১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৬:২৮

এইচএসসির ফল পেয়ে উচ্ছ্বাস, আছে অপ্রাপ্তিও

এইচএসসির ফল পেয়ে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকের উচ্ছ্বাস  © আমান উল্যাহ আলভী

২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। ফলাফল পেয়ে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। সাতটি পরীক্ষা হলেও বাকি বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে এবার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে বেশিরভাগ বিষয়ের ফল দেয়ায় যে শিক্ষার্থীরা এসএসসিতে ভালো ফল করতে পেরেছিলেন তারা এইচএসসিতেও ভালো করেছেন। তবে এসএসসিতে অপেক্ষাকৃত ভালো করতে না পারলেও এইচএসসিতে কঠোর পরিশ্রম করা শিক্ষার্থীদের অপ্রাপ্তির অনুভূতি রয়েই গেছে। 

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকালে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন শিক্ষার্থী। 

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ চত্বরে বেলা ১১টার দিকে সাঁটিয়ে দেয়া হয় এইচএসসি পরীক্ষার ফল। শুরুতে কয়েকজন শিক্ষার্থী থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এসেছেন অভিভাবকরাও। দুপুর ১২টার পরে কলেজের অধ্যক্ষকে সঙ্গে নিয়ে গ্রুপ ছবি তুলতে আসেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ড্রামের তালে তালে হইচই করে উল্লাস প্রকাশ করেন তারা। সন্তানদের ফলাফলে খুশি পরিবারের সদস্যরাও।

আরও পড়ুন : এইচএসসির ফল পুনঃনিরীক্ষণ আবেদন শুরু কাল

এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী সিন্থিয়া আন্জুম তুশি ও নওরিন জামান দ্যা ডেইল ক্যাম্পাসকে বলেন, ফল পেয়ে ভালো লাগছে। যে পরীক্ষাগুলো হয়েছে সেগুলো ভালো হয়েছে। যেগুলো হয়নি সেগুলো নিয়েও দুশ্চিন্তা ছিল না। কারণ এসএসসিতেও জিপিএ-৫ ছিল। সব কিছু মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ রেজাল্ট ভালো হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির মানবিক শাখা থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী মাশফি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। এ ফলের পুরো কৃতিত্ব আমাদের কলেজ ও শিক্ষকদের। তারা আমাদের এ ফলের জন্য যোগ্য করে গড়ে তুলেছেন। তাদের জন্যই আমরা এই ফল পেয়েছি।

সাবজেক্ট ম্যাপিং নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে এটা একটি কন্ট্রোভার্সিয়াল টপিক। অনেকে পরীক্ষা দিতে চেয়েছেন। অনেকে চাননি। তবে একটা কথা হল যা হয় ভালোর জন্যই হয়। কেউ অটোপাস বললে তা সঠিক হবে না কারণ আমরা সাতটি পরীক্ষা দিয়েছি, সেগুলোতে ফুলমার্ক অ্যান্সার করেছি। 

আরও পড়ুন : বৈষম্যহীন ফলের দাবিতে শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের

তবে এইচএসসি উত্তীর্ণ দুইজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, এসএসসিতে তাদের একটি ও দুইটি বিষয়ে তাদের এ প্লাস ছিল না। চেষ্টা ছিল এইচএসসিতে সে অপ্রাপ্তি ঘোঁচানোর। তা হয়নি। 

এবার রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২ হাজার ৫৬৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২ হাজার ৫৫৯ জন শিক্ষার্থী। তার মধ্যে পাস করেছে ২ হাজার ৫৩৫ জন শিক্ষার্থী। পরীক্ষায় ফেল করেছেন ২৪ জন শিক্ষার্থী। পাসের হার ৯৯ দশমিক ০৬ শতাংশ। 

বেলা ১২টার দিকে রাজধানী নটরডেম কলেজে গিয়ে চোখে পরে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস। কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, নটরডেমের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এসএসসিতে জিপিএ-৫ নিয়েই ভর্তি হয়েছিল। তাই তাদের দুশ্চিন্তা ছিল না। কলেজ চত্ত্বরেও শিক্ষার্থীদের ভীড় কম ছিল।

নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন উৎসব রায়। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যেসব পরীক্ষার্থী এসএসসিতে ভালো ফল করতে পারেনি কিন্তু এইচএসসিতে অনেক পরিশ্রম করেছেন তারা তার মূল্যায়ন পাননি। আবার অন্যদিকে দেশের ক্রাইসিস মোমেন্টে বহু শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, তাই পরীক্ষা না হওয়ায় তাদের জন্য ভালো হয়েছে। 

নটরডেম কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া আরেক শিক্ষার্থী ফারহান আঞ্জুম সাফাত। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পরীক্ষা না হওয়ায় তাদের জন্য ভালো হয়েছে। তবে একটি দিক বিবেচনায় পরীক্ষাটা হলে ভালো হতো। কারণ ভর্তি পরীক্ষার জন্য তখন আমরা রসায়ন বা গণিতের মত বিষয়গুলোতে নিজেদের আত্মবিশ্বাসকে যাচাই করে নিতে পারতাম। তবে আমরা নটরডেমের আশেপাশে আন্দোলনে দেখেছি কিভাবে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এও বলতে চাই সচিবালয়ে যেভাবে কর্মকর্তাদের জিম্মি করে পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে আমি তা সমর্থন করি না। 

নটরডেম কলেজ থেকে চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন ৩ হাজার ২৬৯ জন পরীক্ষার্থী। ৩ হাজার ২৫৩ জন পরীক্ষায় বসেন। ছয় জন অনুপস্থিত ছিলেন। দুইজন ফেল করেছেন। ২ হাজার ৬১৮ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। 

এদিকে এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল বেলা ১১টায় ফল স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে এবং অনলাইনে একযোগে প্রকাশিত হয়। এ বছর ভিন্ন এক পরিস্থিতিতে ফল প্রকাশ করা হয়েছে। কয়েকটি পরীক্ষা হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে কয়েক দফায় স্থগিত করা হয়। পরে সংশোধিত সময়সূচি নিয়ে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও সচিবালয়ে ঢুকে পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে বাকি পরীক্ষাগুলো বাতিল করতে বাধ্য হয় শিক্ষা প্রশাসন। পরে এসএসসির ফলের ভিত্তিতে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হয়।