক যে, এতদিন সমস্যা প্রলম্বিত হবে-তা ভাবনার বাইরে ছিল। আমরা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ দিয়ে চলে আসছি। এখন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরির কাজ চলছে। তাতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

প্রসঙ্গত, প্রাক-প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত সর্বমোট চার কোটি শিক্ষার্থী আছে। সংক্রমণ পরিস্থিতি অনুকূলে এলে আগামী ২৩ মে খুলতে পারে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা। আর উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৪ মে খুলে দেওয়ার ঘোষণা আছে।