অনলাইন ক্লাসের সুবিধা নেই বিশ্বের ৫০ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থীর

  © প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্বের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। প্রায় দেশে বিকল্প হিসাবে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দূরশিক্ষণে (টেলিভিশন, রেডিও এবং অনলাইন) পাঠদান চলছে। কিন্তু সামর্থ্যের অভাবে এই কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন না বিশ্বের ৫০ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী।

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস-২০২১ উপলক্ষ্যে এক ধারণা পত্রে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা-ইউনেস্কো এই পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে।

সংস্থাটি বলছে, কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে বিশ্বজুড়ে শিক্ষাব্যবস্থায় অতুলনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় বিঘ্নিত হয়েছে। এর ফলে বিশ্বের ১৯০টিরও বেশি দেশে ১৬০ কোটি শিক্ষার্থীর জীবনকে প্রভাবিত করেছে।

শিক্ষার্থীরা গৃহবন্দী হওয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার কর্তৃক দূরশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প উপায়ে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখলেও শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ এই কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেননি। অথ্যাৎ,  ৫০ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী এই কার্যক্রমের বাহিরে রয়েছে।

যেখানে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত দেশগুলোতে প্রায় ৪ মাস এবং উচ্চবিত্তের দেশগুলোতে ৬ সপ্তাহের মতো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত। তাছাড়া দুর্ভাগ্যক্রমে এই সমস্যাটি এখনও অনেকটা বিদ্যমান রয়েছে বলে অভিমত দিয়েছে সংস্থাটি।

ইউনেস্কো বলছে, সংকটের মধ্যেও একইসঙ্গে মহামারীটি শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রাণবন্ত, অন্তর্ভুক্তিকরণ, নমনীয় এবং টেকসই করার জন্য জেগে ওঠার আহবান জানিয়েছে। এটি শিক্ষাব্যবস্থায় নতুনত্ব আনার ক্ষমতা দেখিয়েছে, শেখার সম্ভাবনার সীমানা সম্প্রসারণে ভূমিকা রেখেছে।

মহামারী এবং মহামারী পরবর্তী শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হবে- এ নিয়ে ২০২০ সালের অক্টোবরে ইউনেস্কো, ঘানা, নরওয়ে এবং যুক্তরাজ্যের উদ্যোগে আয়োজিত এক সভায় ৭০টিরও বেশি দেশের সরকার ও মন্ত্রীরা দৃঢ়তা সাথে একটি ঘোষণাপত্রকে সমর্থন করেছেন। সুরক্ষিত শিক্ষার জন্য ২০২১ সালের শেষের মধ্যে শিক্ষায় অর্থায়ন রক্ষার প্রতিশ্রুতিও এতে গৃহীত হয়। এসবের মধ্যে রয়েছে-

১) নিরাপদে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় চালু করতে পদক্ষেপ নেওয়া;

২) শিক্ষকসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং পেশাগত উৎকর্ষ সাধন;

৩) অন্তর্ভুক্তিমূলক পুনরুদ্ধারের জন্য দক্ষতা বিকাশে বিনিয়োগ;

৪) ডিজিটাল বিভাজনকে সংকীর্ণ করা, যা করোনাকালে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীদের বাঁধা দিয়েছে;

৫) যদি শিক্ষায় বাজেট বাড়ানো না হয় তাহলে প্রণোদনার প্যাকেজের মাধ্যমে শিক্ষার ক্ষতি হ্রাস করার ব্যবস্থা করা;

দূরশিক্ষণে বাংলাদেশের অবস্থা কেমন?

সম্প্রতি গণস্বাক্ষরতা অভিযান ও এডুকেশন ওয়াচ পরিচালিত এক গবেষণা বলছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে টেলিভিশন, রেডিও এবং অনলাইনের মাধ্যমে চলা দূরশিক্ষণ কার্যক্রমে ৬৯.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেনি। মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে  গবেষণাপত্রে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে৷

এডুকেশন ওয়াচ-এর সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান গবেষণাপত্রটি উপস্থাপনকালে বলেন, দূরশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ না নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫৭ দশমিক নয় শতাংশ শিক্ষার্থী প্রয়োজনীয় ডিভাইসের অভাবে শিক্ষাবঞ্চিত হয়েছে। অনলাইন ক্লাস আকর্ষণীয় না হওয়ায় ১৬ দশমিক পাঁচ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে অংশগ্রহণ করেনি।

অন্তরবর্তীকালীন গবেষণায় দুই হাজার ৯৯২ জনের কাছ থেকে মোবাইল ফোনে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এদের মধ্যে এক হাজার ৭০৯ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী, ৫৭৮ জন শিক্ষক, ৫৭৬ অভিভাবক এবং বিভিন্ন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মতামত নেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে এডুকেশন ওয়াচ-এর সদস্য ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ কাজী ফারুক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই দূরশিক্ষণে নিরুৎসাহিত। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গবেষণায় সেটি উঠে এসেছে। কারণ তারা ফেস টু ফেস এডুকেশনে অভ্যস্ত। কাজেই দূরশিক্ষণ বললেতো সেটি আর বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। দূরশিক্ষণ এবং ফেস টু ফেস এডুকেশনে যে ব্যবধান আছে তা দূর করতে হবে। তাছাড়া এটি সমন্বয় করা না গেলে সমস্যাটি রয়ে যাবে।

তিনি বলেন, দূরশিক্ষণে শিক্ষার্থীর মনযোগ এবং শিক্ষকদের নৈপূর্ণ্য একসঙ্গে খাপ খাচ্ছে না। এজন্য আমাদের জরিপ ও পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সেটি শুরু সরকারি জরিপ করলে হবে না। অবার এনজিও জরিপও হবে না। এটি অভিভাবক-শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমন্বিত অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে প্রয়োজনে একাধিক জরিপ করা যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে শিক্ষক প্রশিক্ষণে অপ্রতুলতা রয়েছে। করেনাকালে তারা কিভাবে ক্লাস করাবে, কিভাবে ক্লাস নেওয়া হলে শিক্ষার্থীরা উৎসাহিত হবে তার কোন দিকনির্দেনা নেই। এসব বিষয়ও আমাদের মাথায় রাখতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ