শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত আজ

নোট-গাইডের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও কোচিং নিষিদ্ধ হচ্ছে

  © লোগো

সব ধরনের নোট-গাইড নিষিদ্ধের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সহায়ক বই প্রকাশ করা যাবে। শিক্ষকরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট-কোচিং করাতে পারবেন না, তবে ফ্রিল্যান্সিং কোচিং চালাতে কোনো বাধা নেই। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলাকালে কোচিংয়ে যেতে পারবে না। শিক্ষকরা কোনোভাবেই নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিংও করাতে পারবেন না। 

‘শিক্ষা আইন ২০২০’-এর খসড়ায় এসব বিধান রাখা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই খসড়া চূড়ান্তে বৈঠক ডেকেছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সভায় সভাপতিত্ব করবেন। 

আইনের প্রস্তাবিত খসড়ায় কোচিং অর্থ বলতে বোঝানো হয়েছে, ‘সরকারি অথবা স্বীকৃত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে কোনো ব্যক্তি বা শিক্ষক কর্তৃক এক বা একাধিক শিক্ষার্থীকে কোনো প্রতিষ্ঠানে বা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে অর্থের বিনিময়ে যেকোনো মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম।’

খসড়ায় নোট-গাইড বই অর্থে বোঝানো হয়েছে, সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সহায়ক পুস্তক ব্যতীত যে পুস্তকসমূহে পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু ও এর আলোকে বিভিন্ন পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্নাবলির উত্তর লিপিবদ্ধ থাকে, যাহা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রয় হয়। প্রাইভেট টিউশন অর্থ, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্তৃক অর্থের বিনিময়ে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীকে যেকোনো স্থানে পাঠদান করা।

প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের খসড়ার ১৬ ধারার ১ ও ২ উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো ধরনের নোট বই বা গাইড বই মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাত করা যাবে না। এই বিধান লঙ্ঘন করলে অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

উপধারা ৩-এ বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নোট বই বা গাইড বই ক্রয় বা পাঠে বাধ্য করলে বা উৎসাহ প্রদান করলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান, ব্যবস্থাপনা কমিটি বা পরিচালনা কমিটির সংশ্লিষ্ট সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক এখতিয়ারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।

উপধারা ৪-এ বলা হয়েছে, সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে সহায়ক পুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাত করা যাবে। তবে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সহায়ক পুস্তক ক্রয় বা পাঠে বাধ্য করতে পারবেন না। ক্রয় বা পাঠে বাধ্য করলে বা উৎসাহ প্রদান করলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে।

প্রস্তাবিত আইনের ৩০ ধারার ১ উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট টিউশনের মাধ্যমে পাঠদান করতে পারবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করে সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের লিখিত সম্মতি সাপেক্ষে স্কুল সময়ের আগে বা পরে সরকার কর্তৃক প্রণীত বিধি বা নীতিমালা অথবা জারি করা পরিপত্র বা নির্বাহী আদেশ অনুসরণপূর্বক অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

উপধারা ২-তে বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীকে অর্থের বিনিময়ে ইলেকট্রনিক বা অনলাইন পদ্ধতিতেও টিউশন বা কোচিংয়ের মাধ্যমে পাঠদান করতে পারবেন না এবং করলে তা অসদাচরণ হিসেবে শাস্তিযোগ্য হবে।

উপধারা ৩-তে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট টিউশনের মাধ্যমে পাঠদানের উদ্দেশ্যে কোচিং সেন্টার পরিচালনা করা বা কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করা এই আইনের অধীনে নিষিদ্ধ হবে না। তবে শর্ত থাকে যে কোচিংয়ের শিক্ষক বা শিক্ষার্থী নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলাকালে কোচিং কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না এবং তা করলে ওই শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে এবং ওই কোচিংয়ের নিবন্ধন বা অনুমোদন বাতিলযোগ্য হবে। আরো শর্ত থাকে কোচিং সেন্টারের কোনো শিক্ষক তাঁর নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবেন না এবং তা করলে অসদাচরণ গণ্যে শাস্তিযোগ্য হবে।

উপধারা ৪-এ বলা হয়েছে, ৩০ ধারায় বর্ণিত উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য উদ্দেশ্যে যেকোনো স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে ভর্তির বিধান থাকার ক্ষেত্রে ভর্তীচ্ছু প্রার্থীদের জন্য, চাকরিপ্রত্যাশী প্রার্থীদের জন্য, বিদেশি কারিকুলামের শিক্ষার্থীদের এ-লেভেল, ও-লেভেল, আইএলটিএস, জিআরই বা অনুরূপ কোনো উদ্দেশ্যে কোচিং সেন্টার পরিচালনা বা কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করা বা পাঠদান করা এই আইন বা এই ধারার অধীনে নিষিদ্ধ বা দণ্ডনীয় বলে গণ্য হবে না। তবে এখানে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান চলার সময়ে বা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং করালে তা অসদাচরণ গণ্যে শাস্তিযোগ্য হবে।

উপধারা ৫-এ বলা হয়েছে, ৩০ ধারার অধীন কোনো কোচিং সেন্টার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষ নির্ধারিত আইন দ্বারা নিবন্ধন ব্যতিরেকে পরিচালনা করা যাবে না। একই কোচিং সেন্টারে দেশি শিক্ষাক্রম ও বিদেশি শিক্ষাক্রমের পাঠদান পরিচালনা করা যাবে না। এই ধারা লঙ্ঘন করলে অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

জানা যায়, ২০১১ সাল থেকেই শিক্ষা আইন নিয়ে কাজ শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর আগে একাধিকবার মতামত নেওয়ার পর খসড়া তৈরি হয় এবং একবার মন্ত্রিসভায়ও উপস্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু নানা অসংগতির কারণে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরীক্ষা ও আইন) খালেদা আক্তার বলেন, শিক্ষা আইনের খসড়া তৈরিতে মন্ত্রণালয়ের সব কাজ শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার এই খসড়া চূড়ান্ত করতে বৈঠক ডাকা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন শেষে তা দ্রুতই মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।


সর্বশেষ সংবাদ