কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন নিয়ে পুতুল খেলা চলছে
নতুন কারিকুলামে কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন নিয়ে পুতুল খেলা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন সচেতন অভিভাবক সমাজ বাংলাদেশ। শুক্রবার (৩১ মে) প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এমন অভিযোগ করা হয়।
বক্তব্যে সচেতন অভিভাবক সমাজের সভাপতি মুসলিম বিন হাই বলেন, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের সাধারণ ধারার শিক্ষায় ১ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে একমুখী সমন্বিত শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে। এ বছর তা ২য়, ৩য়, ৮ম এবং ৯ম শ্রেণিতে চালু হয়েছে এবং ২০২৫ সালে এটা ৪র্থ, ৫ম ও ১০ম শ্রেণিতে চালু হবে।
তিনি আরও বলেন, ২০২৬ ও ২০২৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে চালু হবে। এই কারিকুলামের কারণে আমাদের শিক্ষার মানের যে আরও পতন হবে সে-বিষয়ে সচেতন শিক্ষাবিদ, শিক্ষকসহ দেশ-বিদেশের বহু মানুষ কারিকুলাম প্রণয়নের সময় থেকেই বলে আসছিলেন, লিখে আসছিলেন এবং নানা কর্মসূচিও গ্রহণ করছিলেন। কিন্তু সরকার সে কথা শোনার প্রয়োজন মনে করেনি।
কারিকুলাম চালু হওয়ার দেড় বছরের মাথায় সারাদেশের দিকে তাকালে যে কেউ বুঝতে পারবেন যে, তথাকথিত স্মার্ট নাগরিক বানানো, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী বানানোর এই কারিকুলামের মাধ্যমে যেটুকু লেখাপড়া ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে। প্রতিদিন নিত্য-নতুন নির্দেশনা দেওয়া ও বাতিল করা, কীভাবে পরীক্ষা হবে এবং মূল্যায়ন হবে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতা ও হ-য-ব-র-ল নির্দেশনায় ছাত্র-শিক্ষকরা আজ অসহায়, অভিভাবকরা নিরুপায়, বিপন্ন।
তিনি বলেন, এ দেশের শিশুরা ছোটবেলায় পুতুল খেলতে অভ্যস্ত। আজ সরকার যেন কয়েক কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে তেমনই পুতুল খেলছে। দেশের কোটি কোটি শিশুর শিক্ষাজীবন নিয়ে যারা পুতুল খেলছে তাদের কোনো আবেগ বা বিবেক নেই। তারা সম্পূর্ণ সজ্ঞানে এবং স্বেচ্ছায় এই ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করছে। এসব যজ্ঞ শুরুর সময় তারা অনেক আশার কথা শোনায় এবং সেটা ব্যর্থ হলে আবার আরেকটা হাজির করে।
আগেরটা কেন ব্যর্থ হলো, এর জন্য কে দায়ী, কে জবাবদিহি করবে, এই ক্ষতি কীভাবে পূরণ হবে এ বিষয়ে তখন তারা বেমালুম ভুলে যায়। কিন্তু সন্তানের শিক্ষার এই ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ দেখে যখন অভিভাবক, শিক্ষক বা সচেতন মহল কথা বলেন, প্রতিবাদ করেন তখন কিন্তু তারা জেগে ওঠে। তারা তখন রাতের আঁধারে অভিভাবকদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে জামিন না-মঞ্জুর করে হাজতখানায় পাঠিয়ে দেয়। তাদের প্রতিবাদ আয়োজন ভণ্ডুল করে দেয়।
এই পরিস্থিতি থেকে অভিভাবক ও শিক্ষক সমাজ নিষ্কৃতি চায়। আমাদের সন্তানের জন্য ভালো মানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে আগে ভালো শিক্ষক দরকার, তাদের ভালো বেতন দরকার, ভালো প্রশিক্ষণ দরকার, তাদের স্বাধীনতা দরকার, স্কুল-কলেজের উপর থেকে দুর্বৃত্ত ব্যবস্থাপনা কমিটির অপসারণ দরকার, প্রশাসনিক হয়রানি থামানো দরকার। কিন্তু তা না করে প্রতিনিয়ত শিক্ষার উন্নয়নের নামে যা করা হচ্ছে তাতে শিক্ষার আরও পতন ঘটছে। অবিলম্বে সমন্বিত একমুখী শিক্ষা কারিকুলামের নামে এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে পুরোপুরি বেখাপ্পা ও ধ্বংসাত্মক এই কারিকুলাম বাতিল করতে হবে।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, শিশিরের সভাপতি রাখাল সাহা প্রমুখ।