তদন্তে উত্তরা স্ট্যামফোর্ড কলেজে গুরুতর অনিয়ম, বাতিল হতে পারে পাঠদানের অনুমতি
ভাড়া বাড়িতে পাঠদান, বিধি ভঙ্গ করে নির্বাহী কমিটি গঠন ও শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। অনিয়মের বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। অন্যথায় কলেজের নির্বাহী কমিটি ও পাঠদানের অনুমতি বাতিল করার কথা জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ ও বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঁঞা স্বাক্ষরকৃত বিজ্ঞপ্তিতে তদন্তে অনিয়মের বিষয় ও কলেজ কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশের বিষয়ে জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে ০৩/০৪/২০২৪ তারিখে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন উল্লেখ করে বলা হয়, ঢাকা মহানগরীর উত্তরা থানাধীন “স্ট্যামফোর্ড কলেজ উত্তরা” প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জনাব ফাতিনাজ ফিরোজ এর মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা- কর্তৃক ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে (বাড়ি-৫০, রোড-১৭, সেক্টর-১১, উত্তরা, ঢাকা) ঠিকানায় পাঠদানের অনুমতি লাভ করে।
অনুমতিপত্রের (২)নং শর্তে উল্লেখ ছিল আগামী ০৩ (তিন) বছরের মধ্যে কলেজের নিজস্ব জমিতে ভবন নির্মাণ সম্পন্ন করতে হবে এবং বোর্ডের পূর্বানুমতিক্রমে কলেজটি নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জনাব ফাতিনাজ ফিরোজ কর্তৃক কলেজ হস্তান্তর হয় গত ২৯/০৬/২০২২ তারিখে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি হস্তান্তরমূলে বাড়ি-১৩, রোড-১৫, সেক্টর-০৬, উত্তরা, ঢাকা-এ ভাড়া বাড়িতে ১ম, ২য় ও ৩য় ফ্লোর এ পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
আরো উল্লেখ করা হয়, বোর্ড কর্তৃক ১০/০৮/২০১৫ তারিখে ১ম নির্বাহী কমিটি গঠনের অনুমতি লাভ করে এবং ১৭/০৯/২০১৭ তারিখে জনাব ফাতিনাজ ফিরোজকে সভাপতি মনোনয়নপূর্বক নির্বাহী কমিটি অনুমোদন লাভ করে। ২০১৯-২০২০ ও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে বর্ণিত প্রতিষ্ঠানে একজনও শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ার কারণে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক প্রতিষ্ঠানটির প্যানেল বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্যানেল বন্ধ করে দেয়ার পর পরিদর্শন করে তদন্ত কর্মকর্তার ২২/০৮/২০২২ তারিখের তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ০৬/০৯/২০২২ তারিখে প্যানেল খুলে দেয়া হয় এবং পাঠদানের মেয়াদ ০১/০৭/২০১৮ হতে ৩০/০৬/২০২৪ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।
অনিয়মের বিষয়ে বলা হয়, "বোর্ড কর্তৃক প্রাথমিক পাঠদানের অনুমতি পত্রের শর্তসমূহের ৭ ও ৮ নং শর্ত ভঙ্গ করে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হচ্ছে এবং অধ্যক্ষসহ অন্যান্য সকল শিক্ষক-কর্মচারী, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা-১৯৮২ অনুযায়ী বিধিসম্মতভাবে সম্পন্ন করা হয়নি।”
অনিয়মের বিষয়ে আরো বলা হয়, “বোর্ড কর্তৃক গত ১০/০৩/২০২৪ তারিখে অনুমোদিত নির্বাহী কমিটি ‘মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা-২০০৯' এর ৪৮(১) এর ক ও খ বর্ণিত প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও দাতা সদস্য সম্পর্কিত বিধি ভঙ্গ করে নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। যাহা বিধিসম্মত নয়।”
আরো বলা হয়, “প্রতিষ্ঠানটি স্থানান্তর এর বিষয়ে বোর্ডের অনুমতি গ্রহণ করা হয়নি। স্থানান্তর এর জায়গায় ভাড়া বাড়িতে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।”
কারণ দর্শানোর বিষয় উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী, বোর্ডের ১০/০৩/২০২৪ তারিখে অনুমোদিত নির্বাহী কমিটি কেন বাতিল করা হবে না মর্মে আগামী ১৫ (পনেরো) কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর জবাব দাখিল করতে হবে।
প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সময় শর্ত ভঙ্গ করায় কেন পাঠদানের প্রাথমিক অনুমতি প্রত্যাহার করা হবে না তা পত্র প্রাপ্তির ০৭ (সাত) কর্মদিবসের মধ্যে দপ্তরে জমা প্রদান করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
অভিযোগের বিষয়ে কলেজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ এ দেওয়া নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।