নীতিমালায় আটকা বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির স্বপ্ন
দীর্ঘদিন ধরে বদলি চালুর দাবি করে আসছেন বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। সে লক্ষ্যে ২০২১ সালের জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালায়ও বদলি চালু করার পথ খোলা রাখা হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি চালু করতে গত অক্টোবর মাসে সভা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই সভার প্রায় তিনমাস হতে চললেও এখনও বদলি সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালা তৈরি হয়নি। ফলে আটকা পড়েছে শিক্ষকদের বদলির স্বপ্ন।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর ১২ ধারার ২ উপধারায় বলা হয়েছে, এনটিআরসিএ’র সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক, প্রদর্শক ও প্রভাষকদের কোনো প্রতিষ্ঠানে পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে সমপদে ও সমস্কেলে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের জন্য মন্ত্রণালয় নীতিমালা প্রণয়ন করে জনস্বার্থে আদেশ জারি করতে পারবে। এই নীতিমালা তৈরি করতে দফায় দফায় সভা করেছে শিক্ষা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে আজও আলোর মুখ দেখেনি নীতিমালার খসড়া। এই অবস্থায় চরম হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন শিক্ষকরা।
শিক্ষকেরা জানান, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন অনেক কম। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এই বেতনে জীবন চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তবে যদি নিজ বাড়িতে থেকে চাকরি করা যায়, তাহলেও কোনোভাবে জীবন চালিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু যারা এখন অনেক দূর দুরান্তে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন তাদের পরিবার নির্বাহ করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
আরও পড়ুন: পারস্পরিক বদলি নয়, আলাদা গণবিজ্ঞপ্তি চান শিক্ষকরা
মো. রাশেদ মোশাররফ নামে এক শিক্ষক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বর্তমানে দেশের ৩২ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত। এসব শিক্ষকদের শতভাগ মূল বেতন দেয় সরকার। তবে এর পরিমান কম। বেতনের বাইরে মাত্র এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা দেওয়া হয়। এ ছাড়া তারা উৎসব ভাতা পান মূল বেতনের মাত্র ২৫ শতাংশ। এই অর্থ দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর। দ্রুত বদলির ব্যবস্থা করা হলে শিক্ষকদের সব কষ্টের অবসান হবে।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের আগে গভর্নিং বডি ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে শিক্ষকেরা নিয়োগ পেতেন। ফলে সাধারণত নিজ নিজ এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই চাকরি পেতেন শিক্ষকেরা। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর মাধ্যমে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে নিয়োগ পান। আর এতে প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে যাওয়ায় একজন নিবন্ধনধারী তার এলাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে আবেদন করছেন। এতে বেশির ভাগ শিক্ষকই নিজ এলাকার বাইরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাচ্ছেন।
শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে বদলি চালু হলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষকরা শহরে আসতে চাইবেন। তখন এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট তৈরি হতে পারে। সেজন্য একটা যথাযথ নীতিমালা করা হবে। যেন কেউ বঞ্চিত না হন। কোন প্রক্রিয়ায় শিক্ষকদের বদলি করা হবে সেটিও এখনও স্পষ্ট নয়। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যেই মতবিরোধ রয়েছে।
আরও পড়ুন: শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা তৈরির সভায় যে আলোচনা হলো
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বদলি নীতিমালা চালু করা সম্ভব হবে না। নির্বাচনের পর দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সেটি বিবেচনায় নিয়ে নীতিমালা তৈরির কাজ করা হবে। শিক্ষকদের বদলির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) হাবিবুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘শিক্ষকদের বদলি নিয়ে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। এটি মাউশি থেকে মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে। পরবর্তীতে শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে আরেকটি সভায় খসড়া নিয়ে আলোচনা হবে। মন্ত্রীর অনুমোদন পেলে খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।’
এ বিষয়ে জানতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা সচিব সোলেমান খানের ব্যবহৃত নাম্বারে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তারা ফোনে রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো জবাব মেলেনি।