শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকাশের অন্যতম মাধ্যম ‘ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ প্রোগ্রাম অন এডুকেশন’ প্ল্যাটফর্ম

ইউআইইউতে ‘ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ প্রোগ্রাম অন এডুকেশন’ সামিটে অতিথিদের সাথে প্রতিযোগীরা
ইউআইইউতে ‘ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ প্রোগ্রাম অন এডুকেশন’ সামিটে অতিথিদের সাথে প্রতিযোগীরা  © টিডিসি ফটো

শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের বিকাশ ঘটিয়ে তাদের আগামীদিনের জন্য যোগ্য করার লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন শিক্ষালয়ের বিদ্যার্থীদের নিয়ে কাজ করছ ‘ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ প্রোগ্রাম অন এডুকেশন’। এতে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় থেকে উচ্চশিক্ষাস্তরের শিক্ষার্থীরা এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে জিস্ট ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এ আয়োজনের সূচনা হয়। আয়োজন সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা মনে করেন, এ ধরনের আয়োজন শিক্ষার্থীদের আগামীর জন্য নেতৃত্ব গুণসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করবে।

এবার আয়োজনের চতুর্থ পর্বে ‘ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ প্রোগ্রাম অন এডুকেশন ২০২৪’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৩১ মে) বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (ইউআইইউ) দেশের ৬৪ জেলা থেকে বাছাই পর্বে উত্তীর্ণ প্রতিযোগীরা মূল পর্বে অংশগ্রহণ করেন। এদিন চূড়ান্ত পর্বে বিভিন্ন বিভাগের সেরা শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ৪.৫ কোটিরও বেশি তরুণ রয়েছে। তাদের শক্তিকে কাজে লাগাতে পারলে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো। তরুণদের জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে—অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম মিয়া, উপাচার্য, ইউআইইউ।

এবার দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাথমিক বাছাই শেষ শীর্ষ প্রতিযোগীরা জাতীয় পর্বে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান। এবারের পর্বে সারাদেশের প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। আর মধ্য থেকে জাতীয় পর্যায়ে শীর্ষ ১ হাজারের মতো শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিভাগের বিজয়ী শীর্ষ প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয়দের পুরস্কৃত করা হয়েছে। এছাড়াও প্রথম বা শীর্ষ প্রতিযোগীরা সুযোগ পাবেন মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে বৈশ্বিক আসরে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ প্রোগ্রাম অন এডুকেশন’ সামিট শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের গুণাবলিসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করবে। এখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ পাচ্ছে এবং তা কাজে লাগিয়ে তারা সামনের দিনে এগিয়ে যেতে পারবে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে।

আরও পড়ুন: প্রত্যেক শিক্ষার্থীরই ভালো করার সম্ভাবনা রয়েছে: ইউআইইউতে স্টিফেন ইবিলি

শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠানের শুরুতে সারা দেশ থেকে আগর শিক্ষার্থীরা বিভাগ ভিত্তিক প্রতিযোগিতার মূল পর্বে অংশগ্রহণ করেন। এরপর দিনব্যাপী নানা আয়োজনের পর্বগুলো মাতিয়ে রাখে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি উচ্ছ্বাস ছিল তাদের সাথে আসা অভিভাবক ও দেশের বিভিন্ন শিক্ষালয় থেকে আসা শিক্ষকদেরও।

‘ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ প্রোগ্রাম অন এডুকেশন’ সামিটে অংশগ্রহণ করতে সুদূর খুলনা থেকে এসেছেন সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাফিসা তাবাসসুম। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ শেষে এই শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। তিনি বলেন, আমি এখানে প্রতিযোগিতার ফাইনাল রাউন্ডে অংশগ্রহণ করতে এসেছি। আমার অনেক ভালো লাগছে। আমি আশা করছি, এ ধরনের আয়োজন আরও বেশি করা হবে যেন আমরা আরও বেশি অংশগ্রহণ করতে পারি।

আমাদের ‘ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ প্রোগ্রাম অন এডুকেশন’ সামিট দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে চায়। তাদের সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করতে চায় এবং তাদের সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে কাজ করছেআবু সাদাত, উপদেষ্টা, জিস্ট ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন।

একই রকম প্রত্যাশার কথা জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ গার্লস স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারাহ জামান বলেন, এ ধরনের আয়োজন শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের গুণাবলি বিকশিত করতে সহায়তা করবে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি সহশিক্ষামূলক আয়োজনগুলো আরও বেশি হওয়া উচিত। যাতে তারা আগামীদিনের জন্য যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

আর অভিভাবকরা বলছেন, এ ধরনের আয়োজন শিক্ষার্থীদের নতুন নতুন বিষয়গুলো শেখার সুযোগ উন্মুক্ত করে। তারা মনে করেন, শিক্ষার্থীদের জন্য এসব সুযোগ আরও বাড়ানো উচিত। বিশেষ করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বেশি সুযোগ বাড়ানো উচিত। ফলে শিক্ষার্থীরা আগামীর জন্য আরও বেশি দক্ষ এবং নেতৃত্বগুণসম্পন্ন হিসেবে ড়তে উঠতে পারবে। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলছিলেন খুলনা থেকে আসা সুমি খানম এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ইলিয়াস হোসাইন।

আরও পড়ুন: শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের পদচারণায় ইউআইইউতে জমে উঠেছে ইংলিশ অলিম্পিয়াড

বরাবরের মতো এবারও ‘ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ প্রোগ্রাম অন এডুকেশন’ সামিটের পুরো আয়োজন করেছে জিস্ট ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা এবং ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ) জনসংযোগ অফিসের পরিচালক আবু সাদাত দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা ইউআইইউ’র পক্ষ থেকে আয়োজনটি নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের সহায়তা করছি। ইউআইইউ তার সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে এসব আয়োজন সামনের দিনগুলোতে অব্যাহত রাখবে।

আবু সাদাত বলেন, আমাদের ‘ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ প্রোগ্রাম অন এডুকেশন’ সামিট দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে চায়। তাদের সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করতে চায় এবং তাদের সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে কাজ করছে। শুরু থেকেই আমরা শিক্ষার্থীদের অনেক সাড়া পেয়েছি। প্রায় ১০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী এবারের আয়োজনে অংশগ্রহণ করছে। অভিভাবকদেরও শুরু থেকেই ব্যাপক সাড়া ছিল। এটি আমাদের আশাবাদী করছে সামনের দিনগুলোতে এ আয়োজনকে আরও গতিশীল করতে।

ইউআইইউতে ‘ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ প্রোগ্রাম অন এডুকেশন’ সামিটে অতিথিদের সাথে প্রতিযোগীরা। ছবি: টিডিসি ফটো।

আগামীদিনে ‘ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ প্রোগ্রাম অন এডুকেশন’ সামিট আরও বৃহৎ পরিসরে আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে জিস্ট ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিপ্লব কুমার বলেন, আমরা শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। এটি আমাদের উৎসাহিত করছে। আমরা আরও বৃহৎ পরিসরে পরবর্তী আয়োজনগুলো করার পরিকল্পনা করছি। এছাড়াও এখানকার শীর্ষস্থান অর্জন করা শিক্ষার্থীরা মালেশিয়ার রাজধানীতে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম মিয়া বলেন, বাংলাদেশে ৪.৫ কোটিরও বেশি তরুণ রয়েছে। তাদের শক্তিকে কাজে লাগাতে পারলে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো। তরুণদের জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। এছাড়াও স্থায়িত্ব ও এগিয়ে যাওয়ার জন্য সবাইকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে কাজ করা উচিত। তরুণরা আগামীর নেতৃত্বকে বিকশিত করবে।

আরও পড়ুন: ইউআইইউ’র পাবলিক লেকচার সিরিজ: ‘বাংলাদেশ কর্পাস’ অর্থনীতি-রাজনীতি, উন্নয়নসহ নানা বিষয়ে মত দেবেন বিশেষজ্ঞরা

আর অনুষ্ঠানের সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি মিশন চিফ (ভারপ্রাপ্ত) স্টিফেন ইবিলি। তিনি প্রতিযোগীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সব শিক্ষার্থীরই ভালো কিছু করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের সম্ভাবনাক কাজে লাগাতে শিক্ষার্থীদের আরও বেশি সুযোগ দিতে হবে। তার দেশ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ দিয়ে থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের বিকাশে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ দিয়ে থাকে এবং বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও সে সুযোগ নিতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ