ছাপা হয়নি উচ্চ মাধ্যমিকের বইও, চরম অনিশ্চয়তায় ১৭ লাখ শিক্ষার্থী
করোনাভাইরাসের কারণে চলতি বছরের একাদশ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। আর কবে তা শুরু হবে, তাও জানা নেই কারোর। তবে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হলেই প্রয়োজন হবে নতুন পাঠ্যবইয়ের। কিন্তু এখনও পাঠ্যবইও ছাপানো শুরু হয়নি। শুধু দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু করতে পেরেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
গত ৩১ মে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এতে প্রায় ১৭ লাখ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। তারা এখন উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগের বছরগুলোয় জুনের মধ্যেই একাদশের পাঠ্যবই ছেপে দেওয়া হয়েছে। ১ জুলাই শুরু হয় ক্লাস। কিন্তু এবার সব শিডিউল লণ্ডভন্ড করে দিয়েছে করোনাভাইরাস।
জানা গেছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পাঠ্যবই বিনামূল্যে দিলেও উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র-ছাত্রীরা পাঠ্যবই কিনে ক্লাস করেন। সে মোতাবেক মাধ্যমিক স্তরে ১৬ লাখ ৯০ হাজার শিক্ষার্থী পাস করায় চলতি বছর প্রায় ২২ লাখ পাঠ্যবই ছাপানো হবে। কিন্তু এখনও বই চূড়ান্ত না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা অলস সময় পার করছে। অথচ ভর্তি পিছিয়ে গেলেও বই থাকলে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে পড়তে পারত বলে মনে করছেন অভিভাবকরা।
পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতারা জানিয়েছে, অতীতে এই শ্রেণির বইগুলো বাজারে নকল হয়। এনসিটিবির বাংলা ও ইংরেজি বই আসতে দেরি হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের ছাপানো নকল বইয়ে বাজার সয়লাব হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের বাড়তি দামে নকল বই কিনতে হতে পারে। এর দায় এনসিটিবি এড়াতে পারবে না।
পাঠ্যবই ছাপা নিয়ে এমন জটিলতার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘বই ছাপানোর জন্য দরপত্র তৈরি করছি। এবার জুলাইয়ে ক্লাস শুরু না হওয়ায় আমরা ধীরেসুস্থে কাজ শুরু করেছি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলা, ইংরেজি ছাড়াও এ বছর আইসিটি বিষয়ের বইও এনসিটিবি দেবে। বইটি লেখার কাজ চলছে। সবমিলিয়েছে উচ্চ মাধ্যমিকের চারটি বই এনসিটিবি প্রকাশ করবে।’
জানা গেছে, একাদশ শ্রেণিতে বিষয় বেশি হওয়ায় বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু পাণ্ডুলিপি এনসিটিবি অনুমোদন করে থাকে। আর বাংলা, বাংলা সহপাঠ ও ইংরেজি পাঠ্যবই এনসিটিবি রয়্যালিটির বিনিময়ে প্রকাশকদেরকে বিক্রি করার অনুমতি দেয়।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, ‘আমরা চাই কোনো অসম প্রতিযোগিতা যেন না হয়। কারণ বই বাজারজাতকরণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই শিক্ষার্থীর হাতে সময়মতো বইটি যাক। এনসিটিবি সবাইকে ডেকে সুষ্ঠু দরপত্রের মাধ্যমে বাজারজাতকরণের কাজ দিক।’
এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বই বাজারজাতকরণে সরকার যেন লাভবান হয়, সেই কাজটিই করব। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ক্রয়সংক্রান্ত সংস্থার (সিপিটিইউ) পরামর্শ নিচ্ছি।’