‘নতুন শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীদের মেধা ও নৈতিকতা ধ্বংসকারী’
নতুন শিক্ষাক্রম কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মেধা ও নৈতিকতা ধ্বংসকারী হিসেবে উল্লেখ করে বাতিলের দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা। শিক্ষাক্রম-২০২১ বাতিল, সন্তানদের সার্বিক শিক্ষা জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের নামে মিথ্যা মামলা ও হয়রানির প্রতিবাদে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা। সোমবার (১০ জুন) ভিকারুননিসা নুন স্কুলের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করেন অভিভাবকরা।
মানববন্ধনে খালেদা নামে এক অভিভাবক বলেন, আমার নাম খালেদা হলেও আমি শেখ হাসিনার ভক্ত, পছন্দ করি। তিনি দেশে অনেক ভিশনারি কার্যক্রমের উদ্ভাবক। কিন্তু তিনি হয়ত জানেন না, নতুন যে শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে সেটি কতটা ক্ষতিকর। এই নতুন শিক্ষাক্রম অ্যাসাইনেমন্ট নির্ভর। শিশু শিক্ষার্থীরা বেসিক কিছু শিখছে না। কোনো সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন নেই। যে যার মতো রাত জেগে ডিভাইস ব্যবহারে গুগল সার্চ করে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করছে।
রুপা নামে আরেক অভিভাবক বলেন, আমরা নতুন এই শিক্ষাক্রমে বিরোধী না। কিন্তু আমরা অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। নতুন শিক্ষাক্রম যুগোপযোগী করা সময়ের দাবি। আমরা এখন কৃষি নির্ভর। আমরা ইংল্যান্ডের মতো না। লন্ডন হয়ে যায়নি ঢাকা। অথচ আমাদের বাচ্চারা মধ্যরাত পর্যন্ত অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকছে। সেই ছোটবেলায় গণিতের সূত্রগুলো আমাদের এখনো মুখস্থ। কিন্তু আমাদের বাচ্চারা সেই গণিতের বেসিক সূত্র সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। আমরা ধোঁয়াশার মধ্যে আছি। আসলে বাচ্চারা কী শিখবে সেটার সঠিক যুগোপযোগী গাইডলাইন দরকার। আমরা মাউশি বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিপক্ষে না।
সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত এক শিক্ষার্থীর মা আফসানা পারভীন বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে আমাদের কোনো পূর্ব ধারণা নেই। মাউশি কোনো গাইডলাইন দেয়নি। আমার বাচ্চা ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শ্রেণিতে উঠলো। আমি চেষ্টা করেছি মৌলিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য। যেটার কোনো বালাই নেই নতুন কারিকুলামে। মৌলিক শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থীরা সরে গেছে বিষয়টা এরকম নয় কারিকুলামে তাদেরকে এ ধরনের কোনো শিক্ষাই দেওয়া হচ্ছে না তাহলে বাচ্চাটা কি শিখছে? অবিলম্বে নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে সংশোধন বিয়োজনে যুগোপযোগী করার দাবি জানান তিনি।
আরেক নারী অভিভাবক বলেন, শিক্ষা কারিকুলাম চালুর পর আমার বাচ্চা ডিভাইস নির্ভর হয়ে পড়েছে। নতুন অ্যাসাইনমেন্ট করার নামে সে মোবাইল ব্যবহার করছে গেম খেলছে, লাভ রিলেশনে জড়াচ্ছে। এর দায়ভার কে নেবে? নতুন করে কি কারিকুলাম চালু করবেন জানি না, আমার দাবি এই নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করতে হবে। আমার সন্তান শুধু আমার ভবিষ্যৎ নয় দেশের ভবিষ্যৎ। সে কোনোভাবেই এই বয়সে মোবাইল নির্ভর হতে পারে না।
নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, যেটা চাচ্ছি না, যেটা যাচ্ছে না, যেটা হচ্ছে না, সেটা কেন আমরা মেনে চলব।
তিনি বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসেবে এখানে আসিনি। আমরা আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এখানে এসেছি। নতুন শিক্ষাক্রম চালু করার মধ্য দিয়ে শিক্ষার যে ব্যয় সেটা অভিভাবকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন শিক্ষাকারিকুলামে বিজ্ঞান অঙ্কের যে গুরুত্ব সেটা কমিয়ে আনা হয়েছে। তবে এখনকার শিক্ষার্থীদেরকে অতীতের শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তাদের অনেকে বোঝা হিসেবে উল্লেখ করতে পারেন। কিন্তু নতুন শিক্ষাকারিকুলামে ৯৫ জন শিক্ষার্থীকেই শিক্ষককে নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। নতুন শিক্ষাকারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের যে মেধা যে চরিত্র সেটা সঠিক মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। যা পড়ানো হচ্ছে শেখানো হচ্ছে তা অভিভাবকদের বোধগম্য নয়। অভিভাবকরা উৎকণ্ঠিত যে তাদের কোমলমতি শিশুরা ডিভাইসমুখী হয়ে পড়ছে। এই অবস্থার উত্তরণে অবশ্যই নতুন শিক্ষাকারী গোলাম চালু করতে হবে এই বিদ্যমান শিক্ষা কারিকুলাম বাতিল করতে হবে।
মানববন্ধনে শিক্ষা নিয়ে পুতুল খেলা চলবে না, আমাদের শিশুরা পুতুল না; রাষ্ট্রে শিক্ষা ব্যবস্থা দেশ-বিদেশি এজেন্সি দাস হতে পারে না; শিক্ষা পুতুল খেলা না, আমাদের বাচ্চারা পুতুল নয়; রাত জেগে অ্যাসাইনমেন্ট নাকি ডিভাইসে আসক্তি? সন্তানদের শিক্ষা নিয়ে অভিভাবকরা কথা বলবে না তো কে বলবে? আমরা সন্তানদের শিক্ষা ধ্বংস চক্রান্ত রাখবো, ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে? প্রজেক্ট অ্যাসাইনমেন্টের নামে শিক্ষা ব্যয় বাড়ছে-সহ বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ব্যানার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা যায় তাদের।