শিক্ষক সংকটে ধুঁকছে শিক্ষা, সহসা নিরসনের আশাও নেই
শিক্ষক সংকটে গত কয়েক বছর ধরে ধুকছে দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এ মুহূর্তে দেশের ৩৩ হাজারের কিছু বেশি বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৯৬ হাজারের বেশি এন্ট্রি লেভেলের সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য। শিক্ষার্থীদের সিংহভাগ অধ্যয়নরত থাকা এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চললেও এ সংকট সহসা কেটে যাওয়ার কোন আশা নেই। কারণ নতুন শিক্ষকরা চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়ে যোগদানের পরও ৭৫ হাজার পদ খালিই থেকে যাবে।
বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ সুপারিশের দায়িত্বে থাকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত সংস্থা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কর্মকর্তারা বলছেন, সর্বশেষ বা পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ সুপারিশের জন্য যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের দিয়েও এ বিপুল সংখ্যক শূন্যপদ পূরণের আশা নেই। কারণ সাধারণত নিবন্ধনে ২৫ থেকে ৩০ হাজার প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। তাই এ সংকট কবে কাটবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো মন্তব্য করতে পারেননি এ কর্মকর্তা—সচিব, এনটিআরসিএ
গত কয়েকবছর ধরেই বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ধুঁকছে শিক্ষক সংকটে। ২০২১ সালের শুরুতে এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫৪ হাজার শিক্ষক পদ শূন্য ছিলো। তৃতীয় চক্রে শিক্ষক নিয়োগের পর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শিক্ষক শূন্য পদের সংখ্যা ছিলো ৬৮ হাজার। গত বছর চতুর্থ ধাপে শিক্ষক নিয়োগের পরও থেকে যায় সংকট। চলতি বছরের শুরুতে শিক্ষক শূন্য পদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৬ হাজার ৭৩৬টিতে।
এনটিআরসিএর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মার্চে এসব পদে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হলেও কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক প্রার্থী পাওয়া যায়নি। আদালতের নির্দেশনায় বেশ কয়েক হাজার নিবন্ধিত প্রার্থীর সনদ মেয়াদোত্তীর্ণ ঘোষণা করা হলে সংকট আরো ঘনীভূত হয়। ফলে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে মাত্র ২২ হাজার ৩৩ জন প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। ভি-রোল ফরম পূরণ শেষে তাদের সনদ সংগ্রহ করে যাচাই করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত এনটিআরসিএর কর্মকর্তাদের মতে, যাচাইয়ে আরো কিছু প্রার্থী বাদ পড়তে পারেন।
যাচাই শেষে চলতি আগস্ট মাসেই প্রার্থীদের নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করার পরিকল্পনা এনটিআরসিএর আছে বলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে আশা প্রকাশ করেছেন সংস্থাটির সচিব মো. ওবায়দুর রহমান। যদিও চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা সবাই যোগদান করলেও প্রায় ৭৫ হাজার শিক্ষক পদ শূন্য থাকবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে।
সংকট কাটাতে নিবন্ধন প্রথা বিলুপ্ত করে পরীক্ষা নিয়ে সরাসরি নিয়োগের কথা ভাবছে শিক্ষা প্রশাসন। এজন্য এনটিআরসিএকে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ ও নির্বাচন কর্তৃপক্ষে পরিবর্তন করতে চাচ্ছে সরকার। এ জন্য আইনের খসড়াও ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়েছে। নিবন্ধন পরীক্ষা না নিয়ে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ ও নির্বাচন কর্তৃপক্ষ সরাসরি নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থী সুপারিশ করবে। তবে খসড়াটি যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে জাতীয় সংসদের পাস হয়ে আসতেও যথেষ্ট সময় লাগবে।
শিক্ষক সংকট নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে এনটিআরসিএর সচিব মো. ওবায়দুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে আরো বলেন, প্রার্থী না পাওয়ায় শিক্ষক পদ পূরণ করা যায়নি। বর্তমানে যে প্রার্থীরা নিয়োগের জন্য যোগ্য আছেন তাদের নিয়োগ দিলেও সংকট কাটার সম্ভাবনা নেই।
এনটিআরসিএ সচিব ওবায়দুর রহমান
এদিকে ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রক্রিয়া চলছে। গত ১২ ও ১৩ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়েছে এ নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষায় বসতে হবে। ভাইভা শেষে চূড়ান্ত ফল প্রকাশের কথা আছে।
তবে এনটিআরসিএর সচিব দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে দাবি করেন, এ নিবন্ধনে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের দিয়েও এ বিপুল সংখ্যক শূন্যপদ পূরণের আশা নেই। কারণ সাধারণত নিবন্ধনে ২৫ থেকে ৩০ হাজার প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। তাই এ সংকট কবে কাটবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো মন্তব্য করতে পারেননি এ কর্মকর্তা।
এদিকে চরম শিক্ষক সংকটে হিমশিম খাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বহু শিক্ষক পদ শূন্য। এ পদগুলো আরো দীর্ঘ সময় শূন্য থাকলে শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো হবে না। আবার নতুন শিক্ষকরা সুপারিশ পাওয়ার পর কেউ কেউ যোগদান না করলে পদ শূন্য হবে।
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক
সংকট কাটাতে নিবন্ধন প্রথা বিলুপ্ত করে পরীক্ষা নিয়ে সরাসরি নিয়োগের কথা ভাবছে শিক্ষা প্রশাসন। এজন্য এনটিআরসিএকে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ ও নির্বাচন কর্তৃপক্ষে পরিবর্তন করতে চাচ্ছে সরকার। এ জন্য আইনের খসড়াও ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়েছে। নিবন্ধন পরীক্ষা না নিয়ে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ ও নির্বাচন কর্তৃপক্ষ সরাসরি নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থী সুপারিশ করবে। তবে খসড়াটি যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে জাতীয় সংসদের পাস হয়ে আসতেও যথেষ্ট সময় লাগবে।
যদিও শিক্ষকদের মতে, চরম এ শিক্ষক সংকটের প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের ওপর। শিক্ষার্থীদের এ ক্ষতির প্রভাব পড়বে দেশের ভবিষ্যতে।