খোলার পর স্কুল-কলেজে উপস্থিতি কমার আশঙ্কা
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। করোনার কারণে গত বছর পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষা এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। নেয়া যায়নি উচ্চ মাধ্যমিকেও চূড়ান্ত পরীক্ষা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের অষ্টমের সমাপনী এবং এসএসসি ও সমমানের ফলের ভিত্তিতে ঘোষণা করা হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের ফল। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ক্লাস চললেও পরীক্ষা বন্ধ থাকায় দীর্ঘমেয়াদি সেশনজটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এমতাবস্থায় আগামী ৩০ মার্চ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল-কলেজ খোলার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ ঘোষণা দেন।
জানা গেছে, করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছুটির মধ্যে সংসদ টেলিভিশন, বেতার, কমিউনিটি রেডিওর পাশাপাশি ভার্চুয়ালি শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে আগামী দুই থেকে তিন বছর সময় প্রয়োজন হতে পারে। অনেক শিক্ষার্থী ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হওয়ায় স্কুল-কলেজে উপস্থিতি কমে যাবে। মহামারির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি কমিয়ে আনতে হবে। শিক্ষার্থীদের শ্রেণি ক্লাসের সময় বাড়াতে হবে। পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে আলাদাভাবে তাদের শেখাতে হবে। এজন্য শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সম্মানী বাড়াতে হবে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মনিটরিং বাড়াতে হবে।
শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, করোনার মধ্যেও সচ্ছল পরিবারের অনেকে অনলাইনে কোচিং সেন্টার বা নামিদামি শিক্ষকদের কাছে ভার্চুয়ালি পড়ছেন। আবার অনেকের সে সুযোগ না হওয়ায় তারা পিছিয়ে পড়ছেন। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে শিক্ষকদের সহায়তা নিয়ে তারা এগিয়ে যেতে চান।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখায় নানাভাবে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, বর্তমানে স্কুল-কলেজ খোলার ঘোষণা দেয়া হলেও ছোট ছেলে-মেয়েদের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে। মফস্বলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খুব বেশি ঝুঁকি না থাকলেও ঢাকা মহানগরে সেই ঝুঁকি বেশি। সেজন্য প্রতিটি স্কুল-কলেজে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে স্কুল-কলেজ বন্ধ রেখে ভার্চুয়াল মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও তা থেকে অনেকে পিছিয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সচ্ছল পরিবারের ছেলে-মেয়েরা ইন্টারনেটের ওপর আসক্ত হয়ে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি আমাদের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঝরে পড়া, বাল্যবিয়ে, শিশুশ্রম, অপুষ্টি ও পরিবারের মধ্যে অশান্তি বেড়ে গেছে। এসব কারণে ৭৬ শতাংশ অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী স্কুল-কলেজ খোলার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর দাবি সবার।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে শুধু সরকারিভাবে ঘোষণা নয়, যাদের সক্ষমতা নেই তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা প্রয়োজন। সব স্থানে এটি নিশ্চিত করতে শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধিদের দক্ষতা প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য কড়া মনিটরিং প্রয়োজন। অভিভাবকদের আস্থা তৈরিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাতে হবে। শিক্ষকদের দক্ষতা তৈরি করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রণোদনা বাড়াতে হবে।
ছাত্র-ছাত্রীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পরের বছরের পাঠের সঙ্গে পূরণের জন্য শিক্ষক নির্দেশিকা তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (কারিকুলাম) মশিউজ্জামান।
তিনি বলেন, নিচের ক্লাসের যে বিষয়টি না পড়ে কোনো শিক্ষার্থী উপরের ক্লাসে উঠেছে, নতুন ক্লাসে সে ধরনের বিষয় পড়ার সময় আগের ক্লাসের বিষয়টিও পড়ানো হবে। করোনা পরিস্থিতি কমে গেলেও ভার্চুয়াল ক্লাস অব্যাহত রাখা হবে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ের ডিজিটাল ভার্সন রাখা হবে, যেন শিক্ষার্থীরা যে কোনোভাবে সেগুলো আয়ত্ত করে নিতে পারে।