১১ অক্টোবর ২০২৪, ২১:৩৮

প্রিয় স্কুল থেকে বিতাড়িত হয়ে হতাশায় নিমজ্জিত শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক

মিরপুর মডেল একাডেমির প্রধান শিক্ষক শুভাশিস বিশ্বাস  © সংগৃহীত

রাজধানীর মিরপুর মডেল একাডেমির প্রধান শিক্ষক শুভাশিস বিশ্বাস। নিজ কৃতিত্বে দুই-দুইবার নির্বাচিত হয়েছেন দেশ সেরা প্রধান শিক্ষক। কিন্তু গত ৫ আগস্ট সরকারের পটপরিবর্তনের পর এ গুণী শিক্ষকদের পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়। পদত্যাগপত্র স্কুল কর্তৃপক্ষ গ্রহণ না করায় শুভাশীস বিশ্বাস এখনও স্কুলটির বৈধ প্রধান। কিন্তু প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেন না তিনি। হতাশায় নিমজ্জিত এ শিক্ষক নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছেন। 

শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা হয় শুভাশীস কুমার বিশ্বাসের। 

তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রতিষ্ঠান প্রধান হওয়াটাই পাপ ছিল। তাইতো মিথ্যে অভিযোগ মাথায় নিয়ে প্রাণপ্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আজ বিতাড়িত। এসব নিয়ে আর কথা বলতে ভালো লাগে না। 

দুই দুইবার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক শুভাশীস বিশ্বাস। ২০১৪ সাল থেকে তিনি মিরপুর মডেল একাডেমির প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে গণিতের শিক্ষক হিসেবে ছিলেন প্রসিদ্ধ। দীর্ঘ ২৮ বছরের শিক্ষকতার ক্যারিয়ার তার। তার নেতৃত্বে বিদ্যালয়টি পর পর পাঁচবার মিরপুর শিক্ষা থানার মধ্যে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি লাভ করেছে।

আরও পড়ুন : হেনস্তা নয়, অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা : শিক্ষা মন্ত্রণালয়

প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠান প্রধানের পদের লোভে প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন শিক্ষকের প্রত্যক্ষ মদদে কিছু শিক্ষার্থী শুভাশীস বিশ্বাসের পদত্যাগের দাবি তোলে। প্রতিষ্ঠানে দুইজন সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকলেও তাদের টপকে অভিযুক্তদের একজনই মৌখিকভাবে দায়িত্ব নিয়ে বর্তমানে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন বলে দাবি করছেন। 

গত ২২ আগস্ট শুভাশীস বিশ্বাসকে নিজ প্রতিষ্ঠানে অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়। নিজ সম্মান বাঁচাতে দেশ সেরা প্রধান শিক্ষক সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে দিতে বাধ্য হন। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি। নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে বিতাড়িত হয়ে বর্তমানে শিক্ষাছুটিতে আছেন শুভাশীস কুমার বিশ্বাস।

আরও পড়ুন : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে শিক্ষক-সরকারি কর্মকর্তাদের হয়রানি

গত ৫ আগস্ট সরকারের পট পরিবর্তনের পর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ করাতে নানাভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে বলে শোনা যায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর গত ৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, এ ধরনের হেনস্তার ঘটনা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য। শুভাশীস বিশ্বাসকের অবরুদ্ধ করার ঠিক আগের দিন ২১ আগস্ট শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ ধরনের কর্মকাণ্ডে উদ্বোগ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু শিক্ষক হেনস্তা বন্ধ হয়নি। 

শুভাশীস বিশ্বাস বলেন, চাকরি কেউ সারাজীবন করে না। কিন্তু যে মিথ্যা অভিযোগ মাথায় নিয়ে প্রতিষ্ঠান ছাড়তে হয়েছে তা মিথ্যা দাবি করার সুযোগটাও দেয়া হয়নি। বলা হয়েছে আমি সাবেক এমপিদের কাছের মানুষ। ঢাকার কোন প্রতিষ্ঠান প্রধান তাদের তোষামোদ করা ছাড়া প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে পেরেছেন। মিরপুরের ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কারো বিরুদ্ধে এমনটি বলা হয়নি। আমরা বিরুদ্ধে বলা হলো, এর কারণ কী আমার নাম?