০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১:৪৯

কেন নতুন শিক্ষাক্রম ‘বাস্তবায়নযোগ্য নয়’ বলছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়?

শিক্ষা মন্ত্রণালয়  © লোগো

নানা সমালোচনা ও বিকর্তের মুখেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, অন্তবর্তীকালীন সরকারের শাসনামলের মাস পাড় হওয়ার আগেই সেই নতুন শিক্ষাক্রমকেই ‘বাস্তবায়নযোগ্য নয়’ বলে আখ্যা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের মতে, শিক্ষকদের প্রস্তুতির ঘাটতি, পাঠ্য বিষয়, মূল্যায়ন নিয়ে অস্পষ্টতা, প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব ইত্যাদি সমস্যা থাকায় এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয়। 

রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে জারি করা এক পরিপত্রে এ মন্তব্য করা হয়েছে। 

বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে পরীক্ষা ও বিভাগ বিভাজন তুলে দিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য ছিল, শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা নির্ভর শিক্ষায় শিক্ষিত করে উন্নত ও কর্মনির্ভর জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এ শিক্ষাক্রম। তবে অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার এক মাস পেড়ুনোর আগেই আগের অর্থাৎ ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের অনেক বিষয় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। মাধ্যমিকের ফের বিভাগ বিভাজন ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। ঘোষণা এসেছে ডিসেম্বরেই মাধ্যমিকে ফিরছে বার্ষিক পরীক্ষা। 

আরও পড়ুন : ডিসেম্বরেই হাইস্কুলে ফিরছে বার্ষিক পরীক্ষা

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সরকারি মাধ্যমিক শাখার উপসচির মোসাম্মৎ রহিমা আক্তার স্বাক্ষরিত ওই পরিপত্রে বলা হয়েছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২ এর (নতুন শিক্ষাক্রম) বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা তথা অংশীজনদের অভিমত, গবেষণা ও জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির ঘাটতি, পাঠ্য বিষয়বস্তু ও মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে অস্পষ্টতা ও নেতিবাচক ধারণা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার প্রকট অভাব ইত্যাদি নানাবিধ বাস্তব সমস্যা বিদ্যমান থাকায় ওই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয় মর্মে প্রতীয়মান। 

ওই পরিপত্রে কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এতে বলা হয়, প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে প্রাক-প্রাথমিক, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি এবং ১ম, ২য় ও ৩য় শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে ধারাবাহিকতা রেখে ইতোমধ্যে ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির পাঠ্য পুস্তকগুলোর পান্ডুলিপি প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জন করে মুদ্রণ করা হবে। এক্ষেত্রে পাঠদান পদ্ধতি ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হবে। যতদূর সম্ভব মূল্যায়ন পদ্ধতি পূর্বের জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ এর মতো হবে।

আরও পড়ুন : আবারও মাধ্যমিকে ফিরছে সায়েন্স-আর্টস-কমার্স

জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২, নতুন পুস্তক মুদ্রণ ও চলমান মূল্যায়ন পদ্ধতি সংক্রান্ত জরুরি নির্দেশনা শিরোনামে জারি হওয়া ওই পরিপত্রে আরও বলা হয়, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম ও ৯ম শ্রেণিতে চলমান পাঠ্যপুস্তকগুলো ২০২৪ সালব্যাপী বহাল থাকবে। ২০২৫ সালে যথাসম্ভব সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হবে।

পরিপত্রে জানানো হয়, ২০২৪ সালের অবশিষ্ট সময়ে ও বার্ষিক পরীক্ষায় ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম ও ৯ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদেরকে সংশোধিত ও পরিমার্জিত মূল্যায়ন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হবে। উল্লেখ্য, শ্রেণি কার্যক্রমগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির প্রতিটির ৬টি করে বিষয়ভিত্তিক যে মূল্যায়ন কার্যক্রম অসম্পন্ন রয়েছে সেগুলো আর অনুষ্ঠিত হবে না। সংশোধিত ও পরিমার্জনকৃত মূল্যায়ন রূপরেখার ভিত্তিতে ডিসেম্বর নাগাদ ২০২৪ সালের ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সংশোধিত ও পরিমার্জিত মূল্যায়ন পদ্ধতির রূপরেখা শিগগিরই বিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো হবে।

এতে বলা হয়, ২০২৫ সালে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা (২০২৬ সালের অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষা) নেয়ার লক্ষ্যে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা অব্যাহত রেখে পূর্বের জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ এর আলোকে প্রণীত সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তকগুলো (অর্থাৎ ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ব্যবহৃত পুস্তক) শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ অনুসারে প্রণীত শাখা-বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষাভিত্তিক এই পাঠ্যপুস্তকগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা হবে যাতে শিক্ষার্থীরা এক শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই পাঠ্যসূচিটি সম্পন্ন করতে পারে। পাঠদান ও মূল্যায়ন পদ্ধতি জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ অনুসারে পরিচালিত হবে।

আরও পড়ুন : এবার নয়, আগামী বছর সংশোধন হচ্ছে মাধ্যমিকের পাঠ্যবই

যেসব শিক্ষার্থী ২০২৫ সালে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে তাদেরকে জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ এর আলোকে প্রণীত শাখা ও গুচ্ছভিত্তিক সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তকগুলো (২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ব্যবহৃত) প্রদান করা হবে। এসব শিক্ষার্থী নবম ও দশম শ্রেণি মিলে দুই শিক্ষাবর্ষে সম্পূর্ণ পাঠ্যসূচি শেষে ২০২৭ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, শিক্ষাবিদ, শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ, প্যাডাগগ, মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট বিষয় বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রশাসক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও অভিভাবক প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ২০২৫ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত করা হবে, যা ২০২৬ সাল থেকে পরিপূর্ণরূপে কার্যকর করা হবে। অবিলম্বে এ আদেশ কার্যকর হবে বলেও মন্ত্রণালয়ে পরিপত্রে জানানো হয়েছে।