কমিটির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্তদেরও বদলি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্তির দাবি
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ইনডেক্সধারী শিক্ষকদেরও বদলি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্তির দাবি জানানো হয়েছে। একই সাথে হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী বদলি নীতিমালা তৈরির দাবিও জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য একটি খসড়া নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। ওই নীতিমালায় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের বদলির কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা।
তারা বলছেন, এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠা হয়েছে ২০০৫ সালে। সংস্থাটি তখন কেবল নিবন্ধন সনদ দিত। ২০১৫ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করছে। তবে ২০১৫ সালের আগে অনেক শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছে। কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ হলেও নিয়োগ বোর্ডে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কাজেই তাদেরও বদলির সুযোগ দিতে হবে।
এ বিষয়ে গৌতম কুমার নামে এক শিক্ষক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘কমিটির অধীনে নিয়োগপ্রাপ্ত ইন্ডেক্সধারী শিক্ষকদের বাদ দিয়ে বদলি নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। যা চরম অমানবিক, বিমাতাসুলভ। বদলির ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষকদের বেতন আটকে রাখাসহ নানারকম হয়রানি করা হয়। ষড়যন্ত্র করে জেলে পাঠানো হয়। পদন্নোতি বঞ্চিত হচ্ছেন বহু শিক্ষক। স্থানীয় শিক্ষক মাসে ৫-৭ দিন ছুটি কাটালেও কোনো সমস্যা হয় না। তবে অন্য জেলার শিক্ষক ছুটির আবেদন করলে নানা অজুহাতে আটকে দেয়া হয়। এজন্য সার্বজনীন বদলি ব্যবস্থা চালু করা দরকার।’
তিনি আরও বলেন, এক সময় এনটিআরসিএর সনদের মেয়াদ তিন বছর ছিল। সেজন্য অনেকেই নিজ জেলা থেকে ৫০০-৮০০ কিলোমিটার দূরে যোগদান করেছিলেন। তারা সবাই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এই অবস্থায় কমিটির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্তদেরও বদলি নীতিমালার আওতায় আনার দাবি জানান এই শিক্ষক।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) রবিউল আলম ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সরকার নমনীয়। মন্ত্রণালয় চাইছে, তাদের বদলি প্রক্রিয়া শুরু হোক। এ কারণে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরিরে কাজ চলছে। তবে এটি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এই নীতিমালায় অনেক পরিবর্তন আসতে পারে। সেজন্য কারা বদলির সুযোগ পাবেন আর কারা পাবেন না তা এই মুহূর্তে মুশকিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির বিধান না থাকায় কমিটির অধীনে নিয়োগপ্রাপ্ত সারাদেশের স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসার ৭১ জন শিক্ষক বদলি প্রথা চালুর দাবিতে ২০১৮ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। শুনানি শেষে হাইকোর্ট শিক্ষকদের পক্ষে রায় দেন। পরবর্তীতে রায়ের কপি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে পাঠানো হয়। ২০২২ সালে এনটিআরসিএ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ তা খারিজ করে রায় বহাল রাখেন।
শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বদলি নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে বদলির জন্য একটি খসড়া নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বদলি সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালায়, এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বদলির কথা বলা হয়েছে। একজন শিক্ষক পুরো চাকরিজীবনে একবারই বদলির সুযোগ পাবেন। এছাড়া বদলির যোগ্য হতে কমপক্ষে দুই বছর চাকরি করতে হবে বলে বলা হয়েছে।